<p>দিন দশেক ধরে টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সারা দেশে বয়ে চলা তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।</p> <p>বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকা শিশু হাসপাতালের জরুরি ও বহির্বিভাগে কথা বলে জানা গেছে, বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রোগী বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। বেশির ভাগ রোগী সর্দি, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি ও পেটের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত গরমে টাইফয়েড, হেপাটাইটিস বা জন্ডিসের প্রবণতাও বাড়ছে।</p> <p>ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাইখ আবদুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ঈদের আগে দিনে গড়ে রোগী আসত ২০০-এর মতো। এখন ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে। </p> <p>জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক আলাউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, এবার টানা তাপপ্রবাহের কারণে রোগী অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু রোগী আসছে অনেক বেশি। প্রাথমিক চিকিত্সায় কিছুটা সুস্থ হলে তারা বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। ভর্তির প্রয়োজন হচ্ছে খুব কম। </p> <p><strong>ঢাকা মেডিক্যালে শিশু ওয়ার্ডে তিন গুণ রোগী </strong><br /> ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২০৭, ২০৮ ও ২১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ শয্যায় দুজন করে রোগী। বারান্দা ও ওয়ার্ডের মেঝেতে বিছানা করে আছে দ্বিগুণ রোগী। </p> <p>কর্তব্যরত একজন নার্স জানান, শিশুদের এই তিন ওয়ার্ড মিলিয়ে শয্যা রয়েছে ৫২টি, অথচ ভর্তি আছে ১৫৫ শিশু। এদের বেশির ভাগেরই বমির সঙ্গে জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও পেটের সমস্যা।</p> <p>২০৭ নম্বর ওয়ার্ডে মেঝেতে ঠাঁই নেওয়া এক শিশুর মা আকলিমা বলেন, ‘শিশু হাসপাতালে গিয়ে বিছানা পাইনি। পরে এখানে এসে দুই দিন ধরে মেঝেতে থাকছি। গরমে কী যে কষ্ট হচ্ছে, বলার মতো নয়। বাচ্চা সারা রাত কান্না করে।’</p> <p><strong>শিশু হাসপাতালে রোগী বেড়েছে এক-তৃতীয়াংশ </strong></p> <p>বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, গরমের মধ্যে দীর্ঘ অপেক্ষায় আছে রোগীর স্বজনরা। প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো রোগীকে ভর্তি নিতে দেখা যায়নি। </p> <p>হাসপাতালটির চিকিৎসক এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন কালের কণ্ঠকে বলেন, জ্বরের সঙ্গে বমি, টাইফয়েড, পাতলা পায়খানা হয়ে পানিশূন্যতা, এ ছাড়া পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ নিয়ে আসছে বেশির ভাগ রোগী। বিছানা ফাঁকা না থাকায় অনেককে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। ভর্তির প্রয়োজন আছে এমন শিশুর সংখ্যা ৫ শতাংশের বেশি নয়, কিন্তু সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। </p> <p>ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অতিরিক্ত গরমে শিশুরা প্রচুর ঘামছে, তাতে তৈরি হচ্ছে পানিশূন্যতা। এ সময় শিশুদের বাইরে বের না করলেই ভালো। শিশুদের গরম খাবার দিতে হবে। বাইরের খাবার বা পানি খাওয়ানো যাবে না।</p> <p><strong>রোগী কম কলেরা হাসপাতালে</strong></p> <p>চলতি বছর রাজধানীর আইসিডিডিআরবির কলেরা হাসপাতালে গত কয়েক বছরের তুলনায় রোগী কম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বর্তমানে এই হাসপাতালে প্রায় সাড়ে চার শ রোগী রয়েছে, যা এ সময়ে স্বাভাবিক রোগীর সংখ্যার তুলনায় কম।</p> <p>আইসিডিডিআরবির গণমাধ্যম ব্যবস্থাপক তারিফুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ বছর স্বাভাবিকের তুলনায় রোগী কম। গত বছর এ সময় আমাদের এখানে গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী ভর্তি ছিল। ২০২২ সালে সর্বোচ্চ এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৪০০-তে পৌঁছেছিল। এবার দিনে ৪০০ থেকে ৪৫০-এর মতো রোগী ভর্তি হচ্ছে।’</p> <p>তারিফুল খান বলেন, ‘ডায়রিয়ায় আক্রান্ত নিম্নবিত্ত মানুষ সাধারণত আমাদের এখানে আসে। ঈদ ও নববর্ষের ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় এখনো মানুষ ফেরেনি। ফলে রোগীর সংখ্যা কম। তবে তাপপ্রবাহ এভাবে চলতে থাকলে সামনে রোগী বাড়তে পারে।’</p>