<p>স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট সিপ্রি বলছে, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী সামরিক ব্যয় ৬.৮ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড ২.৪ ট্রিলিয়ন ডলার হয়েছে। এ ছাড়া ২০০৯ সালের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বের সব ভৌগলিক অঞ্চলে সামরিক ব্যয় বেড়েছে।</p> <p>বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের ৩৭ শতাংশ খরচ করে শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর দেশটি ৯১৬ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২.৩ শতাংশ বেশি। এই তালিকায় এরপর আছে চীন (২৯৬ বিলিয়ন ডলার, বিশ্বের মোট ব্যয়ের ১২ শতাংশ), রাশিয়া (১০৯ বিলিয়ন ডলার, ৪.৫ শতাংশ), ভারত (৮৩.৬ বিলিয়ন ডলার, ৩.৪ শতাংশ) ও সৌদি আরব (৭৫.৮ বিলিয়ন ডলার, ৩.১ শতাংশ)।</p> <p>এ ছাড়া যুক্তরাজ্য ৭৪.৯ বিলিয়ন, জার্মানি ৬৬.৮ বিলিয়ন, ইউক্রেন ৬৪.৮ বিলিয়ন, ফ্রান্স ৬১.৩ বিলিয়ন, জাপান ৫০.২ বিলিয়ন, ইসরায়েল ২৭.৫ বিলিয়ন ও পাকিস্তান ৮.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে।</p> <p>আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, এশিয়া, ওশেনিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা—সব অঞ্চলেই সামরিক ব্যয় বেড়েছে। শতাংশের হিসাবে ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি সামরিক ব্যয় বেড়েছে ডিআর কঙ্গোতে (১০৫ শতাংশ)। দেশটির সামরিক বাহিনী বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়ছে।</p> <p>সিপ্রির গবেষক চিয়াও লিয়াং ডিডাব্লিউকে বলেন, মেক্সিকো ও এল সালভাদরে সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গ্যাং সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়তে সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইকুয়েডর ও ব্রাজিলেও একই ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।</p> <p><strong>ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ</strong><br /> ২০২৩ সালে ইউক্রেন সামরিক খাতে ৬৪.৮ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫১ শতাংশ বেশি। তবে দেশটি ২০২৩ সালে ৩৫ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা পেয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে ইউক্রেন গত বছর সামরিক খাতে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। একই সময়ে রাশিয়া খরচ করেছে ১০৯ বিলিয়ন ডলার।</p> <p>তবে জিডিপির হিসেব করলে দেখা যাচ্ছে, ইউক্রেন তার জিডিপির ৩৭ শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয় করেছে। সেই তুলনায় রাশিয়ার ব্যয় হয়েছে ৫.৯ শতাংশ। ফলে ‘যুদ্ধটা রাশিয়ার চেয়ে ইউক্রেনের ওপর বেশি বোঝা হয়ে উঠেছে’ বলে মন্তব্য করেন লিয়াং।</p> <p><strong>চীন-তাইওয়ান সংকট</strong><br /> দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনার কারণে ২০২৩ সালে সামরিক ব্যয় বেড়েছে। চীন তার খরচ আগের বছরের তুলনায় ৬ শতাংশ বাড়িয়ে ২৯৬ বিলিয়ন ডলার করেছে। এশিয়া ও ওশেনিয়া এলাকার মোট সামরিক ব্যয়ের অর্ধেক করেছে চীন।</p> <p>সিপ্রির গবেষক লিয়াং বলেন, পিপলস লিবারেশন আর্মিকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে সামরিক ব্যয় বাড়িয়েছে চীন। এ ছাড়া চীন সামরিক ব্যয় বাড়ানোয় জাপান, তাইওয়ান ও ভারতও সামরিক বাজেট বাড়িয়েছে বলে মনে করেন তিনি। জাপান (৫০.২ বিলিয়ন ডলার) ও তাইওয়ান (১৬.৬ বিলিয়ন ডলার) তাদের সামরিক বাজেট ১১ শতাংশ বাড়িয়েছে।</p> <p>জার্মানির ফ্রাংকফুর্টের পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নিকলাস শ্যোরনিগ ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যখন সামরিক নিরাপত্তা আবার অগ্রাধিকার পাচ্ছে এবং নিরাপত্তা ইস্যুটি সামরিক কাঠামোর ভিত্তিতে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে। সেই অর্থে, এই সংখ্যাগুলো সেই মানসিকতার প্রতিফলন মাত্র।’</p> <p>ইউক্রেন ও সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল ও ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলার বিষয়টি উল্লেখ করে নিকলাস বলেন, বর্তমান সময়ে হামলা চালানোর চেয়ে প্রতিরক্ষার বিষয়টি বেশি ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। বিশ্ব একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে, যেখানে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। কারণ অধিকাংশ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি সেকেলে বা আর কার্যকর হচ্ছে না।</p>