<p>ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন অধ্যাপক আবুল ফয়েজ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন টক্সিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি তিনি। চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপারের বিষের ওপর গবেষণা করেছেন দীর্ঘদিন ধরে। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসল আপনটাইনে করা তাঁর পিএইচডির শিরোনাম—‘নিউরোমাসকুলার ইফেক্ট অব দ্য ভেনম অব রাসেলস ভাইপার’। ‘সর্প দংশন ও এর চিকিৎসা’ নামে একটি বইও লিখেছেন। চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার বিষয়ে কালের কণ্ঠের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পিন্টু রঞ্জন অর্ক</p> <p><strong>কালের কণ্ঠ : চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপারের আদিনিবাস কোথায়? </strong><br /> আবুল ফয়েজ : পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দুর্লভ সাপ চন্দ্রবোড়া। এটি যে বাংলাদেশে ছিল, এর প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯২৯ সালে পি ব্যানার্জি লিখিত ‘হ্যান্ড বুক অব স্নেক-বাইট’ বইয়ে। বইটিতে এক হাজার ৮৩টির মতো কেস স্টাডি আছে। সেখানে ২২টি চন্দ্রবোড়া সাপের তথ্য আছে, যেগুলোর ভৌগোলিক এলাকা বর্তমান বাংলাদেশ। এর মধ্যে খুলনা, কুষ্টিয়া, যশোর—এসব জায়গার নাম আছে। রাজশাহী কিংবা চট্টগ্রামের মতো বাংলাদেশের বায়োলজিক্যাল মিউজিয়ামগুলোতে আগে থেকেই যে স্পেসিম্যানগুলো (নমুনা) সংরক্ষিত আছে, সেগুলো চন্দ্রবোড়ার। </p> <p><strong>কালের কণ্ঠ : আপনি প্রথম কবে এই সাপে কাটা রোগী পেয়েছিলেন?</strong><br /> আবুল ফয়েজ : লন্ডন থেকে পিএইচডি শেষে দেশে ফিরি ১৯৯৩ সালে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে তখন ছাত্রদের বলেছিলাম, ‘তোমরা চন্দ্রবোড়ার কোনো কেস পেলে আমাকে জানাবে।’ কিন্তু ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত কেউ কোনো রিপোর্ট করেনি। এই বিষয়ে প্রথম খবর পাই ড. রুবেদ আমিনের কাছ থেকে। ২০১৪ সালে জার্মানির সর্পবিজ্ঞানী উলরিখ কোচ চাঁপাইনবাবগঞ্জের ওই জায়গাটি পরিদর্শন করে একটি চন্দ্রবোড়া উদ্ধার করে বিষ সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘চন্দ্রবোড়ার বংশবৃদ্ধির হার তো খুব বেশি। দেখবেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আপনাদের এখানে এটি ব্যাপক মাত্রায় দেখা যেতে পারে।’ এখন তো দেশের অনেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে বলে খবর বেরিয়েছে। </p> <p><strong>কালের কণ্ঠ : এবার কি এটি অস্বাভাবিক মাত্রায় দেখা যাচ্ছে?</strong><br /> আবুল ফয়েজ : মাস দুয়েক আগে ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ জার্নালে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী ২০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে পৃথিবীতে সাপের কী অবস্থা হবে—এসংক্রান্ত একটি স্টাডি মডেল দেখানো হয়েছিল। ওরা কতগুলো হটস্পটও চিহ্নিত করেছে। আফ্রিকার কয়েকটি দেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিয়ানমার ও বাংলাদেশের কথা বলা আছে। কেবল এই বছর না, প্রায় এক দশক ধরে এ সমস্যা চলছে। এই বছর পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে আলাপ বেশি হচ্ছে। রাজশাহীতে কয়েক বছর ধরেই অনেক কেস পাওয়া যাচ্ছে। রাজশাহীর মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আবু শাহীন আমার ছাত্র। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য আপনাকে বলছি। ২০১৩ থেকে ২০২৪ সালের ১২ জুন। এই সময়ে ২৩৫ জন রোগীর তাঁরা চিকিৎসা দিয়েছে। এর মধ্যে ৬৯ জন মারা গেছেন। প্রায় ২৯ শতাংশ! ২০২৩ সালে ৫০জন ভর্তি হয়েছে। ১৩জন মারা গেছে। ২০২৪ সালে এ পর্যন্ত ১৬ জন রোগী এসেছে। এর মধ্যে পাঁচজন মারা গেছে। গত বছর অনেক রোগী ঢাকা মেডিক্যালেও এসেছিল। এবারও শরীয়তপুর, ফরিদপুর, পটুয়াখালী থেকে এসেছে। </p> <p><strong>কালের কণ্ঠ : অন্য বিষধর সাপের তুলনায় চন্দ্রবোড়ার তফাত কোথায়?</strong><br /> আবুল ফয়েজ : এরা বাদামি রঙের। গায়ে শিকলের মতো কালচে গোল গোল দাগ থাকে। শব্দ করে চলে। ফণা তোলে না। এরা মূলত ambush predator, তাই এক জায়গায় চুপ করে পড়ে থাকে। মানে অলস প্রজাতির। মানুষ বা বড় কোনো প্রাণী কাছাকাছি এলে ইংরেজি এস (s) আকৃতির কুণ্ডলী পাকিয়ে খুব জোরে জোরে হিসহিস শব্দ করে। তার পরও তাকে বিরক্ত করা হলে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ছোবল মারতে পারে। চন্দ্রবোড়ার বিষ হেমোটক্সিক। মানে কামড় দিলে রক্ত জমাট বাঁধার উপাদান নষ্ট হয়ে যায়। চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ক্ষতস্থান ফুলে যায়। বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। হেমোটক্সিক সাপ নিউরোটক্সিকের চেয়ে ধীরে আক্রান্ত করে বিধায় চিকিৎসার জন্য অনেকটা সময় পাওয়া যায়। চিকিৎসায় রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।</p> <p><strong>কালের কণ্ঠ : চন্দ্রবোড়া ‘তেড়ে এসে কামড়ায়’ বলে ধারণা অনেকের।</strong><br /> আবুল ফয়েজ : চন্দ্রবোড়া নিয়ে অনেকগুলো অপতথ্য বাজারে চাউর আছে। কোনো সাপই স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে আক্রমণ করে না। সর্পদংশনের আরেক নাম হিউম্যান-স্নেক কনফ্লিক্ট। মানে কোনো না কোনোভাবে মানুষ সাপকে উত্ত্যক্ত করছে। তখনই আত্মরক্ষার্থে ছোবল মারতে উদ্যত হয়। আদতে সাপ একটি নিরীহ প্রাণী। বিষটি অনেক কষ্ট করে সাপ বানায়। এটি মানুষকে দংশন করার জন্য নয়। রাসেলস ভাইপারের ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, ঘাস-লতাপাতার সঙ্গে মিশে থাকে বলে মানুষ সহজে দেখতে পায় না। ফলে অসাবধানতাবশত হয়তো উত্ত্যক্ত করে বা ধরে ফেলে। তখনই কামড় বসিয়ে দেয়। </p> <p><strong>কালের কণ্ঠ : তাহলে ‘তেড়ে এসে কামড়ায়’ জাতীয় ধারণার তৈরি হলো কিভাবে?</strong><br /> আবুল ফয়েজ : চন্দ্রবোড়া ছোবল দেওয়ার সময় শরীরের সামনের দিকটা ছুঁড়ে দেয় বলে ‘তেড়ে এসে কামড়ায়’ জাতীয় ভুল ধারণার জন্ম হয়েছে। ২০১৫ সালের লাল তালিকা অনুযায়ী সাপটিকে সংকটাপন্ন প্রাণীর তালিকায় রাখা হয়েছে। একটি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীকে বিলুপ্ত করার জন্য অনেকে যেন উঠেপড়ে লেগেছে। চন্দ্রবোড়া ‘মানুষকে তেড়ে এসে কামড়ায়’—এটা গুজব। </p> <p><strong>কালের কণ্ঠ : আতঙ্কে অন্য সাপে কামড়ালেও মানুষ চন্দ্রবোড়া ভাবছে। অনেকে একে অজগরের বাচ্চা বলেও ভুল করছে। অন্য সাপের চেয়ে চন্দ্রবোড়ার ছোবল আলাদাভাবে চিহ্নিত করার উপায় আছে?</strong><br /> আবুল ফয়েজ : চন্দ্রবোড়ার ওপরের বিষ দাঁতগুলো বেশ বড়। ভাঁজ করা থাকে। ছোবল মারার সময় ওরা দাঁতগুলোকে খাড়া করে ফেলে। ফলে আক্রমণের সময় গভীরে বিষ পৌঁছে দিতে পারে। ২.৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বিষ দিতে পারে। চন্দ্রবোড়া কামড়ালে তীব্র ব্যথা হবে। ক্রেইট বা কালাচ বা শঙ্খিনির কামড়ে তো বলতে গেলে তেমন ব্যথা হয় না। কারণ ওদের বিষদাঁতগুলো ছোট। চন্দ্রবোড়ার কামড় দেওয়ার সময় একটা বা দুটো দাঁত বসাতে পারে। প্রচণ্ড ব্যথা হয়ে দংশনকৃত জায়গা ফুলে যায়। এটা রক্তজমাট বাধা প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটায় বলে শরীরের যেকোনো জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। রক্ত বমি, প্রস্রাবের রং কালো হওয়া, শ্বাসকষ্ট, চোখের পাতা ফুলে যাওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়াসহ তাত্ক্ষণিক অনেকগুলো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। সাপ কামড়ালে ওঝা, বৈদ্য নয় দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। </p> <p><strong>কালের কণ্ঠ : সর্পদংশনের চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে অনেক ভুল ধারণা আছে। </strong><br /> আবুল ফয়েজ : সর্পদংশনের পর অনেকে গিঁট দিয়ে থাকে। এটি অবৈজ্ঞানিক। গিঁট উপকারের বদলে ক্ষতি করে। আপনি যদি জোড়ায় শক্ত করে গিঁট দেন, তাহলে তো রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটে, রোগীর নার্ভে চাপ পড়ে প্যারালিসিস হতে পারে। গিঁট দেওয়া স্থানে পচনও ধরতে পারে। চন্দ্রবোড়ার বেশির ভাগ দংশন হয় পায়ে অথবা হাতে। বিজ্ঞান বলে, গিঁট নয়, আপনি অঙ্গটিকে অচল করে দিন। অর্থাত্ হাতে দংশন করলে হাতটি নাড়াবেন না, পায়ে দংশন করলে পা নড়াচড়া করবেন না। হাত বা পা ভাঙলে যেভাবে কাঠের টুকরা বা চেলা আর গামছা দিয়ে জায়গাটিকে পেঁচিয়ে রেখে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়, এ ক্ষেত্রেও তা করতে হবে। পায়ে দংশন করলে রোগীকে হাঁটতে দেওয়া যাবে না। কোলে করে গাড়িতে তুলতে হবে। এটিই হচ্ছে সাপে কামড়ের প্রাথমিক চিকিৎসা। অপচিকিৎসা নিতে গিয়ে সময়ক্ষেপণ করা, দেরিতে হাসপাতালে আসাই মৃত্যুর বড় কারণ।<br />  <br /> অনেকে দংশনের জায়গায় কেটে বা ফুটো করে বিষ বের করারও চেষ্টা করে। যেখানে রক্ত জমাট বাঁধা প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটছে, রক্তক্ষরণ অনেকক্ষণ চলছে; সেখানে যদি কাটাকুটি করে বিষ বের করার চেষ্টা করে, তাহলে রোগী তো রক্তক্ষরণের ফলেই মারা যাবে। কাজেই আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।</p> <p><strong>কালের কণ্ঠ : অনেকে সাপ প্রতিরোধে কার্বলিক এসিড বা রাসায়নিক ব্যবহার করেন। এটির আদৌ দরকার আছে? </strong><br /> আবুল ফয়েজ : এটি হাস্যকর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাউথ ইস্ট এশিয়া রিজিয়নের কর্মকৌশলে পরিষ্কার বলা আছে—আজ পর্যন্ত এমন কোনো কেমিক্যাল আবিষ্কৃত হয়নি, যেটি সাপকে আসতে নিরুৎসাহ করতে পারে। বরং এসব রাসায়নিক শিশু এবং পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে।</p> <p><strong>কালের কণ্ঠ : দেশে চন্দ্রবোড়া নিধনের ব্যাপক আয়োজন চলছে। আপনার বক্তব্য কী?</strong><br /> আবুল ফয়েজ : অনেকে সাপ মারার জন্য বলছে। কেউ কেউ পুরস্কারও ঘোষণা করেছে। এটি অন্যায়। সাপ তো মানুষের অনেক উপকারও করে। ১৮৮০ সালের দিকে ব্রিটিশ ভারতে সাপ মারা নিয়ে একটি কর্মসূচি ছিল। স্নেক কিলার নামে একটি পদই ছিল তখন মহকুমাগুলোতে। তাদের জন্য মোটা অংকের বাজেটও ছিল। একেক ধরনের সাপ মারলে একেক রকম পুরস্কার দেওয়া হতো। বছর দুয়েক পরে সরকার ব্যর্থ এই প্রকল্প থেকে সরে আসে। কাজেই মানুষকে বলতে হবে সাপ না মেরে বন্য প্রাণী অধিদপ্তরসহ স্নেক রেসকিউ টিমকে খবর দিতে। </p> <p><strong>কালের কণ্ঠ : সাপের কামড় থেকে বাঁচতে মানুষকে কোন কোন বিষয় মেনে চলতে বলবেন?</strong><br /> আবুল ফয়েজ : খালি পায়ে নয়, কৃষকদের ক্ষেতে কাজ করার সময়ে গামবুট পরতে উৎসাহিত করতে হবে। ঘাসের ভেতর, আইলে বা ঝোপঝাড়ের ভেতর সাবধানে হাঁটতে হবে। রাতে চলাচলের সময় সঙ্গে যেন টর্চলাইট এবং লাঠি থাকে। লাঠি সাপ মারার জন্য নয়, মাটিতে ঠুক ঠুক শব্দ করার জন্য, যাতে সাপ সরে যায়। আঙিনাসহ বসতবাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। স্তূপাকৃতির জিনিস, বিশেষ করে পতিত গাছ, খড়, লাকড়ি, ইট, উইপোকার ঢিবি—এগুলো সরানোর সময় সতর্ক থাকতে হবে। গর্তে বা ফাটলে হাত দেওয়া যাবে না। </p> <p><strong>কালের কণ্ঠ : দেশের উপজেলা পর্যায়ে সব হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম আছে?</strong><br /> আবুল ফয়েজ : প্রতিটি উপজেলায় দুই ডোজ মানে ২০ ভায়াল, সিভিল সার্জন এবং জেলা হাসপাতালে পাঁচ ডোজ, মেডিক্যাল কলেজে ১০ ডোজ—এভাবে অ্যান্টিভেনম থাকার কথা। দুর্ভাগ্যবশত এ দেশে ওপর থেকে দিতে হয়, নিজেরা চায় না। অ্যান্টিভেনম মেয়াদোত্তীর্ণ হলে হাসপাতালগুলো এটি প্রয়োগ করতে চায় না, যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বলা আছে—নিরুপায় হলে মেয়াদোত্তীর্ণ অ্যান্টিভেনমও প্রয়োগ করা যেতে পারে।  অনেক হাসপাতালে এন্টিভেনম আছে। ব্যবহার করতে পারছে না বলে অনেক ক্ষেত্রে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। </p> <p><strong>কালের কণ্ঠ : সর্প দংশন রিপোর্টেবল ডিডিজ? দেশে এ সংক্রান্ত কোনো কর্মকৌশল প্রণীত হয়েছে?</strong><br /> আবুল ফয়েজ :  না। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও সুপারিশ করেছে। কিন্তু আমাদের এখনো কর্মকৌশল পাশ হয়নি। এবার ভেনম রিসার্চ সেন্টার একটা ম্যাপ তৈরি করেছে। যেখান থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় কোথায় কোথায় রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব বেড়েছে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আরো একটা ম্যাপ ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেটা সঠিক নয়।</p> <figure class="image"><img alt="৬৪৫৭৫৬" height="600" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/timir/1/kalerkantho (2).jpg" width="1000" /> <figcaption>এ বছর যেসব জেলায় রাসেলস ভাইপারের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ম্যাপ : ভেনম রিসার্চ সেন্টার, বাংলাদেশ</figcaption> </figure> <p><strong>কালের কণ্ঠ : কোন জায়গায় কত অ্যান্টিভেনম দরকার হতে পারে—এসংক্রান্ত নির্ভরযোগ্য তথ্য কি আছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে?</strong><br /> আবুল ফয়েজ : এটির যথাযথ ম্যাপিং করা দরকার। ২০২২ সালের জরিপ বলছে, বছরে চার লাখ মানুষকে সাপে কাটে। সাড়ে সাত হাজার মারা যায়। আসলে প্রকৃত তথ্য আমরা জানি না। আমাদের রেকর্ড সিস্টেম অত্যন্ত দুর্বল। সাপ ও সর্পদংশনের সঠিক তথ্য ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। বলা হয়ে থাকে সাপের নজরদারিই সর্প দংশন প্রতিরোধের মূল ব্যাপার। তাহলে বুঝতে পারবেন, কোথায় কত সাপ আছে। সেখানে কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে। সাপ ও সর্পদংশনের নজরদারিভিত্তিক তথ্যের ঘাটতি আছে আমাদের। ফলে কেউ জানে না আমাদের কত অ্যান্টিভেনম লাগতে পারে। কারণ এসংক্রান্ত নির্ভরযোগ্য কোনো পরিসংখ্যান নেই। এখন আমরা কয়েকজন বসে একটি অনুমাননির্ভর পরিসংখ্যান দাঁড় করাচ্ছি। এটি ঠিক নয়। </p> <p>সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করে এটাকে সহজলভ্য করতে হবে। যেমন রোগী বন্ধের দিন বা গভীর রাতে এলো। তখন রোগী এন্টিভেনম পেল কিনা সেটা জরুরি। দরকার হলে সেটা জরুরি বিভাগে রাখতে হবে। মানুষকেও জানাতে হবে যে এই হাসপাতালে এন্টিভেনম আছে। সরকারি হাসপাতালে পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালেও সর্পদংশনের রোগীর চিকিৎসা দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে।<br />  <br /> আমি গত ৩০ বছর ধরে এসব কথা বলে আসছি। তবে আশার কথা হলো, এখন অনেক উপজেলায় এন্টিভেনম দিচ্ছে। রোগীর তথ্য লিপিবদ্ধ হচ্ছে। তবে উপজেলা পর্যায়ে এন্টিভেনমের সঙ্গে আরো কিছু রুটিন টেস্ট ও আনুষঙ্গিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকা দরকার।<br />  <br /> <strong>কালের কণ্ঠ : এন্টিভেনম তো পুরোপুরি আমদানি নির্ভর। দেশে এর উৎপাদন কতদূর?</strong><br /> আবুল ফয়েজ : হ্যাঁ। যে দেশে যে সাপ আছে, সেখানে সেই সাপের বিষ দিয়েই অ্যান্টিভেনম তৈরি করতে হয়। আমাদের দেশে অ্যান্টিভেনম আনা হয় ভারত থেকে। আমরা এখন চেষ্টা করছি দেশি সাপের বিষ সংগ্রহ করে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে, যাতে সরকারিভাবে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা যায়। সরকার এগিয়ে না এলে এটা কঠিন। এসেনসিয়াল ড্রাগস কম্পানি বা পাবলিক-প্রাইভেট প্রকল্পের মাধ্যমে এটা করতে হবে। </p> <p><strong>কালের কণ্ঠ : সরকারি পর্যায়ে এই মুহুর্তে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন?</strong><br /> আবুল ফয়েজ : সর্প-দংশনপ্রবণ এলাকাগুলোতে গত দুতিন বছর ধরে ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এখন এর পরিধি বাড়ানো দরকার। প্রত্যেক জেলা এবং উপজেলায় একটা টিম ধরে প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। ডাক্তার, নার্স এবং মেডিক্যাল অ্যাসিসট্যান্ট—তিনজনের টিমকে বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ের মেডিক্যাল কলেজে প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। এটাকে কাসক্রেড ট্রেনিং বলে। এই টিম গিয়ে নিজ নিজ উপজেলায় অন্য ডাক্তার, নার্স যারা আছেন তাদের প্রশিক্ষণ দেবেন। প্রয়োজনে এটা অনলাইনেও করা যেতে পারে।</p> <p><strong>কালের কণ্ঠ : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।</strong><br /> আবুল ফয়েজ : কালের কণ্ঠকেও ধন্যবাদ।</p>