<article> <p style="text-align: justify;">জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা ও স্থানীয় নির্বাচন ঘিরে সংঘর্ষ বেড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ৬৮৯টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছে ৪২ জন। আহত দুই হাজার ৩২৮ জন।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভঙচুর, বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্রে হুমকি ও লুটপাটের অভিযোগও পাওয়া গেছে। আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছে কয়েক শ মানুষ।</p> <p style="text-align: justify;">আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর পাশাপাশি হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) নামের একটি মানবাধিকার সংস্থা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সংস্থাটি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, উপজেলা নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন থানার পাড়া, মহল্লা ও গ্রাম কেন্দ্রিক হামলার ঘটনায় প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে ভাঙচুরের অভিযোগ বেশি পাওয়া যাচ্ছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ৩৫টি উপজেলায় সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে অনেক উপজেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। যেসব উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা নির্বাচন করছেন, সেসব এলাকায় সহিংসতা বেশি হচ্ছে।</p> <p style="text-align: justify;">সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, বেশির ভাগ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে ঘিরে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এতে শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। বিজয় নিশ্চিত করতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অবৈধ অস্ত্রের মুখে অপহরণের ঘটনাও ঘটছে। গুলির ঘটনায় আতঙ্কিত হচ্ছে বিভিন্ন এলাকার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারও হচ্ছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে এরই মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা পুলিশ সুপারদের কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।</p> <p style="text-align: justify;">পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নির্বাচন-পরবর্তী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে কয়েকটি থানার ওসিকে সতর্ক করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে বলা হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি-অপারেশন) আনোয়ার হোসেন বলেন, নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা, হামলা, ভাঙচুর নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। যেখানেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে, পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করছে।</p> <p style="text-align: justify;">সর্বশেষ গত রবিবার রাতে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ১ নম্বর আজিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় গুলিতে মোহাম্মদ আলী নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির এক পরিসংখ্যান বলছে, স্থানীয় নির্বাচনগুলোকে কেন্দ্র করে গত মার্চ মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১৭টি সহিংসতায় তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আহত মোট ৯২ জন। চলতি এপ্রিল মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত ৩৭টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছে ১৬০ জন। নিহত ১১ জন।</p> <p style="text-align: justify;">গত ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া ফুলবাড়িয়া উপজেলার শিমুলিয়া বাজার এলাকায় গুলিতে হাসেম গাজী (৫৫) নামের স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ কর্মী এবং রেজাউল হক (৫০) নামের এক ভ্যানচালক গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁদের উদ্ধার করে স্থানীয় জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে স্থানীয়রা।</p> <p style="text-align: justify;">এ ঘটনার এক দিন আগে ১২ এপ্রিল রাতে খুলনার অভয়নগরের রাজঘাট বাজারে লিটু ও খায়রুজ্জামান সবুজ নামের দুজনকে প্রতিপক্ষ গুলি করে। স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধার করে দ্রুত খুলনায় নিয়ে যায়। দুই বছর আগে লিটুর বড় ভাই মোল্লা হেমায়েত হোসেন লিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। গত ১৫ এপ্রিল পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর ভাইসহ তিনজনকে অপহরণের ঘটনা ঘটে। গত ১২ এপ্রিল রাত আড়াইটার দিকে লক্ষ্মীপুর জেলা সদরের চন্দ্রগঞ্জের পাঁচপাড়া এলাকায় ছাত্রলীগের চার নেতাকর্মীকে কোপানো ও গুলির ঘটনায় একজন নিহত ও তিনজন গুরুতর আহত হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">অপরাধ বিশ্লেষক মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ সায়েন্স অ্যান্ড ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ উমর ফারুক বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে। এতে মানুষের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হবে। তাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর উচিত, এসব সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে জনমনে আতঙ্ক দূর করা।</p> </article>