<p>হরতাল, অবরোধ হচ্ছে, দুর্বৃত্তরা আগুন দিচ্ছে গণপরিবহনে। এমনকি যানবাহনের আগুনে মানুষ নিহত হওয়ার খবরও এসেছে গণমাধ্যমে। এখন ইউটিউবের যুগ, তাই গাড়ি পোড়ানোর ভিডিও সহজেই দেখা যাচ্ছে। বেশির ভাগ ভিডিওতেই দেখা যাচ্ছে, কর্মচারীরা অনেক চেষ্টা করেও বাসের আগুন নেভাতে পারছেন না। এমনকি আগুন লাগার একেবারে শুরুর দিকেও। এর কারণ কী?</p> <p>আগুন নেভানোর জন্য সবচেয়ে সহজলভ্য বস্তু হলো পানি। বাসের কর্মচারীরা সহজলভ্য জিনিসটাই ব্যবহার করছেন পেট্রলের আগুন নেভাতে। তাতেই হচ্ছে সমস্যা। আগুন তো নিভছেই না, বরং দ্রুত ছড়িয়ে পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে ফেলছে বাসটিকে। কেন এমনটা হচ্ছে?</p> <p>আগের লেখাতেই বলেছিলাম, <a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/11/02/1332492"><span style="color:#2980b9;">সব আগুন পানিতে নেভে না</span></a>। কাঠ, বাঁশ, রাবার, কাগজ, প্লাস্টিক ইত্যাদির আগুনই শুধু পানি দিয়ে নেভানো যায়। দুর্বৃত্তরা বাস পোড়ায় পেট্রল দিয়ে। এখানে দাহ্য বস্তু হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে পেট্রল।</p> <p>আগুন জ্বালানোর জন্য তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়। এই তিনের যেকোনো একটি অনুপস্থিত থাকলে আগুন জ্বলবে না। সেই শর্ত তিনটি হলো অক্সিজেন, পর্যাপ্ত তাপ এবং দাহ্য পদার্থ। পেট্রলবোমার মূল উপাদান হলো জ্বালানি তেল পেট্রল। এই পেট্রল আগে বাসের গায়ে বা যন্ত্রাংশে ছিটিয়ে দেওয়া হয়, তারপর আগুন লাগে। প্রথমে তেল দাহ্য পদার্থ হিসেবে কাজ করে। কিছুক্ষণের মধ্যে বাসের সিট, বডি ও যন্ত্রাংশেও ছড়িয়ে পড়ে। তখন এগুলোও পরিণত হয় দাহ্য বস্তুতে।</p> <p><span style="color:#c0392b;">আরো পড়ুন:</span><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/11/02/1332466"><span style="color:#c0392b;"> </span>বিড়ালটি একই সঙ্গে জীবিত ও মৃত —কিভাবে?</a></p> <p> </p> <p>কেন পেট্রলের আগুন পানিতে নেভে না? এর দুটি কারণ আছে। একটা হলো, তেল পানির চেয়ে হালকা। পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম হলো, যেসব পদার্থের অণুগুলো স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে—যেমন তরল ও গ্যাসীয় —সেসব পদার্থ একটি পাত্রে রাখলে যার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি, সে সবার নিচে থাকবে। তুলনামূলক হালকা পদার্থটি থাকবে ওপরে। তেল হালকা, পানি ভারী, তাই তেলের ওপর পানি ছিটিয়ে দিলে দ্রুত তেল ওপরে উঠে আসবে, পানি চলে যাবে নিচে।</p> <p>বাঁশ-কাঠের আগুনে পানি দিলে পানি দ্রুত দাহ্য বস্তু থেকে তাপ শোষণ করে বাষ্পীভূত হয়। বাঁশ কিংবা কাঠের তাপ কমে যায় অনেক। আগুন নিস্তেজ হয়ে পড়ে। আবার বাষ্প ছড়িয়ে পড়ে দাহ্য বস্তুটির চারপাশে। এ কারণে অক্সিজেনের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। তখন অক্সিজেনের অভাবে সম্পূর্ণ নিভে যায় আগুন।</p> <p><span style="color:#c0392b;">আরো পড়ুন: </span><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/11/01/1332212">সাপ গরুর বাঁট থেকে দুধ খায়—সত্যি না কুসংস্কার?</a></p> <p>অন্যদিকে জ্বলন্ত পেট্রলের ওপর পানি ছুড়ে মারলে সেটা বাষ্পীভূত হওয়ার আগেই নিচে চলে যায়, পেট্রল চলে আসে ওপরে। সুতরাং বাষ্প অক্সিজেনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। অন্যদিকে পানি বাষ্পীভূত না হওয়ার আরেকটা কারণ আছে। সেটা হলো, পেট্রলের আগুনের অত্যধিক তাপমাত্রা। এ তাপে বাষ্পীভূত না হয়ে পানির অণুতে ভাঙন ধরে। পানির অণু বিশ্লিষ্ট হয়ে অক্সিজেন আর হাইড্রোজেন পরমাণু তৈরি করে। এর মধ্যে হাইড্রোজেন নিজেই দাহ্য পদার্থ। অন্যদিকে অক্সিজেন আগুন জ্বালাতে সাহয্য করে। ফলে এ অবস্থায় আগুন আরো বেশি করে ছড়িয়ে পড়ে। </p> <p>তাই পেট্রলবোমার আগুনে পানি না দিয়ে বালি, কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস বাং অগ্নিনির্বাপক পাউডার ছড়ালে আগুন নেভার সম্ভাবনা থাকে। </p> <p>সূত্র : হাউ ইট ওয়ার্কস<br />  </p>