<article> <p style="text-align: justify;">নোবেলজয়ী ইতালীয় নাট্যকার দারিও ফোর আলোচিত নাটক ‘অ্যাকসিডেন্টাল ডেথ অব অ্যান অ্যানার্কিস্ট’। ইতালিতে ঘটে যাওয়া বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে রচিত এ নাটক। মিলান শহরের পুলিশ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে রেলে বোমা হামলার এক ঘটনায় রেল শ্রমিক পিন্নেলিকে অভিযুক্ত করে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় পিন্নেলি রহস্যজনকভাবে পুলিশ সদর দপ্তর ভবনের চতুর্থ তলা থেকে পড়ে মারা যান।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এই ঘটনার সূত্র ধরে নাটকটিতে তীক্ষ, ব্যঙ্গাত্মক সংলাপের মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হয় দুর্নীতি, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং প্রশাসনিক, সামাজিক নানা অসংগতি। এরই মধ্যে নাটকটি বিশ্বের ৪০টির বেশি দেশে মঞ্চস্থ হয়েছে। ১৯৮৩ সালে এ নাটকের গল্পে নির্মিত হয়েছে একই নামের একটি চলচ্চিত্র।</p> <p style="text-align: justify;">গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথম ঢাকার মঞ্চে ‘প্যারাবোলা’ নামের নাটকটি আনে নাট্যদল বাতিঘর। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নাটকটির নামকরণ করা হয় প্যারাবোলা। এটির অনুবাদ করেছেন শাহানা জয় ও খালিদ হাসান রুমী। নাট্যরূপ দেওয়ার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন মুক্তনীল। দলের ১৭তম প্রযোজনাটির নবম মঞ্চায়ন হলো গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে নির্দেশক মুক্তনীল বলেন, ‘একটি মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এই নাটকের কাহিনি। এই মৃত্যুর ঘটনাকে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে দেখতে বোঝা যায় মৃত্যুর আসল কারণ। এভাবেই সুশাসন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। আমাদের বর্তমান সমাজব্যবস্থায় এই খতিয়ে দেখার সুযোগটা রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’</p> <p style="text-align: justify;">নির্দেশক আরো বললেন, ‘আমরা বিস্মৃতিপরায়ণ জাতি হিসেবে অল্প সময়ের ব্যবধানে সব কিছু ভুলে যাই। এটা আমাদের সীমাবদ্ধতা। এই সীমাবদ্ধতার সুযোগে আমাদের সঙ্গে চলে মর্মান্তিক প্রহসন। বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। মানুষের জীবন নিয়ে চলে তামাশা। যেখানে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারই আমরা পেয়েছি ৩৫ বছর পর, সেখানে সাধারণ মানুষের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। অনেকের আশঙ্কা, বাহ্যিক সৌন্দর্যবর্ধক উন্নয়নের আড়ালে যে নিষ্ঠুর সত্যটি লুকিয়ে আছে, একসময় তা না আবার সমাজটাকে গ্রাস করে ফেলে। এই কম আলোচিত সত্যটি হচ্ছে মানবিক বোধ ও নীতিনৈতিকতার ধস। এই ধস কি রোধ করা সম্ভব হবে? এই প্রশ্নের জবাব খোঁজার পাশাপাশি সত্যের অনুসন্ধান করা হয়েছে নাটকের কাহিনিতে।’</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">নির্দেশক বলেন, ‘এই নাটকের সঙ্গে আমাদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের অনেক মিল রয়েছে। যেকোনো ঘটনাকে নানা আঙ্গিকে দেখার সুযোগ থাকে। মূল ঘটনা ঠিক রেখে আমরা আমাদের মতো করে নাটকটি মঞ্চায়নের চেষ্টা করেছি।’</p> <p style="text-align: justify;">নাটকে দেখা যায়, বাচাল ও খ্যাপাটে ধরনের একজন মানুষ একদিন ছদ্মবেশে একটি পুলিশ দপ্তরে ঢুকে পড়েন বিচারকের  বেশে। সেখানে তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত কথাবার্তা ও আচরণ ইতালীয় দর্শকদের মনে করিয়ে দেয় কিভাবে দেশটির বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বামপন্থী দলগুলো একসময় পুলিশের গোয়েন্দাদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল। খ্যাপাটে লোকটির কথাবার্তা পুলিশ দপ্তরের কর্মীদের বিভ্রান্তি ও দ্বন্দ্বের দিকে নিয়ে যায়। মিথ্যার ফাঁদে পড়ে হতাশায় নিমজ্জিত হন তদন্ত অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। ঘটনা পরম্পরায় নানান দৃষ্টিকোণ তুলে ধরার মধ্য দিয়ে নাটকের শেষ অংশে গিয়ে উন্মোচিত হয় প্রকৃত সত্য। দর্শক জানতে পারে প্রকৃত নৈরাজ্যবাদী আসলে কে।</p> <p style="text-align: justify;">নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মুক্তনীল, ফয়সাল মাহমুদ, তাজিম আহমেদ, শৈবাল সান্যাল, শিশির সরকার, সোহানুর রহমান, রুম্মান শারু ও নীলয় বিশ্বাস। খ্যাপাটে লোকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাদ্দাম রহমান।</p> <p style="text-align: justify;">অপেক্ষাকৃত তরুণ নাট্যকর্মীদের নিয়ে কাজ করে নাটকের দল বাতিঘর। গত বছর তারা যুগপূর্তি করেছে। মঞ্চে আসার পর থেকে দলটির বেশ কয়েকটি নাটক দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘ভগবান পালিয়ে গেছে’, ‘উর্ণাজাল’, ‘মাংকি ট্রায়াল’, ‘হিমুর কল্পিত ডায়েরি’, ‘র‌্যাডক্লিফ লাইন’ ইত্যাদি।</p> </article>