<p>ভাইব্রেটর বা যৌন খেলনা এখন পশ্চিমা সমাজের মূলধারায় এসে গেছে। কিন্তু এটা কি একটা নেশায় পরিণত হয়েছে? ২১ বছর বয়সে তরুণী লিয়ান (ছদ্মনাম) তার প্রথম ভাইব্রেটরটি কিনেছিলেন বার্মিংহ্যাম থেকে। শহরটির কাছেই এক ছোট্ট গ্রামের মেয়ে তিনি।</p> <p>তার ভাষায়, 'জিনিসটা বড় দারুণ দেখতে, পাথুরে রঙ, আর গোলাপী-সোনালী বোতাম। এটা দেখতে মোটেও পুরুষাঙ্গের মতো নয় - বরং বেশ অভিজাত চেহারার।'</p> <p>তার বয়স তখন ২১ হয়ে গেছে। ১৭ বছর বয়সে কুমারীত্ব হারানোর পর বেশ কয়েকজন ছেলেবন্ধুর সাথে যৌন সম্পর্ক হয়েছে তার। কিন্তু কখনো চরম যৌনতৃপ্তি বা অরগ্যাজম হয় নি। সেক্স তার ভালো লাগত, কিন্তু সেটা ছিল ভিন্ন এক ধরণের আনন্দ - কারো সংগে দেখা হওয়া, কারো প্রতি আকৃষ্ট হওয়া, বা কাউকে আকৃষ্ট করা - এগুলোই ছিল মূল উত্তেজনা, কিন্তু অরগ্যাজম কখনো হয় নি, বলছিলেন লিয়ান।</p> <p>একসময় তার মনে দুশ্চিন্তা দেখা দিতে শুরু করল। তিনি নিজের জন্য লজ্জিত বোধ করতেন, যে কেন তার এটা হচ্ছে না! অথচ তার বন্ধুরা এমনভাবে এ নিয়ে গল্প করতো যে প্রতিবারই তাদের চরমতৃপ্তি পাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তিনি ব্যাপারটা খুলে বললেন তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছে।</p> <p>তার ভাষায়, 'সেই বন্ধুটি আমাকে বললেন, তোমার কখনো এটা হয় নি কারণ তুমি কখনো স্বমেহন করো নি। তুমি যদি ব্যাপারটা কি সেটাই না জানো, তাহলে তোমার তো সমস্যা হবেই।'</p> <p>তখন লিয়ান ঠিক করলেন, তাকে কিছু একটা করতে হবে। এক শনিবার বিকেলে তিনি চলে গেলেন শহরে, কিনে আনলেন ভাইব্রেটর।সেটা ব্যবহার করে তার প্রথম যে অভিজ্ঞতা হলো তাতে তিনি চমৎকৃত হয়ে গেলেন। তিনি অরগ্যাজমের স্বাদ পেয়েছেন‌।</p> <p><strong>ভাইব্রেটর কি মেয়েদের দুশ্চিন্তা-উদ্বেগ কাটাতে কাজে লাগে?</strong></p> <p>ভিক্টোরিয়ান যুগ থেকেই ইংল্যান্ডে ভাইব্রেটর নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। নারীদের হিস্টিরিয়ার প্রতিষেধক হিসেবে ডাক্তাররাই উদ্ভাবন করেছিলেন এই ভাইব্রেটর। হিস্টিরিয়া বলতে মূলত 'উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হওয়া' বোঝায় কিন্তু তার সাথে রোগিনীর মধ্যে আরো কিছু লক্ষণ দেখা যায়। ডাক্তাররা মনে করতেন চরম যৌনতৃপ্তির মধ্যে দিয়ে এর চিকিৎসা করা যায়।</p> <p>লিয়ান নিজেও ব্যাপারটা বুঝতে পারেন। তার কথা: 'যেহেতু এখন আমার নিয়মিত অর্গ্যাজম হচ্ছে তাই আমার দুশ্চিন্তা অনেক কমে গেছে।'</p> <p>তবে আগেকার যুগে ভাইব্রেটর ছিল একটা গোপন ব্যাপার। কিন্তু আশির দশকে 'র‍্যাবিট' নামে যে ভাইব্রেটর চালু হলো; তার পরই জিনিসটা সমাজের মূলধারায় উঠে আসে।</p> <p><strong>যৌন খেলনা থেকে সাংস্কৃতিক প্রতীক?</strong></p> <p>সুইডেনের সেক্স টয় ব্র্যান্ড লেলো-র গ্লোবাল ব্র্যান্ড ম্যানেজার স্টুয়ার্ট নুজেন্ট বলেন, এর আগে যৌন খেলনা বা সেক্স টয়গুলো ছিল মাংসল, গোলাপি, এবং অশ্লীল, যে কারণে বহু লোকই এগুলো কিনতে চাইতেন না অনেকটা প্রাণীর মতো দেখতে র‍্যাবিট ভাইব্রেটর কম্পন সৃষ্টির মাধ্যমে কাজ করে। 'সেক্স এ্যান্ড দি সিটি' নামে যে মার্কিন টিভি সিরিয়াল সারা দুনিয়ায় জনপ্রিয় হয় - তাতে ১৯৯৮ সালে একটি পর্ব উৎসর্গ করা হয় এই র‍্যাবিটের উদ্দেশ্যে। এর মাধ্যমে এই 'র‍্যাবিট' যৌন খেলনা থেকে সাংস্কৃতিক প্রতীকে পরিণত হয়।</p> <p>ভাইব্রেটর সমাজের মূলধারায় চলে আসার সাথে সাথে অনেক কিছুতেই পরিবর্তন হতে শুরু করে। ২০২০ সাল নাগাদ প্রাপ্তবয়স্কদের খেলনার বাজার ২ হাজার ৯শ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হয়। এখন নানা রকম ভাইব্রেটর বাজারে এসে গেছে। স্টুয়ার্ট বলছিলেন, 'সোনা' নামে তাদের নতুন ভাইব্রেটরে শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে কম্পন সৃষ্টি করা হয়। এসব ভাইব্রেটর অবশ্য খুব সস্তা নয়।প্রতিটির দাম হবে ১২০ পাউন্ডের মতো। সবচেয়ে দামি যে ভাইব্রেটরের কথা জানা যায় তা হীরে-বসানো, এবং দাম দশ লাখ পাউন্ড।</p> <p><strong>যৌন খেলনা কি আসক্তি তৈরি করে?</strong></p> <p>ব্রিটেনের সুপারস্টোরে যে ভাইব্রেটর পাওয়া যাবে তা সম্ভবত এত দামি হবে না, এগুলো বিক্রি হবে ৮ থেকে ১৫ পাউন্ডের মধ্যে।লিয়ান বলছিলেন, 'আমি আমার বিছানায় ভাইব্রেটরটা রাখতাম এবং প্রতিদিনই ওটা ব্যবহার করতাম। আমার মনে হয়েছিল, যৌন অনুভূতির দিক থেকে এটা ছিল একটা খুবই ইতিবাচক পদক্ষেপ। '</p> <p>কিন্তু ৭ বছর পর এখন লিয়ান সেই জিনিসটাই ব্যবহার করছেন সপ্তাহে কয়েকবার। কিন্তু এখন তার মনে প্রশ্নের উদয় হচ্ছে যে যৌনতৃপ্তির জন্য তিনি কি ওটার ওপর নির্ভরশীল বা ওটাতে 'আসক্ত' হয়ে পড়ছেন ? কারণ ঠিক ওই ভাইব্রেটরটি ছাড়া এবং ওই একই ভঙ্গিতে ছাড়া অন্য কোনভাবে তিনি অরগ্যাজম লাভ করতে পারছেন না। তার ভাষায়, 'মনে হচ্ছে যেন আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছে গেছি, কিন্তু তার পর আর আগে বাড়তে পারছি না।'</p> <p>ব্রিটেনের রয়াল কলেজ অব অবস্ট্রেট্রিশিয়ানস এ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টস এর ড. লেইলা ফ্রডসহ্যাম বলেন, 'কোন নারী যদি মাত্র একটি যৌন খেলনা, বা একটি মাত্র শারীরিক পজিশনে অরগ্যাজম লাভ করতে পারেন - এতে দুশ্চিন্তার কিছুই নেই। একজন নারী একাধিক উপায়েই এ তৃপ্তি লাভ করতে পারেন।'</p> <p>ভেনাস হচ্ছেন একজন সেক্স টয় পরীক্ষক। তিনি বলছেন, তিনি এ ক্ষেত্রে তার ফ্যান্টাসি বা যৌন-কল্পনাকে ব্যবহার করেন।আগে তিনি দিনে ৫/৬ বার স্বমেহন করতেন । কিন্তু এখন তিনি করেন দিনে একবার- ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা ধরে। তার ভাষায়, তার কাছে অভিজ্ঞতাটা অনেকটা 'মেডিটেশন' বা ধ্যানের মতো।</p> <p>লিয়ানের বয়স এখন ২৮, তার এখনকার সঙ্গীর সাথে তিনি আছেন ৫ বছর ধরে। তার যৌন জীবনে তিনি সুখী, 'আমি ভেবেছিলাম আমার সঙ্গী হয়তো এই ভাইব্রেটর নিয়ে কোন সমস্যা বোধ করবে। কিন্তু তেমন কিছু হয় নি। ওটা আমরা যৌনমিলনের আগে ব্যবহার করি।'</p> <p>এখন, এটা স্পষ্ট করা দরকার যে বিশেষজ্ঞদের মতে এরকম কোন কিছু শারীরিকভাবে হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু মাত্র একটি যৌন খেলনার প্রতি আসক্তির কথা শুধু যে লিয়ান একাই বলছেন সেটাও নয়। ২০১৬ সালে 'ডেড ভ্যাজাইনা সিনড্রোম' নামে একটা রোগের কথা বলা হচ্ছিল। বলা হচ্ছিল মহিলারা অতিমাত্রায় ভাইব্রেটর ব্যবহার করলে এরকম অনুভূতিহীনতা সৃষ্টি হতে পারে। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রচুর হৈচৈ হয়, কিন্তু মেডিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে এর কোন প্রমাণ মেলে নি।</p>