<p>গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন (বিবিএম) আয়োজিত জন-বাজেট সংসদ-২০২৪ অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই এবারের বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ দেখার বিষয়। কারণ মূল্যস্ফীতির চাপের ফলে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। জন-জীবনে সংকট প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এই অবস্থায় জাতীয় বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।</p> <p>আজ বুধবার (২৯ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডিবিএম’র নির্বাহী সদস্য জাকিয়া শিশির। অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘জাতীয় বাজেটে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফল ঘটছে না। গত দুই-তিন বছর যাবৎ নিত্যপণ্যের মূল্য ১২ শতাংশ হারে বাড়ছে। কিন্তু গত দুই বছরে যারা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনেন তাদের আয় ২০ থেকে ২৪ শতাংশ কমেছে। ফলে বর্তমান বাজেটেই আমাদেরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এতে কেউ বিদেশ যেতে আবার কেউ স্কুলে বাচ্চা ভর্তি বা নাস্তায় ডিম খেতে পারছি না। যা আয় করছি, তাতে ব্যয় কুলাতে পারছি না। আবার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণগুলোই এত জটিল, তা দ্রুত সমাধান করা অসম্ভব। তাই সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আগামী বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।’</p> <p>বাজেটের সীমাহীন বৈষম্যের কথা তুলে ধরে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)’র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সাধারণ মানুষের জন্য যে সামান্য সুবিধা দেওয়া হয়, বাজেট বাস্তবায়নের সময় সেটা দিতে নানা গড়িমসি করা হয়। সেটা নিতে সাধারণ মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয়। অন্যদিকে করপোরেট হাউজ থেকে শুরু করে ধনীদের জন্য যে সুবিধাগুলো দেওয়া হয়। সেটা নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়, দ্রুত প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে এটার যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট রয়েছে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া সরকারের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার যে অজুহাত দেখানো হয়, সেটাও সঠিক নয়। এই অবস্থায় জনস্বার্থে বাজেট করতে হলে বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া পরিবর্তন করতে হবে।’</p> <p>অনুষ্ঠানে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ পরবর্তী সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ পরিস্থিতি তুলে ধরেন বাগেরহাটের মোংলার সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. নূর আলম শেখ। তিনি বলেন, ‘উপকূলে ৭৩ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত। এরপর ঘূর্ণিঝড়ে মিষ্টি পানির সকল পুকুর নোনা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ফলে আগামীতে সুপেয় পানির সংকট আরো বাড়বে। উপকূলে চারিদিকে পানি থৈ থৈ করে, কিন্তু খাবার পানি নেই। তাই বাজেটে সুপেয় পানির জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। দুর্যোগ কবলিত এলাকা উপকূলের জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে।’</p> <p>মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে ডিবিএমের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার মোস্তফা বলেন, ‘বৈশ্বিক সংকটের কারণে দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মানুষ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট বা ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। অনেকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে জরুরি কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ অন্যান্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।’</p> <p>অপর এক প্রবন্ধে একশন এইড প্রতিনিধি মৌসুমি বিশ্বাস বলেন, ‘বাজেটে নারীদের জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিতে সর্বোচ্চ চাহিদাগুলি পূরণ করতে সমন্বিত কর্মসূচি প্রয়োজন। যার মধ্যে আছে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি, অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং লক্ষ্যভিত্তিক কর্মসূচির উন্নয়ন।’ জনগণের ব্যয়ের প্রবণতার সঙ্গে বৈশ্বিক মানগুলোর সামঞ্জস্য রেখে কাজ করলে নারী উন্নয়ন অগ্রগতি নিশ্চিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।</p>