<p>বিল্টুর খুব শখ ফুল ফোটা দেখবে। কিন্তু ওর কখনো সেই শখ পূরণ হয়নি। কারণ ঠাস ঠাস দুম দুম করে কখনো ফুল ফোটে না। বিল্টু অনেকবার ভেবেছে, কয়েক ঘণ্টাও যদি লাগে, তাও এক দিন বসে দেখবে পুরোটা। কিন্তু কয়েক মিনিট পেরোতে না পেরোতে অধৈর্য হয়ে ওঠে সে।</p> <p>একদিন পর্তুলিকা বা নাইন ও ক্লক ফুল ফোটার দৃশ্য দেখেছিল ও। কারণ এই ফুলটা অন্য ফুলের চেয়ে দ্রুত ফোটে। একদিন সকাল ৮টায় ফুলবাগানে গিয়ে বসে ছিল। কারণ ঠিক ৯টায় ওটা ফোটে। এক ঘণ্টা বসে থাকলে ওটা ফুটবেই ফুটবে। ও বসেওছিল, কিন্তু ঠিক কখন কুঁড়ি ফুটে ফুল হলো ও টের পেল না। </p> <p>সেদিন ফজলু চাচার সঙ্গে এ ব্যাপারটা আলোচনা করেছিল। তিনি বলেছিলেন, এর মধ্যে একটা প্যারাডক্স আছে। সেটা যদি খুঁজে বের করতে পারিস, তাহলে বুঝতে পারবি রহস্যটা কোথায়।</p> <p>বিল্টু অনেক ভেবেও প্যারাডক্সটা ধরতে পারেনি। অবশেষে চাচাই ওকে বাতলে দিলেন পথ। ওকে প্যারাডক্সটা খঁজে দেননি ফজলু চাচা, তবে ওকে একটা কাজ করতে দিয়েছিলেন চাচা। </p> <p>বাগানে একটা জবা ফুলের গাছ। তিনি বলেছিলেন, পার্থক্য বোঝার জন্য এটা বেশ আদর্শ একটা ফুল। জবা ফুলের কুঁড়ি অনেকটা লম্বাটে, লিপস্টিকের মতো। কিন্তু ফুল ফোটার পর সেটা যখন ছড়িয়ে পড়ে, তখন ফানেল কিংবা মাইকের মতো দেখা যায়। তাই কুঁড়ি আর ফুলের মধ্যে আকার-আকৃতিতে বেশ তফাত দেখা যায়। একটা স্মার্টফোন ট্রাইপডে বসিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন বাগানে। ট্রাইপডে ফোনটা ফিক্স করে বসিয়েছিলেন জবা গাছটার কাছে। তারপর ফোনের ক্যামেরাটা অন করে ফোকাস করিলেছিলেন জবার কুঁড়িতে। টাইম ল্যাপস মোডে চালিয়ে দিয়েছিলেন ফোনের ক্যামেরাটা। ল্যাপস টাইম ১০ সেকেন্ড। অর্থাৎ প্রতি ১০ সেকেন্ড পর পর ফোনের ক্যামেরা কুঁড়ি বা ফুলের ছবি তুলবে। এভাবে ফোনটা রেখে এলেন বাগানে। বিল্টুকে বললেন সে যেন খেয়াল রাখে। যখন ফুলটা সম্পূর্ণ ফুটে যাবে তখন যেন তাকে খবর দেয়।</p> <p>দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর, চাচা যখন বিছানায় একটু গড়িয়ে নেওয়ার কথা ভাবছেন, তখন বিল্টু হাঁপাতে হাঁপাতে এসে খবর দেয়, ফুল সম্পূর্ণ ফুটে গেছে।</p> <p>চাচা তখন ফোনটা তুলে আনেন ঘরে। তারপর বিল্টুকে নিয়ে বসে যান, ছবি বিশ্লেষণে। </p> <p>ছবিগুলো একটা ফোল্ডারে জমা হয়েছে। চাচা ফোল্ডার খুলে প্রথম ছবিটা ওপেন করে দেখান। ওটা একটা কুঁড়ি। স্ক্রিনে হাত দিয়ে ছবিগুলো স্পর্শ করেন। একটার পর একটা ছবি আসছে। ছবি যত এগোয় কুঁড়ি তত প্রস্ফুটিত হয়। শেষ দিকে গিয়ে দেখা যায় কুঁড়িটা ফুটে সম্পূর্ণ ফুল হয়ে উঠেছে। কোন সময়ে গিয়ে ফুল সম্পূর্ণ ফুটে গেছে, সেটাও দেখিয়ে দিলেন। কিন্তু এ-ও বললেন, এটাই আসল সময় নয়, কারণ ক্যামের ছবি তুলেছে ১০ সেকেন্ড পর পর। এই ক্যামেরার শাটার স্পিড সেকেন্ডে ২৮০০। অর্থাৎ এক সেকেন্ডের ২৮০০ ভাগের ১ ভাগ সময়ে এর শাটার একবার খুলে আবার বন্ধ হয়ে যায়। অর্থৎ চাইলে এক সেকেন্ডে ২৮০০টা ছবি তুলতে পারে সর্বোচ্চ। এর চেয়েও গতিশীল ক্যামেরা আছে। দামি ডিএলআর ক্যামেরা ১০-২০ হাজার ছবি তুলতে সক্ষম। সেই হিসাবে এটা লম্বা সময়। ভবিষ্যতে হয়তো আরো গতিশীল ক্যামেরা আসবে, তখন আরো বেশি ছবি তুলতে পারবে। অর্থাৎ ফুলটা ঠিক কোন সময়ে ফুটেছে এটা বলা মুশকিল।</p> <p>‘এখানে প্যারাডক্সটা কোথায়?’ বিল্টু অধৈর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে।</p> <p>চাচা তখন ফোল্ডার খুলে ১ আর ২ নম্বর ছবিটা পাশাপাশি ফ্রেমে রেখে দেখান। বলেন, এটার মধ্যে কোনটা কুঁড়ি আর কোনটা ফুল?</p> <p>‘দুটোই কুঁড়ি,’ বিল্টু বলে। এদের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে?</p> <p>বিল্টু মাথা নেড়ে জানিয়ে দেয়, সে কোনো পার্থক্য দেখতে পাচ্ছে না।</p> <p>চাচা তখন ১৮০-১৮১ নম্বর ছবি দুটো পাশাপাশি রেখে দেখান। এবারের ছবি দুটো আধা ফোটা ফুলের। কিন্তু ও দুটোর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। পরে ৩৬৫-৩৬৬ নম্বর ছবি দুটোও চাচা একইভাবে দেখান। এবারও ও দুটোর মধ্য পার্থক্য নেই। তবে দুটো ছবি সম্পূর্ণ ফোটা ফুলের।</p> <p>চাচা বললেন, ‘এটাই হলো প্যারাডক্স। এই ফোল্ডারের প্রথম ছবিটা হলো কুঁড়ির আর শেষের ছবিটা সম্পূর্ণ ফুলের। কিন্তু এই দুই ছবির মধ্যে পাশাপাশি এমন দুটো ছবি পাওয়া যাবে না, যাদের একটা কুঁড়ি বলে চিহ্নিত করা যায়, অন্যটা ফুলের। অথচ কুঁড়িই ধীরে ধীরে ফুলে পরিণত হয়েছে।’</p> <p>বিল্টু তখন মাথা চুলকে বলে, ‘আসলেই এটা প্যারাডক্স।’</p> <p>ফজলু চাচা বলেন, ‘এই প্যারাডক্সটা অনেক পুরনো। গ্রিক দার্শনিকরা এটা নিয়ে ভেবেছিলেন।’</p>