চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধামের শিব চতুর্দশী মেলার গতকাল শনিবার দ্বিতীয় দিনে ভক্ত-দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থানখ্যাত চন্দ্রনাথ ধাম তীর্থ দর্শনে এ দিন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দর্শনার্থীর ‘বোম ভোলা’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে। লাখো মানুষের সমাগম দেখা যায়।
এ দিকে মেলাকে ঘিরে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে।
মেলায় আগত পাঁচ শতাধিক দোকান ও ব্যাসকুণ্ডের পাড়ে পূজা-শ্রাদ্ধ-তর্পণ করতে আসা আড়াইশ’ পুরোহিতের কাছ থেকে জোরপূর্বক অন্তত অর্ধ কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ করা হচ্ছে। চাঁদা আদায়কারীরা কমিটিকে টাকা দিতে হচ্ছে বলে জানালেও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে মেলা ও তীর্থ কমিটির নেতৃবৃন্দ।
এসব বিষয়ে মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা বলেন, আমরা কোনো টাকা তুলি না। দোকানপাট বা অন্যান্য ইজারার টাকা তোলে স্রাইন (তীর্থ কমিটি)।
তারা আমাদের মেলার খরচের জন্য মাত্র আড়াই লাখ টাকা দেন। আমাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা।
অন্যদিকে তীর্থ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন দাশ বলেন, পুরোহিতদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আমি গতবছরও প্রতিবাদ করেছি। কেন পুরোহিতরা পূজা করতে এসে চাঁদা দেবে? কিন্তু একটি মহল জোর করে চাঁদা আদায় করছে।
আর দোকানপাটের জায়গা আমরা ইজারা দিই না।
চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার এসএম শফিউলাহ বলেন, এখানে চাঁদাবাজির কারণে দূরাগত তীর্থযাত্রীরা হয়রানির শিকার হলে বদনাম আমাদেরও। তাই এসব বন্ধ করব আমরা। তিনি সীতাকুণ্ড থানার ওসিকে এসব চাঁদাবাজি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
সরেজমিনে গতকাল দুপুরে মহাতীর্থ চন্দ্রনাথ ধাম এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, এ দিন তীর্থধাম লাখো ভক্তের পদভারে মুখরিত ছিল।
ভক্তরা বাবা মহাদেবের সন্তুষ্টির জন্য ‘বোম ভোলা’ ‘হর হর মহাদেব’ বিভিন্ন ধ্বনি দিতে দিতে সমতল ভূমি থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার আকা বাঁকা পাহাড় পেরিয়ে চূড়ায় চন্দ্রনাথ মন্দির দর্শনের জন্য যাচ্ছেন।
ফরিদগঞ্জ থেকে আসা ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা শোভা রানী বলেন, জীবনের একটা বড় ইচ্ছা ছিল সীতাকুণ্ডে শিব চতুর্দশী মেলায় আসব। কিন্তু এখানে এসে পথে পথে শুধু হয়রানির শিকার হলাম। গাড়ি থেকে নেমে একটি ডাব কিনেছি ১২০ টাকা দিয়ে। এই ডাবের দাম ৪০-৫০ টাকার বেশি হবার কথা নয়। পূজার জন্য প্লাস্টিকের শাখা কিনলাম জোড়া ৪০০ টাকায়। যা বাজারে খুব বেশি হলে ১৫০ টাকা হতে পারে।
তীর্থযাত্রী মায়া রানী নামে এক নারী জানান এ মেলায় এসে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, এক যুবক হঠাৎ করে তার ব্যাগ টান দিয়ে জঙ্গলের দিকে চলে যায়।
চন্দ্রনাথ ধামের মোহন্ত আস্তানার পাশে বসা টাঙ্গাইলের ব্যবসায়ী দেবদুলাল জানান, মেলার তিন দিনের জন্য ছোট একটি দোকান করতে তাকে ১৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে। মেলা কমিটির নাম দিয়ে কতিপয় যুবক এই টাকা জোরপূর্বক দিতে বাধ্য করেন।