<p style="text-align: justify;">চট্টগ্রামে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১০১তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ সম্পন্ন হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে বিজিবির প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) বীর-উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে এই কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। </p> <p style="text-align: justify;">এতে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। এ সময় বিজিবি, সেনাবাহিনী, স্থানীয় অসামরিক প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।</p> <p style="text-align: justify;">সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিজিবি মহাপরিচালককে সশস্ত্র সালাম দেওয়ার মধ্য দিয়ে নবীন সৈনিকদের শপথগ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। অভিবাদন গ্রহণ শেষে বিজিবি মহাপরিচালক নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দেন। এ সময় তিনি স্বাধীনতার মহান স্থপতি বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৭৫-এর ১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণকারী তাঁর পরিবারের সদস্যদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। একই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের সব বীর শহীদ, বিশেষ করে বিজিবির জীবন উৎসর্গকারী দুজন বীরশ্রেষ্ঠ, আটজন বীর-উত্তম, ৩২ জন বীরবিক্রম ও ৭৭ জন বীরপ্রতীকসহ ৮১৭ জন অকুতোভয় বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। </p> <p style="text-align: justify;">বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, কিংবদন্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই বাহিনী সাফল্যের পথপরিক্রমায় আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার দেশপ্রেমিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে বিজিবি ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে দেশমাতৃকার অখণ্ডতা রক্ষা, সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালান ও মাদক পাচার রোধ এবং নারী ও শিশু পাচারসহ যেকোনো আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অসামরিক সহায়তা এবং যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি ও দুর্যোগ মোকাবেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ভূমিকা সর্বমহলে প্রশংসিত। </p> <p style="text-align: justify;">বিজিবি মহাপরিচালক আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্বিক দিকনির্দেশনায় এই বাহিনী একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন, অত্যাধুনিক ত্রিমাত্রিক সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বিজিবিতে যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার, এপিসি, এটিভি, আরসিভি, এয়ার বোট, অত্যাধুনিক এন্টি ট্যাংক অস্ত্র, জলযানসহ আধুনিক সরঞ্জামাদি। বিজিবি আজ একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে জল, স্থল ও আকাশপথে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। এ বাহিনীর সদস্যদের আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বহুমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নতুন নতুন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্থাপনসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাহিনীর ক্রমবর্ধমান প্রশিক্ষণ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গায় আধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা সংবলিত আরো একটি বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। </p> <p style="text-align: justify;">নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, শৃঙ্খলাই সৈনিকের মূল ভিত্তি। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না, সে-ই প্রকৃত সৈনিক ও বীরযোদ্ধা। বিজিবির চারটি মূলমন্ত্র ‘মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতা’ হৃদয়ে ধারণ করে নবীন সৈনিকরা এই বাহিনীর ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখবে বলে বিজিবি মহাপরিচালক আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সীমান্ত প্রহরার মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষা করা। </p> <p style="text-align: justify;">তিনি বলেন, বিজিবি হবে ‘সীমান্তের নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক’। আর এ জন্য সততা, সত্যবাদিতা, আনুগত্য, নিষ্ঠা ও শৃঙ্খলা-- এই চারটি গুণের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে দেশপ্রেমিক সৈনিক হিসেবে গড়ে উঠতে তিনি নবীন সৈনিকদের নির্দেশ প্রদান করেন।</p> <p style="text-align: justify;">জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর বাহিনীর তৃতীয় ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের বিদায়কালে নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘যারা নতুন আজকে বিডিআর-এ যোগদান করেছ, যারা শপথ গ্রহণ করলা, তাদের কাছে আমার কথা রইল- ঈমানের সাথে কাজ কোরো, সৎপথে থেকো, দেশকে ভালোবাসো।’ বিজিবি মহাপরিচালক জাতির পিতার এই অমূল্য কথাগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করে সীমান্তে চোরাচালান রোধসহ পেশাগত দক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। </p> <p style="text-align: justify;">বিজিবি মহাপরিচালক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে ১০১তম রিক্রুট ব্যাচের সর্ববিষয়ে সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে প্রথম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর-৩০৬ রিক্রুট (জিডি) মো. মিনহাজ হোসেন রাফি, শারীরিক উৎকর্ষতা (পুরুষ) প্রথম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর-৬৩২ সিপাহী আবু হুরায়রা ও সর্ববিষয়ে তৃতীয় ও শারীরিক উৎকর্ষতা (নারী) বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর-৭১৬ সিপাহী ছাবাতুন উল্লাহ জীম এবং ফায়ারিংয়ে শ্রেষ্ঠ রিক্রুট বক্ষ নম্বর-৬৪১ সিপাহী মো. শাহিন উদ্দিনের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। </p>