<p>৫৩৬ খ্রিষ্টাব্দ, বছরটি ইতিহাসের পৃষ্ঠায় কালো অক্ষরে লেখা থাকবে। ঐতিহাসিক মাইকেল ম্যাকরমিকের গবেষণায় উঠে এসেছে একটি রহস্যময় কুয়াশার কাহিনি, যা প্রায় আঠারো মাস ধরে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার বিশাল অংশের আকাশ ঢেকে রেখেছিল। এই সময়ে সূর্যের আলোকে ম্লান ও পরিবেশকে শীতল করে রেখেছিল এই কুয়াশা। এটা ইতিহাসে 'অন্ধকার যুগ' নামে পরিচিত।</p> <p>হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ইতিহাসবিদ এবং নৃতত্ত্ববিদ মাইকেল ম্যাকরমিক বলছেন, ওই ১৮ মাসে পৃথিবীর জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ ছিল। সূর্যের আলোর অভাবে তাপমাত্রা নেমে যায় এবং ব্যাপক ফসলহানি ঘটে। খাদ্যের অভাবে মানুষ মরতে থাকে। বিগত ২৩০০ বছরের মধ্যে সেই সময়টাই ছিল সবচেয়ে শীতল যুগ। ইতিহাসবিদরা অনেক দিন থেকেই এই শীতলতম যুগ ও রহস্যময় কুয়াশার কথা জানতেন, তবে এর সঠিক কারণ জানা ছিল না।</p> <p>ম্যাকরমিক এবং তার দলের গবেষণা থেকে ধারণা করা হয় যে আইসল্যান্ড অথবা উত্তর আমেরিকার কোথাও একটি ভয়াবহ অগ্নুৎপাত ঘটেছিল। এই অগ্নুৎপাতের ফলে আগ্নেয়গিরির থেকে বিশাল পরিমাণ ছাই উত্তর গোলার্ধের আকাশে ছড়িয়ে পড়ে। এই ছাই থেকে সৃষ্টি হওয়া কুয়াশা বাতাসের সাথে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পৌঁছে যায়। এই ঘটনার পরই পৃথিবীর একটি বিস্তীর্ণ এলাকার আকাশ কুয়াশায় ঢেকে যায়, যা সূর্যের তাপ ছড়াতে বাধা সৃষ্টি করে এবং ফলে তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।</p> <p>এই কুয়াশার পরিণতি ছিল ব্যাপক। সূর্যের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শীতের প্রকোপ বাড়ে, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং খাদ্যের অভাবে মানুষ মারা যায়। এই সময়কালটি পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম বিপর্যয়ময় সময় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।</p> <p>৫৩৬ সালের এই রহস্যময় কুয়াশা একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় হিসেবে ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। মাইকেল ম্যাকরমিকের গবেষণা এই ঘটনাটির পেছনের কারণ উদঘাটনে নতুন আলোকপাত করেছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে সৃষ্ট এই বিপুল প্রভাব পৃথিবীর ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে। </p> <p>সূত্র : বিবিসি</p>