<p>শুরুটা হয়েছিল ঢাকার মিরপুর ১৪ নম্বর টিনশেড বস্তি থেকে। এখানকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে স্কুল চালু করেছিল একটি এনজিও, কিন্তু করোনার ক্রান্তিকালে বেশ কয়েক মাস স্কুল বন্ধ রাখার পর আর চালু করতে পারেনি তারা। একসময় যে শিশুরা স্কুলে আসত, তারা বেশ বিপদে পড়ল। এত দিন বিনা বেতনে একটি স্কুলে পড়েছে, এখন তারা বেতন দিয়ে অন্য স্কুলে পড়বে কিভাবে? অভিভাবকদেরও ভালো স্কুলে পড়ানোর সামর্থ্য নেই।</p> <p>কেউ রিকশা চালিয়ে, কেউ বা ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। আবার যে শিশুদের বাবা নেই, তাদের মা অন্যের বাসায় কাজ করে যে কয় টাকা পান, তা দিয়েই টেনেটুনে সংসার চালান। ১৪ নম্বর বস্তিতে একটি স্কুলের অভাবে ঝরে পড়তে থাকে শিশুগুলো। মিরপুরের সদস্যদের মাধ্যমে বিষয়টি বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতিষ্ঠাতা, কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের নজরে আসে। তিনি তাৎক্ষণিক এই এলাকায় বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নেন। নাম দেওয়া হয় ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল’। ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হয় সেই স্কুলটি। এরপর একে একে দেশের নানা প্রান্তে যেখানে আশপাশে স্কুল নেই, এমন জায়গা খুঁজে ২০টি স্কুল চালু করা হয়।</p> <p>এক বছরের ব্যবধানে একটি স্কুল থেকে শুরু হয়ে বর্তমানে ২০টি স্কুল চলছে। প্রথমে ঘর ভাড়া নিয়ে ঘরের মেঝেতে চাটাই কিংবা পাটি বিছিয়ে ক্লাস নেওয়া হতো। প্রতিটি স্কুলেই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বিনা বেতনে পাঠদান ও শিক্ষা উপকরণ পেয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়ালেখায় আগ্রহ বাড়ে। অভিভাবকরাও ছেলেমেয়েদের আগ্রহ নিয়ে স্কুলে পাঠাতে থাকেন।</p> <p>বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। প্রায় ৫০ জন শিক্ষক নিয়মিত পাঠদান করছেন, যাঁদের বেতন দিচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ। নানা জায়গায় গিয়ে স্কুলগুলো উদ্বোধন করেছেন ইমদাদুল হক মিলন। তখন তিনি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের বলে এসেছিলেন, প্রতিটি শিক্ষার্থী বিনা মূল্যে বই, খাতা, কলম স্কুলড্রেস, ব্যাগ ও জুতা পাবে। প্রতিটি স্কুলে বেঞ্চ দেওয়া হবে।</p> <p>বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থায়নে এবার সেই উপকরণগুলো পৌঁছে গেছে প্রতিটি স্কুলে। প্রতিটি স্কুলের শিক্ষক ও সমন্বয়ক মিলে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন স্কুলড্রেস, ব্যাগ, জুতাসহ শিক্ষা উপকরণ। এখন বেঞ্চে বসে ক্লাস করে শিশুরা। নতুন জামা, ব্যাগ, জুতা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয় প্রতিটি শিশু। যে এলাকায় স্কুলের অবস্থান, সেখানকার প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল পরিদর্শন করছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়ালেখার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন তাঁরা। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা চর আগস্তি। বেশ কয়েকটি নদী পাড়ি দিয়ে সদর থেকে ওই স্কুলটিতে যেতে হয়। এমন দুর্গম অঞ্চলের স্কুলটি পরিদর্শনে গিয়ে অভিভূত হন স্থানীয় সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা। তিনি বলেন, ‘এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে, এটা অবিস্মরণীয় ঘটনা। এখানে আশপাশে কোনো স্কুল ছিল না। এই শিশুদের শিক্ষার আলো পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। এমন অসম্ভবকে সম্ভব করেছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। প্রত্যন্ত এলাকায় এসে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আলোর পথ দেখাচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ। আমি তাদের অভিবাদন জানাই। সরকারের পাশাপাশি দেশকে এগিয়ে নিতে তাদের এই উদ্যোগ অনেক বড় ভূমিকা পালন রাখবে। শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে বসুন্ধরা গ্রুপের এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকুক—এই কামনা করি।’</p> <p>নতুন পোশাক, জুতা ও ব্যাগ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা মিরপুরের বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার। সে বলে, ‘আমাগোরে স্কুলের জামা, জুতা, ব্যাগ দিবে চিন্তাই করি নাই। কোনো দিন স্কুলের জামা, সাদা জুতা পরে স্কুলে যাই নাই। এখন প্রতিদিন পোশাক পরে স্কুলে যাব, ভেবেই অনেক আনন্দ হচ্ছে। খুব ভালো লাগছে এখন।’ অভিভাবকরা বলেন, অন্য স্কুলে ছেলেমেয়েদের পড়াতে মাসিক বেতনসহ অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলে কোনো বেতন দিতে হয় না। এই বছর আবার বই, খাতা, কলম, ব্যাগ, ড্রেস, জুতা—সব ফ্রি দিয়েছে। যাঁরা এই স্কুল করেছেন, তাঁদের জন্য অনেক দোয়া করি। তাঁদের অসিলায় আমাদের সন্তানদের ভালোভাবে পড়াতে পারছি।</p>