<article> <p style="text-align: justify;">দেশের অর্থনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতি এবং বাজারে অস্থিরতার সময়ে বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। সরকারের সামনে এটিই এখন অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সরকারের আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে আগামী অর্থবছরে নানা খরচে কাটছাঁট করে ব্যয় সীমিত করা ও আয় বাড়ানোর চাপ দেবেন। তবে তিনি বাজেটের মূল লক্ষ্য ঠিক করেছেন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।</p> </article> <p style="text-align: justify;">একই সঙ্গে তিন বছর ধরে চলা কৃচ্ছ্রসাধন নীতি থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসার কৌশল ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আগামী বাজেটে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। তিনি আগামী বাজেটে মূল তিনটি চ্যালেঞ্জ—মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ ও রাজস্ব আদায়—মোকাবেলায় করণীয় ঘোষণা করবেন।</p> <article> <p style="text-align: justify;">বাজেটের মূল উদ্দেশ্য থাকবে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া। এ জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ও খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে খোলাবাজারে চাল বিক্রি বাড়ানো হবে। এ ক্ষেত্রে আগামী অর্থবছরে ১১ হাজার ৯৯ কোটি টাকার পণ্য কিনবে টিসিবি। সরকারকে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার জন্য বাজেটে প্রস্তাব করা হবে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এ ছাড়া আগামী অর্থবছরের বাজেটে খাদ্যে ভর্তুকি বাবদ সাত হাজার ৩৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এই খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ছয় হাজার ৭৬৬ কোটি টাকা। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আগামী অর্থবছরে প্রায় ১০ লাখ নতুন উপকারভোগী যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে সরকার।</p> <p style="text-align: justify;">মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থনীতির সূচকগুলো বেশ কিছুদিন ধরেই নেতিবাচক রয়েছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা, রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে আয় বাড়ানো, সুদ পরিশোধে বাড়তি খরচ এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারে বকেয়া ভর্তুকি সামলানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। নতুন বাজেট ঘাটতি কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ওপর সর্বোচ্চ জোর দেওয়া হচ্ছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বেশ কয়েকটি কৌশলে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রয়েছে ধীরে ধীরে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাজারভিত্তিক ব্যবস্থায় স্থানান্তর এবং বকেয়া ভর্তুকি কমিয়ে আনা। কর্মসংস্থান ও আয় বাড়াতে প্রবৃদ্ধি অর্জনে নজর বাড়ানো। এ জন্য কৃচ্ছ্রসাধন ব্যবস্থা থেকে পর্যায়ক্রমে বেরিয়ে আসা। আয় বাড়াতে অটোমেশনের মাধ্যমে কর প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধি, আয়কর ও মূল্য সংযোজন করের আওতা বাড়ানো এবং ক্রমান্বয়ে কর রেয়াত হ্রাস করারও প্রস্তাব করা হবে আগামী বাজেটে।</p> <p style="text-align: justify;">সরকার মূল্যস্ফীতি কমানোর টার্গেট নিলেও খুব একটা দ্রুত কমিয়ে আনা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তাঁর মতে, অর্থনৈতিক স্থিতিশীল পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে পারলে মূল্যস্ফীতি কিছুটা সময় নিয়ে সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব হবে। সংকোচনমূলক নীতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হলেও প্রবৃদ্ধি অর্জন বাধাগ্রস্ত করবে।</p> <p style="text-align: justify;">আগামী অর্থবছরের জন্য ৬.৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতির হার এবং পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণকে বেশ চ্যালেঞ্জিং হিসেবে দেখছে অর্থ মন্ত্রণালয়। রাজস্ব আহরণে কাঙ্ক্ষিত সফলতা না পাওয়ায় কভিড-১৯ সংক্রমণের পর থেকেই অর্থ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে। আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে গত তিন বছরব্যাপী চলমান এই কঠোর ব্যয়সাশ্রয়ী নীতি থেকে সরকার ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে নতুন অর্থবছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশভ্রমণ, গাড়ি কেনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরোপিত নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করে সীমিত আকারে কৃচ্ছ্রসাধন নীতি অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের।</p> <p style="text-align: justify;">অর্থ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভর্তুকি ও প্রণোদনা ছাড়াও আগামী অর্থবছরে সরকারি ঋণের সুদব্যয় মেটাতে ৯৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। সামাজিক নিরাপত্তা এবং সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতার জন্যও বরাদ্দ বাড়বে। এসব ব্যয় কমানোর কোনো সুযোগ থাকছে না। তাই রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলে সরকার হয় এডিপিতে অর্থ সঞ্চালন কমাবে অথবা উচ্চ হারে ঋণ নিতে বাধ্য হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্থর অগ্রগতি, বিশেষ করে এই দুটি খাতের বৈদেশিক অর্থায়ন হ্রাসকে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।</p> </article>