<article> <p>দেশে ব্যবহৃত জ্বালানি তেল, কয়লা, এলএনজি ও এলপিজির প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। ডলারের দাম এক লাফে ৬.৩৬ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি আমদানিতে ব্যয় বেড়ে যাবে। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিলের বড় অংশই পরিশোধ করতে হয় ডলারে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে বিদ্যুতের বিল বাবদ ব্যয় বাড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি)। এর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে যাচ্ছে খাতটিতে সরকারের দেওয়া ভর্তুকির পরিমাণও। ফলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির আরো মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।</p> </article> <article> <p>বিপিডিবির এক হিসাবে বলা হয়েছে, ডলারের বিনিময় হার প্রতি এক টাকা বৃদ্ধির জন্য চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে খাতটিতে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়াতে হবে ৪৭৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সে অনুযায়ী গত ও চলতি অর্থবছরের ডলারের গড় বিনিময় হারের পার্থক্য হিসাব করে দেখা গেছে, এবার বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকি বাড়াতে হবে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা।</p> </article> <article> <p>এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিডিবির সদস্য (বিতরণ) মো. রেজাউল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিল ডলারে পরিশোধ করতে হয়, নতুন করে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সেগুলোতে ব্যয় বাড়বে। সার্বিকভাবে ডলারের সঙ্গে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে বিপিডিবির চাপ কিছুটা বাড়বে। তবে ডলারের দাম বাড়ার একটা সুবিধা পাবেন বেসরকারি খাতের আইপিপির (ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স) মালিকরা। এ কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য তাঁরা সরাসরি জ্বালানি তেল আমদানি করবেন, এতে বেসরকারি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু থাকবে।</p> </article> <article>যদিও আগে এই কেন্দ্রগুলোর ক্ষেত্রে ডলারের নির্ধারিত দরের চেয়ে জ্বালানি তেল আমদানিতে বেশি ব্যয় হতো। যার কারণে তাঁরা তেল আমদানি বন্ধ রেখেছিলেন।’ <p>বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ডলারের বিপরীতে টাকার এই অবমূল্যায়ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে আরো চাপে ফেলবে। এতে শুধু বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বকেয়া পরিশোধেই সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বেশি ব্যয় হবে। সরবরাহ পর্যায়ে খরচ বাড়লে সরকারের ভর্তুকিও বাড়বে।</p> </article> <article>অন্যদিকে সরকার যেহেতু ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে; ফলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম আরো বাড়াবে। এতে মূল্যস্ফীতি আরেক দফা বেড়ে যেতে পারে। চলমান ডলার সংকটের কারণে প্রায় সময়ই জ্বালানি আমদানি ব্যাহত হয়। নতুন করে ডলারের দাম বাড়ায় এই সংকট আরো ঘনীভূত হলে ব্যাহত হতে পারে বিদ্যুৎ উৎপাদন। এতে চলমান গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের ঘাটতি বেড়ে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। <p>এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘ডলারের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বাড়তি চাপ তৈরি হবে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’</p> <p>বাংলাদেশ ব্যাংক গত বুধবার ডলারের দাম ও ঋণের সুদের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পালনের অংশ হিসেবে ডলারের দাম ১১০ থেকে এক লাফে সাত টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা করা হয়েছে। তবে খোলাবাজারে কোথাও এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত দরে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে সরকারের টাকার অবমূল্যায়নজনিত ভর্তুকি বাবদ ব্যয় আরো বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।</p> <p>বিপিডিবি সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ কেনে আইপিপিগুলোর কাছ থেকে। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে শুধু আইপিপিগুলোর কাছ থেকেই বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে মোট ৫৯ হাজার ২২ কোটি টাকার। এ ছাড়া ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছিল ৯ হাজার ২২৩ কোটি টাকার বিদ্যুৎ। আর ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছ থেকে কেনা হয়েছে তিন হাজার ৭৪৪ কোটি টাকার বিদ্যুৎ। একই সঙ্গে বিপিডিবি যেসব বিদেশি কম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে বিদ্যুৎ ক্রয় করছে, সেগুলোরও বিদ্যুৎ বিল নির্ধারণ হচ্ছে ডলারে। আবার টাকার অবমূল্যায়নের কারণে বিপিডিবির নেওয়া বিদেশি ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয়ও বাড়বে বলে আশঙ্কা বিপিডিবি কর্মকর্তাদের। ২০২৩ সালের জুন শেষে বিপিডিবির দীর্ঘমেয়াদি বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা।</p> <p>বিপিডিবির তথ্য অনুযায়ী, শুধু ডলারের সঙ্গে টাকার অবমূল্যায়নজনিত কারণে গত তিন অর্থবছরে সংস্থাটির আর্থিক ক্ষতি হয়েছে দুই হাজার ১৬৩ কোটি টাকারও বেশি। ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসতে ধাপে ধাপে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) বছরে চারবার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে।</p> <p>বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র্র মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) সভাপতি ফয়সাল খান বলেন, ‘ডলারের বিনিময়হার সাত টাকা বেড়ে যাওয়ায় ফার্নেস অয়েল আমদানিকারকদের ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ বর্তমানে ফার্নেস অয়েলের অনেক এলসি নিষ্পত্তি হয়নি। এটি আইপিপিগুলোর জন্য বড় ক্ষতি। এমনকি তা ফার্নেস অয়েল আমদানিকারকদের আর্থিক সক্ষমতাকেও ব্যাপকভাবে দুর্বল করছে।’</p> <p>এদিকে বিদেশি কম্পানি হিসেবে দেশের অভ্যন্তরে গ্যাস উত্তোলন করছে মার্কিন কম্পানি শেভরন ও ব্রিটিশ কম্পানি তাল্লো। জানা গেছে, শেভরনের গ্যাস বিল বাবদ পাওনা এবং এলএনজি আমদানি বাবদ পেট্রোবাংলার বকেয়া প্রায় ৪০ কোটি ডলার। টাকার অবমূল্যায়নে এই বকেয়া পরিশোধে দেশীয় মুদ্রায় সংস্থাটির বাড়তি ব্যয় হবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। ডলার সংকটে পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) জ্বালানি তেল কেনা বাবদ বকেয়া জমেছে প্রায় ৩২ কোটি ডলার। এর মধ্যে আইটিএফসির ঋণ দুই কোটি টাকা। বাকিটা বিদেশি তেল সরবরাহকারী কম্পানিগুলোর পাওনা। ডলারের মূল্য বাড়ায় এই বকেয়া শোধ করতে বিপিসির অতিরিক্ত টাকা গুনতে হবে।</p> </article>