<p>শীতকালে খা খা রোদ নেই, তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়েরও নীচে। তারপরও মাঠ-ঘাট শুকিয়ে খট খট করে। পুকুর জলাশয়, নদীর পানি তলানীতে নেমে যায়। বিশেষ করে পুকুরের চেয়ে নদীর পানি এ সময় বেশি কমে। কেন?</p> <p>কারণ হলো, বাতাসের জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা। শীতকালের বাতাস অনেক শুষ্ক থাকে, কারণ এ সময় জলীয় বাষ্প কম থাকে। বাতাস এনমিতে অদৃশ্য মনে হলেও এর ভেতর আসলে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকে। তবে জলীয় বাষ্প ধারণের একটা সীমা আছে, সেই সীমার চেয়ে বেশি জলীয় বাষ্প বাতাস ধারণ করতে পারে না। সেই অবস্থাকে বলে সম্পৃক্ত অবস্থা। এ অবস্থায় পৌঁছলে বাতাস আর জলীয় বাষ্প শোষণ করতে পারে না।</p> <p>সম্পৃক্ত অবস্থা মানে বাতাসের আদ্রতা ১০০%। বাতাসে কী পরিমাণ জলীয়বাষ্প আছে, তার ওপর নির্ভর করে এর আদ্রতা। আদ্রতা যদি ৫০% হয় তারমানে সম্পৃক্ত অবস্থায় যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প ধারণ করতে পারে বাতাস, তার অর্ধেক পরিমাণ জলীয় বাষ্প আছে এতে। </p> <p>শীতকালে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। এ সময় আদ্রতা ৫০-৬০ শতাংশে নেমে আসে। বাতাস হয় শুষ্ক, তাই আসপাশের বিভিন্ন বস্তু থেকে জলীয় বাষ্প শোষণ করে। এ কারণেই শীতে ভেজা কাপড় দ্রুত শুকায়। শুধু ভেজা কাপড়ই নয়, যে কোনো ভেজা জিনিস এ সময় দ্রুত শুকায়। এমনকী বাতাস নদী, পুকুর ও জলাশয় থেকেও প্রচুর জলীয় বাষ্প শোষণ করে। ফলে দ্রুত কমতে থাকে জলাশয়ের পানি।</p> <p>পুকুর বা অন্যান্য জলাশয় হলো বদ্ধ। বর্ষাকালে ঢলের পানি এসে ভরে যায় এসব জলাশয়। কিন্তু শীতকালে বাতাসের আদ্রতার কারণেই বেশিরভাগ পানি শুকিয়ে যায়। অন্যদিকে, নদী বদ্ধ জলাশয় নয়। আমাদের দেশের বেশিরভাগ নদীর উৎস হলো হিমালয়ের বরফগলা পানি। শীতাকালে হিমালয়ের তাপমাত্রা কমে বেশিরভাগ স্থানেই শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের অনেক নিচে নেমে যায়।  হিমালয়ের বরফ এসময় একদমই গলতে পারে না এ সময়। তাই নদীগুলোর পানিপ্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ফলে নদীর পানি কমতে শুরু করে। আবার শুষ্ক বাতাসও প্রচুর পরিমাণ পানি শোষণ করে নদী থেকে। ফলে নদীর পানি শীতকালে আরও বেশি কমে।</p> <p>অন্যদিকে গরমকালে তাপমাত্রা বেশি থাকলেও বাতাসের আদ্রতা অনেক বেশি থাকে শীতকালের তুলনায়। তাই শীতের চেয়ে গরমকালে জলশয়ে পানি তুলনামূলক বেশি থাকে। ওদিকে তাপমাত্রা বেশি বলে হিমালয়ের বরফও গলতে শুরু করে, তখন নদীর পানিও বাড়তে থাকে।</p>