<p>আজ ঢাকার আকাশের মন ভালো নেই। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে সে মন খারাপের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। মন খারাপের কারণ দক্ষিণের বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ। সাধারণত ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটার (৪০ মাইল) বেগ প্রাপ্ত হলে নিম্নচাপটি ‘ঘূর্ণিঝড়’ আখ্যা পায়। তখন তাকে একটি নাম দেওয়া হয়। সব ঘূর্ণিঝড়ের নাম আবার এক হয় না। বিশ্ব আবহওয়া সংস্থার অধিভুক্ত প্রশান্ত-মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৩টি দেশের প্রস্তাবিত নামগুলো পরপর প্রয়োগ করা হয়।</p> <p>আমরা যে নিম্নচাপটি নিয়ে কথা বলছি সেটি আজ সকালে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। এর নাম ‘মিধিলি’ । নামটি দিয়েছে মালদ্বীপ। মিঢিলি অর্থ ‘ফলপ্রসু বিষয়’। ঝড়টি ধীরে ধীরে বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিক হয়ে এগোচ্ছে।</p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/10/25/1330061"><span style="color:#2980b9;">আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড়ের বিপৎসংকেত— কোনটার কী মানে?</span></a></p> <p>একমাসেরও কম সময়ে ঘনীভূত হলো দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’। গতমাসের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ উপকূলে দুর্বল হয়ে চলে যায় ‘হামুন’। নামটি ছিল ইরানের দেওয়া। মিধিলির পরের নামটি মায়ানমারের ‘মিগজাউম’ । এরপর আসবে ওমানের ‘রেমাল’ । তালিকা অনুযায়ী, তারপর আসবে পাকিস্তানের দেওয়া ‘আসনা’। বাংলাদেশের দেওয়া সবশেষ নামটি ছিল ‘বিপর্যয়’, দ্বিতীয় কলামের প্রথম নাম ছিল সেটি। অর্থাৎ বাংলাদেশের পরবর্তী নামটি আসবে তৃতীয় কলাম শুরু হলে। মিধিলির পর আরও নয়টি দেশের নয়টি নাম শেষে আসবে সে ক্রম। বাংলাদেশের প্রস্তাবিত পরবর্তী নামটি ‘অর্ণব’।</p> <p><br /> <strong>ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের ইতিকথা</strong><br /> বেশিদিন আগে নয়, শুরুটা হয় ১৯৫৩ সালে। অ্যামেরিকার ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সবচেয়ে বড়ো শহর মায়ামির জাতীয় হ্যারিকেন সেন্টার আটলান্টিক অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্য প্রস্তাব দেয়। পরবর্তীতে জাতিসংঘের একটি ইউনিট ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের বৈঠকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্য একটি তালিকা তৈরি করা হয়।</p> <p>ওয়ার্ল্ড মেটিরিওলজিকাল ওয়েদার অর্গানাইজেশন এবং এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন ২০০০ সালে এর সদস্য দেশগুলোর পরামর্শ নিয়ে ঘূর্ণিঝড় ঝড়ের জন্য নাম প্রস্তুত করার কাজ শুরু করে—  বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, ওমান, পাকিস্তানের মতো আরও ১২টি দেশকে সাথে নিয়ে। শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এই প্যানেলের অংশ। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, যে মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়—তার অববাহিকায় থাকা দেশগুলো নামকরণ করে। পৃথিবীতে মোট ১১টি সংস্থা ঝড়ের নামকরণ করে থাকে।</p> <p>নামকরণের এই সামগ্রিক বিষয়টা নিয়ন্ত্রণিত হয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিওএমও) মাধ্যমে। ২০০৪ সালে ৮টি দেশ ৮টি করে মোট ৮৪টি নাম দেয়। সেখানে প্রথম নামটি ছিল বাংলাদেশের (অনিল)। নামের ক্রম আসে দেশের ক্রম অনুযায়ী। অর্থাৎ দেশের নামের ইংরেজি বর্ণানুক্রমে একটি করে দেশের নাম নির্ধারিত হয় আগত ঘূর্ণিঝড়ের নাম।</p> <p>২০২০ সালে মোট ১৩টি দেশ ১৩টি করে মোট ১৬৯টি নাম দেয়। ১৩ টি দেশ হলো: বাংলাদেশ, ভারত, মলদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ইরান, কাতার, সৌদি আরব, আরব-আমিরাত এবং ইয়েমেন। ডব্লিওএমও-র ভারতীয় উপমহাদেশের এই সদস্য দেশগুলোই নাম দেয়।</p> <p><strong>ঝড়ের নাম দিতেই হবে কেন?</strong><br /> ঝড়ের নাম দেওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এদের মাঝে অন্যতম, এটা ঝড়ের অঞ্চলে বসবাস করেন যাঁরা তাঁদের সতর্ক করে দিতে সহজ হয়। তাছাড়া ঝড়ের নাম দেওয়া হলে, কোন ঝড়ে কেমন ক্ষতি হয়েছে বা কোনো গবেষণার প্রয়োজনে তথ্য ঘাঁটতে সুবিধে হবে।</p> <p>বেশিরভাগ নামগুলোই নারীদের নামে কেন?</p> <p>বিশ শতকের মাঝের দিকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণে মেয়েদের নাম বেশি ব্যবহৃত হতো। এক্ষেত্রে আবহাওয়াবিদদের যুক্তি ছিল, মেয়েদের নামগুলো মানুষ সহজে মনে রাখতে পারবেন। সেজন্যই নার্গিস, রেশমি, রিটা, বিজলি, নিশা, গিরি, হেলেন, চপলা, অক্ষি, লুবান, তিতলি, নিলুফার, ক্যাটরিনা-সহ অনেকগুলো ভয়ংকর ঝড়ের নাম অমর হয়ে আছে। যেগুলো নারীদের নামেই রাখা হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা কর্তৃক শর্ত দেওয়া হয়— নামগুলো লিঙ্গ নিরপেক্ষ হবে। </p> <p><strong>নাম দেওয়ার আছে কিছু শর্ত</strong><br /> একই নাম বারবার দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ নামের পুনরাবৃত্তি করা যাবে না। ধর্মীয় বা রাজনৈতিক আদর্শে আঘাত হানতে পারে— এমন নাম দেওয়া যাবে না। নামটি হতে হবে লিঙ্গ নিরপেক্ষ। বিশ্বের কোনো জনগোষ্ঠীর ভাবাবেগে যেন আঘাত না করে, সে বিষয়টি খেয়াল রাখা চাই। নামের মাধ্যমে কোনো প্রকার নিষ্ঠুরতা, রুক্ষভাষা বা নির্মমতা প্রকাশ পাবে না। নামের উচ্চারণ হবে সহজ। নাম হবে সর্বোচ্চ আটটি বর্ণে। সাথে থাকতে হবে উচ্চারণ নির্দেশিকা। আবহাওয়া সংক্রান্ত বৈঠকে আলোচনার পর নামের তালিকা চূড়ান্ত করতে হবে।</p> <p>এসব শর্ত পূরণ করলেই চূড়ান্ত হয় ঘূর্ণিঝড়ের নাম।</p> <p>সূত্র: <br /> ১. Tropical Cyclone Naming/World Meteorological Organization,</p> <p>২. বাংলাদেশ আবহওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট (https://bmd.gov.bd/)</p> <p><br />  </p>