<p>উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে তাদের দাবিদাওয়া দীর্ঘদিন ধরেই জানিয়ে আসছে। কিন্তু সে দাবি পূরণের কোনো পথ দেখছেন না তারা। ফলে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কর্মরত জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য মূলত তাদের দাবি আলোর মুখ দেখছে না। </p> <p>এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) ৯ জনের একটি প্রতিনিধিদল বাহিনীটির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চারটি দাবি জানিয়েছে।<br />  <br /> দাবিগুলোর হলো- দীর্ঘদিনের চাওয়া তাদের নবম গ্রেডে আনা, উপজেলায় বরাদ্দগুলো সঠিকভাবে দেওয়া, বছরে বাহিনী প্রদানের সঙ্গে দুইবার মতবিনিময়সভার আয়োজন করা ও সিরিমোনিয়াল ড্রেস পরিধানের ব্যবস্থা করা।</p> <p>এ বিষয়ে বাহিনীটির সদর দপ্তর সূত্র জানায়, দাবিগুলো মহাপরিচালক ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন। এর মধ্যে নবম গ্রেডের বিষয়টি একটি চলমান প্রক্রিয়া, এ নিয়ে কাজ চলছে। এ ছাড়া অন্য দাবিগুলো পর্যায়ক্রমে পূরণ করা হবে।<br />  <br /> উপজেলার দায়িত্বে থাকা অনন্ত ১০ জন কর্মকর্তার সঙ্গে  কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা পর্যায়ের অধিকাংশ বরাদ্দ জেলা কোডে দেওয়া হয়। সেখান থেকে বেশির ভাগ বরাদ্দ জেলা কর্মকর্তারা উপজেলায় দেন না বলে দাবি করেন তারা। আর সেখানে জেলা আনসার কার্যালয়ের হিসাবরক্ষকদের সহায়তায় বরাদ্দ, যত্রতত্র বদলিসহ নানা অনিয়মের কাজ সম্পন্ন করা হয়। দেশের প্রায় জেলায় এই চিত্রই বলে তারা দাবি করছেন।<br />   <br /> সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাহিনীটির তৃণমূল পর্যায়ের প্রাণ উপজেলা কার্যালয় হলেও বরাদ্দ অপ্রতুল। স্থায়ীয় পর্যায়ের সব কাজই উপজেলার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, অথচ ভাতাসংক্রান্ত আর্থিক সব বিষয় জেলা থেকে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে আনসার-ভিডিপি সদস্যরা তাদের ভাতা উত্তোলনের জন্য উপজেলাকে পাশ কাটিয়ে জেলায় ধরনা দেয়।<br />  <br /> বিভিন্ন উপজেলায় কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর আনসারের জেলা কার্যালয়ে বিভিন্ন জাতীয় দিবস, দুই ঈদ, মাহফিল ও জাতীয় সমাবেশ উপলক্ষে একটা বড় অংশ বরাদ্দ দিলেও তার অনেক উপজেলায় তা পৌঁছায় না। হাতে গোনা কিছু উপজেলায় বরাদ্দ দিলেও তা প্রকৃত খরচের তুলনায় কম।<br />  <br /> নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুলনা রেঞ্জের অধীন এক উপজেলা কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন ও দুর্গাপূজার আনুষঙ্গিক খরচের বরাদ্দ জেলা কমান্ড্যান্টদের অনুকূলে দেওয়া হয়। কিন্তু জেলা কর্মকর্তারা আনুষঙ্গিক খরচের অর্থ উপজেলায় অর্ধেক কিংবা এক-তৃতীয়াংশ দেন। আবার অনেক জেলায় এক টাকাও দেন না। অথচ নির্বাচন ও দুর্গাপূজা উপলক্ষে উপজেলাভেদে ৪০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।<br />  <br /> জানা যায়, উপজেলা নির্বাচন শেষ হয়েছে প্রায় তিন মাস। কিন্তু কুড়িগ্রামসহ অনেক জেলা কমান্ড্যান্ট এখনো নির্বাচনের আনুষঙ্গিক ও তদারকি ভাতা উপজেলা কর্মকর্তাদের দেননি। আরেক জেলা কমান্ড্যান্ট বই লিখে উপজেলা কমকর্তাসহ আনসার-ভিডিপি সদস্যকে সেই বই কিনতে বাধ্য করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।</p> <p>একাধিক উপজেলা কর্মকর্তা বলেন, এসব বরাদ্দের কথা জানতে চাইলে তারা বলেন, বরাদ্দ কী দিয়েছে? দিলেও ছয় থেকে ১০ হাজার টাকা দেন। তখন উপজেলা অফিসাররা সদস্যদের কাছ থেকে ডিউটি বাবদ ২০০ থেকে ৪০০ টাকা করে নিয়ে তারপর ডিউটি দেন। অথচ নির্বাচন,পূজার সব কাজই উপজেলা কর্মকর্তারা করেন। সংশ্লিষ্ট হিসাবরক্ষকের কাছে জানতে চাইলে বলেন, এখনো বরাদ্দ আসেনি সদর দপ্তর থেকে।</p> <p>উপজেলা কর্মকর্তারা জানান, তারা চান এই অনিয়ম-দুর্নীতিগুলো বন্ধ হোক। উপজেলাকে ইউনিট হিসেবে গণ্য করা হোক। বাহিনীরপ্রধানের সঙ্গে উপজেলা কর্মকর্তাদের সরাসরি কোনো যোগাযোগ না থাকায় ওপরের মহলে এসব অনিয়ম ও ক্ষোভের বিষয়গুলো তারা জানাতে পারেন না। এখন তাদের পদ আপগ্রেডেশন হলে এই সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হবে বলে মনে করছেন তারা।</p>