মাতারবাড়িতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর থেকে পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহনের জন্য সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ আগামী জুলাই মাসে শুরু হচ্ছে। ‘মাতারবাড়ী পোর্ট কানেকটিং সড়ক’ নামের এই সড়কটি মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর থেকে চকরিয়া পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। আর নির্মাণে ব্যয় হবে ৮ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। সড়কটি নির্মাণে ব্যয় অস্বাভাবিক মতামত দিলেও শেষপর্যন্ত গত ১৭ জানুয়ারি একনেক সেটি চূড়ান্ত করেছে।
গভীর সমুদ্র বন্দর
মাতারবাড়ি বন্দর সড়ক নির্মাণ শুরু জুলাইয়ে
আসিফ সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম

পুরো সড়কটি চার লেন করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে সড়কের মাতারবাড়ি অংশে ১২শ মিটার হচ্ছে চার লেন প্রস্থের সড়ক আর এরপর থেকে চকরিয়া পর্যন্ত হবে দুই লেনের। পুরো সড়কের অনেকগুলো সেতু থাকছে; রেললাইন নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য থাকছে তিনটি ওভারপাস। চলতি বছরের জুলাই থেকে নির্মাণকাজ শুরু করে শেষ হবে ২০২৬ সালে।
জানতে চাইলে মাতারবাড়ি বন্দর সংযোগ সড়ক প্রকল্প পরিচালক (সওজ) জাকির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০২৬ সালে বন্দর চালুর আগেই আমরা সড়কটি নির্মাণ করতে চাই। এখন জমা পড়া দরপত্রের কারিগরি মূল্যায়ন চলছে; এরপর চলবে আর্থিক মূল্যায়ন। দুটোতে যোগ্য দরদাতা নির্বাচন করে ঠিকাদার নিয়োগ করে জুলাই মাসেই আমরা কাজ শুরু করতে পারব।
জানা গেছে, কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রাথমিক কাজ চলছে। সেই বন্দর তৈরি হবে ২০২৬ সালে। জাপানের জাইকা চাইছে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের আগেই মাতারবাড়ি থেকে সড়কপথে পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করতে। সেজন্য আগেভাগেই ‘পোর্ট কানেকটিং সড়ক’ নির্মাণের উদ্যোগ বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। সড়কটি নির্মাণে মাঠপর্যায়ে জরিপ, নকশা তৈরি, প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রস্তুত করেছে জাপানি প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্ট গ্লোবাল কম্পানি।
প্রতিবেদনমতে, ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক নির্মাণে বেশ কটি বড় সেতু নির্মাণ করতে হবে। এরমধ্যে ১০ কিলোমিটারই হবে সেতু। রেললাইনের কারণে যাতে সড়কপথে গাড়ি চলাচল বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য তিনটি বড় ওভারপাস নির্মিত হবে। পুরো সড়কটি হবে দুই লেনের বা ১০.৩ মিটার প্রস্থ। তবে গভীর সমুদ্রবন্দরের শুরুর দিকে সড়কটি ১২শ মিটার হবে চার লেনের। নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। এরমধ্যে জাপানের জাইকা দেবে ৬ হাজার ২শ কোটি টাকা এবং সরকার দেবে ২ হাজার ৬শ কোটি টাকার কিছু বেশি। জমি অধিগ্রহণের জন্য ৮৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। পুরো কাজটি শেষ করতে ৪২ মাস সময় নির্ধারণ করা হয়েছে; যেটি শেষ হবে ২০২৬ সালে।
জানা গেছে, সড়কটি মহেশখালীর মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর এলাকা থেকে শুরু হয়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীর হাঁসেরদিঘি প্রান্তে গিয়ে ‘বন্দর সংযোগ সড়ক’টি যুক্ত হবে। সেখানেই ওই প্রকল্পের কাজ শেষ।
এরপর সড়কটি বাইপাস প্রকল্পে যুক্ত হবে। সেটিও বাস্তবায়ন করছে জাইকা। সেই প্রকল্পে সড়কটি চকরিয়া পৌরসভার মাঝখান দিয়ে না গিয়ে হাঁসেরদিঘি ফাঁসিয়াখালী হয়ে কাকারা ইউনিয়নের ওপর দিয়ে চকরিয়া সরকারি কলেজের পূর্ব প্রান্তে নলবিলা ফরেস্ট বিটের সামনে দিয়ে আবারও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে। কিন্তু সেই প্রকল্পের কাজ অবশ্য এখনো শুরু হয়নি।
পণ্য পরিবহন ও যানবাহন চলাচল তুলনামূলক নির্বিঘ্ন করতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে গুরুত্বপূর্ণ ৫টি বাইপাস ২০২৩ সালের মধ্যেই নির্মাণ শুরুর লক্ষ্য থাকলেও সেটি পিছিয়ে ২০২৫ পর্যন্ত লাগবে। আর নির্মাণ শেষ করতে ২০২৭ সাল পুরোটাই লাগতে পারে।
মাতারবাড়িতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হবে ২০২৬ সালের মধ্যভাগে; সেই বন্দর থেকে প্রাথমিকভাবে দিনে গড়ে ৪ হাজার পণ্যবাহী গাড়ি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাবে। বিদ্যমান দেড়-দুই লেনের সেই মহাসড়ক বিপুলসংখ্যক গাড়ির চাপ সামাল দিতে পারবে না। আর ২০২৬ সালের আগে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করাও হচ্ছে না।
জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা অধ্যাপক মোস্তফা জামান খারেচ বলেন, এমনিতেই পর্যটকদের চাপ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। গভীর সমুদ্রবন্দরের পণ্য পরিবহন যুক্ত হলে অনেক ভয়াবহ অবস্থা হবে; যা বিদ্যমান সড়ক দিয়ে কখনোই সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। ফলে পোর্ট কানেকটিং সড়কের পাশাপাশি এই মহাসড়ককে ছয় লেন বা এক্সপ্রেসওয়েতে উন্নীত করার কাজ জরুরিভিত্তিতে ২০২৫ সালের মধ্যেই শেষ করতে না পারলে সুফল মিলবে না।
সম্পর্কিত খবর