<p style="text-align:justify">প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরে নির্বাচন হবে। রাজনৈতিক দলগুলোও এ বিষয়ে একমত হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে সংস্কারসংক্রান্ত কমিশনগুলোর প্রস্তাব পাওয়া যাবে। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হবে। সংস্কারের কাজগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">গতকাল বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব তথ্য জানান। এ সময় তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম।</p> <p style="text-align:justify">এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। দেশের ছয়টি সেক্টরের সংস্কার নিয়ে ছয়টি কমিশন গঠন বিষয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন উপদেষ্টা রিজওয়ানা। তিনি বলেন, এই কমিশনগুলোর কার্যপরিধি এখনো ঠিক করা হয়নি। তারা প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করবে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই কমিশনগুলোতে সাচিবিক সহায়তা দেবে।</p> <p style="text-align:justify">প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ সম্মেলন শেষে টার্ম অব কন্ডিশন ঠিক করা হবে। কমিশনগুলোর প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে অন্যান্য সদস্য ঠিক করা হবে।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘আশা করছি, তিন মাসের মধ্যে কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন দিতে পারবে।’ এরশাদ সরকারের সময় এ ধরনের কমিশন করা হয়েছিল। কিন্তু ওই কমিশনের প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি।</p> <p style="text-align:justify">এবারও কি তেমনটি হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা বলেন, ‘এরশাদ সাহেবের সময় আর এবারের বাস্তবতা ভিন্ন, পরিপ্রেক্ষিতটাও ভিন্ন। কিন্তু এই প্রতিবেদন আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না—সেটা নির্ভর করবে রাজনৈতিক ঐক্য আমরা কতটা গড়ে তুলতে পারি, তার ওপর। এ জন্য সংস্কারের বিষয়ে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোরও মতামত চাচ্ছি। আর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও নিশ্চয়ই এ উপলব্ধি আসছে।’</p> <p style="text-align:justify">সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এরশাদ সরকার করে যেতে পারেনি, তার ফল কী হয়েছে—এটা রাজনৈতিক দলগুলো দেখেছে। তারাও (রাজনৈতিক দল) কোনো সংস্কার করেনি। এর ফল কী হয়েছে, সেটাও ৫ আগস্ট জাতি দেখেছে। কোনো রাজনৈতিক দল নিশ্চয়ই অজনপ্রিয় হয়ে আবার একই রকম ফলাফল দেখতে চাইবে না।</p> <p style="text-align:justify">এ জন্য প্রথম থেকেই আমরা মতবিনিময়ে তাদের (রাজনৈতিক দল) অন্তর্ভুক্ত করেছি। এক পর্যায়ে আমরা সংলাপে যাব। ওই সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক মতৈক্য গড়ে সংস্কার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে তারপর আমরা নির্বাচনের কথা ভাবছি। রাজনৈতিক দলগুলো এরই মধ্যে স্পষ্ট করেছে যে আগে সংস্কার এবং পরে তারা নির্বাচনে যেতে চায়।’</p> <p style="text-align:justify">শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে আলোচনা : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বৈঠকে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, বিচারের স্বার্থে গণহত্যার যে অভিযোগটা আছে, অত্যাচার-নিপীড়ন এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার মুখপাত্র হিসেবে তাঁকে (শেখ হাসিনা) বিচারে থাকতে হবে। কারণ এখানে দায়দায়িত্বের একটা ব্যাপার আছে। সে কথা বলা হয়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাঁকে ফেরানোটা কোন প্রক্রিয়ায় হবে, দুই দেশের (বাংলাদেশ-ভারত) মধ্যে কী কথা হবে, সেটা পরে, যখন আইনি প্রসেসটা শুরু হবে, সে প্রক্রিয়াটা আমরা দেখব।’</p> <p style="text-align:justify">এ সময় বৈদেশিক নীতি নিয়েও কথা বলেন রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘আমরা গত ১৫ বছর বেশির ভাগ মানুষই এ দেশে ছিলাম। বাস্তবতাটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমাদের চেষ্টা হবে পাশের দেশ এবং সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখা। তবে সেটা হতে হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে। এটা বারবার ক্লিয়ার করা হয়েছে। এখানে নতজানু নীতির কোনো বিষয় নেই।’</p> <p style="text-align:justify">এ সময় অন্য এক প্রশ্নের জবাবে শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘শ্রমিক অসন্তোষ হচ্ছে, ক্লোজলি লুক আফটার করছে পর্যালোচনা কমিটি। শ্রমিক ভাইদের বলব, কমিটির কাছে অভিযোগ দিন, আমরা সমাধান করতে পারব। আশা করি, দ্রুত এটার সমাধান হবে। কিছু রিপোর্ট পেয়েছি, অনেক অর্ডার ক্যানসেল হচ্ছে, কিছু দেশ এই অর্ডার নিয়ে নিচ্ছে। কোনো শ্রমিক তাঁর ফ্যাক্টরিতে হামলা করেননি। বেকার যুবসংঘের নামে যারা করছে, এটা নিয়ে ষড়যন্ত্র আছে।’</p> <p style="text-align:justify">জলবায়ু ফান্ডে থাকা টাকা নিয়েও সংবাদ সম্মেলনে কথা হয়। এ প্রসঙ্গে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডে ৮৭৩ কোটি টাকা রাখা হয়েছিল। টাকাটা পদ্মা ব্যাংক দিতে পারছে না। এ ব্যাপারে কী করব, অর্থ মন্ত্রণালয়কে বলা হবে। এ বিষয়ে একটা রোডম্যাপ তৈরি করা হবে।’</p> <p style="text-align:justify">উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে লোডশেডিং সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে লোডশেডিং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।</p> <p style="text-align:justify">পদ্মা ব্যাংক থেকে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের স্থায়ী আমানত তুলতে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে পথ-নকশা প্রণয়ন করবে।</p> <p style="text-align:justify">প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমান পদ্মা ব্যাংক) লিমিটেড কর্তৃক জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের স্থায়ী আমানত পাওনা পরিশোধ না করায় উদ্ভূত সমস্যাসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থার সমধর্মী সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ, অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধির সমন্বয়ে আলোচনাপূর্বক অর্থ আদায়ের সুনির্দিষ্ট পথ-নকশা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রণয়ন করবে।</p> <p style="text-align:justify">জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট (বিসিসিটি) গঠন করা হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত অর্থ বিভাগ থেকে ট্রাস্টের পরিচালন ব্যয় নির্বাহের জন্য ১০৫ কোটি টাকা এবং এর অধীন বিসিসিটি ফান্ডে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত তিন হাজার ৯৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়।</p> <p style="text-align:justify">বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ট্রাস্টের অর্থ ব্যাংকে মেয়াদি আমানত হিসেবে জমা রেখে অর্জিত সুদ থেকে ট্রাস্ট পরিচালনা এবং ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থের অর্জিত সুদ থেকে প্রতিবছর প্রকল্প গ্রহণ ও ব্যয় নির্বাহ করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমান পদ্মা ব্যাংক) লিমিটেডের বিভিন্ন শাখায় ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিসিসিটি ও ট্রাস্ট ফান্ড থেকে এক বছর মেয়াদে স্থায়ী আমানত হিসেবে ৫৯৭ কোটি ৬২ লাখ ৫২ হাজার ২৫২ টাকা রাখা হয়। ২০২৪ সালের  ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৯-৯.৫% সুদ হারে আসলসহ ব্যাংকের কাছে পাওনা ৮৭৩ কোটি ৮১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৫৩ টাকা।</p>