<p style="text-align:justify">সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যার রুদ্ররূপ দেখল দেশের মানুষ। বন্যার প্রকোপ এখনো পুরোপুরি কাটেনি। এখনো বন্যাক্রান্ত সব এলাকা থেকে পানি নামেনি। এরই মধ্যে যেসব এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে, সেখানে সড়কের ক্ষত স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তবে এখনো পুরো ক্ষতি নির্ধারণ করতে পারেনি সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।</p> <p style="text-align:justify">প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত ২০ থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত বন্যায় আট হাজার কিলোমিটারের বেশি সড়ক এবং এক হাজার ১০১টি সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় মহাসড়ক ১০৮ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক ১২৪ কিলোমিটার, জেলা সড়ক ৫৩৪ কিলোমিটার এবং গ্রামীণ সড়ক সাত হাজার ৭২২ কিলোমিটার।</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া এক হাজার ১০১টি সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব হিসাবের বাইরে আরো অনেক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র কালের কণ্ঠকে ক্ষতির পরিমাণের একটি ধারণা দিয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই হিসাব এখনই চূড়ান্ত করা সম্ভব নয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে। এখনো অনেক সড়কে পানি। পানি পুরোপুরি না সরলে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ বোঝা যাবে না। আবার ক্ষয়ক্ষতি কতটা গভীর, তার ওপর নির্ভর করবে মেরামতের ধরন। সেই সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়াতে পারে।</p> <p style="text-align:justify">জানতে চাইলে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব (কানেক্টিভিটি) মো. আব্দুল মোক্তাদের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বন্যার পানি অনেক লম্বা সময় ছিল, যেটা ঝুঁকির বড় কারণ হতে পারে। টেকনিক্যাল টিম (কারিগরি দল) পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিলে ক্ষতির প্রকৃত চিত্র বুঝতে পারব। মেরামত কোন পর্যায়ে করতে হবে, সেটিও ক্ষতির অবস্থার ওপর নির্ভর করছে। এখনো বন্যার পানি যায়নি। ফলে আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে।’   </p> <p style="text-align:justify">দেশের পূর্বাঞ্চলে অতিবৃষ্টি ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা দেখা দেয়। বন্যায় সিলেট, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের সড়ক নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যায় গত বুধবার পর্যন্ত মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির সড়ক বিভাগ থেকে অন্তত ১৫৭টি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রাথমিক প্রতিবেদন পাওয়া গেছে।</p> <p style="text-align:justify">সওজের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৭৭৩.৪৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ১০৭.০৫ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ১২৩.৭৪ কিলোমিটার এবং জেলা মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৫৪২.৬৬ কিলোমিটার।</p> <p style="text-align:justify">বর্তমানে ২২টি সড়কে যান চলাচল বন্ধ আছে। এর মধ্যে ১৯টি সড়ক পানির নিচে থাকায় যান চলাচল বন্ধ আছে, তিনটি সড়কে কালভার্ট ওয়াশ আউট হওয়ায় যান চলাচল বন্ধ আছে। প্রবল বন্যায় বিভিন্ন সড়কে আংশিকভাবে ওয়াশ আউট হয়েছে, সড়ক বাঁধ ধসে পড়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অংশে সড়কের উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, রক্ষাপ্রদ কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">এক প্রশ্নের জবাবে সওজ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, কত টাকার ক্ষতি হলো সেটা পরিমাপ করতে আরো সময় লাগবে। একেক অংশে ক্ষতির ধরন একেক রকম। বন্যার পানি পুরো নেমে গেলে আর্থিক ক্ষতি নির্ণয় করা সম্ভব হবে। যেসব মেরামত আমরা নিজেরা করতে পারব, সেগুলো নিজেরাই করে ফেলব। বাকিটা প্রয়োজনে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে মেরামত করানো হবে।     </p> <p style="text-align:justify">ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশ এবং ফেনীর লালপোলে প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়ক পানিতে তলিয়ে ছিল। এখন পানি নেমে গেছে। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এ মহাসড়কে জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের কাজ চলছে। যান চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ি সড়কে ভূমিধসের কারণে যোগাযোগ ব্যাহত হয়, যা বিভাগীয়ভাবে মেরামত করা হয়েছে। সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা সমুন্নত রাখতে সব সড়ক বিভাগ পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে বিভাগীয়ভাবে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করছে। পানি পুরোপুরিভাবে নেমে যাওয়ার পর মেরামতের চাহিদা পূর্ণাঙ্গভাবে নির্ণয় করা যাবে।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে এলজিইডির তথ্য বলছে, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় প্রাথমিকভাবে সাত হাজার ৭২২ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া এক হাজার ১০১টি সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার সড়ক এবং ৯৬টি সেতু ও কালভার্ট মেরামত করেছে এলজিইডি।</p> <p style="text-align:justify">মেরামত প্রসঙ্গে যোগাযোগ ও অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামছুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডরে ব্যাপক বিনিয়োগ হয়েছে। এর পরও বন্যার ক্ষতিতে বোঝা যাবে কোন মানের সড়ক কেমন টিকে থাকে। সেটা বিবেচনা করে মেরামত করতে হবে। মেরামতে এখনই ভারী বিনিয়োগ না করে শুষ্ক মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করা দরকার। আপাতত অল্প খরচে মেরামত করা উচিত। কারণ নিচে পানি আছে। এই মেরামত দীর্ঘ মেয়াদে টিকবে না। আর গুরুত্বপূর্ণ এই করিডরে নামমাত্র মেরামত না করে পুনর্বাসনমূলক বিনিয়োগ করা দরকার।</p>