<p>এক যুগ আগের হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয় পলাতক সোহাগ ওরফে বড় সেহাগের। সেই  সোহাগ সেজে আদালতে আত্মসমর্পন করার পর কারাগারে পাঠানো হয় মো. হোসেনকে। এ ঘটনায় দুই বছর আগের মামলায় দুই জনকেই কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।</p> <p>প্রকৃত আসামি সোহাগ ওরফে বড় সেহাগকে ১০ বছর এবং সোহাগ সেজে কারাগারে যাওয়া মো. হোসেনকে ৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কারাদণ্ডের সঙ্গে ১ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে তাদের। </p> <p>বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) ঢাকার অতিরিক্ত মূখ্য মহানগর হাকিম মো. তোফাজ্জল হোসেন এ রায় দেন। রায়ে বলা হয়েছে, দণ্ডবিধির তিনটি ধারায় মো. হোসেনকে দেওয়া ছয় বছরের সাজা একসঙ্গে চলবে এবং তার পূর্ববর্তী হাজতবাস এ সাজা থেকে বাদ যাবে।<br />  <br /> সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী আতিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘দণ্ডবিধির তিনটি ধারায় ছয় বছরের সাজা একসঙ্গে চলবে বলে রায়ে উল্লেখ করায় মো. হোসেনকে দুই বছর কারাভোগ করতে হতো। যেহেতু আদালত রায়ে বলে দিয়েছেন, হোসেনের পূর্ববর্তী সাজা এ সাজা থেকে বাদ যাবে। তাই এ মামলার সময় থেকে ধরলে হোসেন দুই বছর সাজা খেটে ফেলেছেন। ফলে অর্থদণ্ড পরিশোধ করলে তার মুক্তিতে বাধা থাকবে না।’ </p> <p>২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর ঢাকার কদমতলীতে হুমায়ুন কবির ওরফে টিটু নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই টিটু হত্যা মামলার প্রধান আসামি সোহাগ ওরফে বড় সোহাগকে ওই বছরের ২২ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিচার চলা অবস্থায় ২০১৪ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফেরারী হন সোহাগ। ফেরার থাকা অবস্থায় ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর টিটু হত্যা মামলায় রায় দেন আদালত। রায়ে সোহাগগে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়।</p> <p>রায়ের পর ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি বড় সোহাগ সেজে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তার ফুপাত ভাই মো. হোসেন। সেদিন আদালত বড় সোহাগ সাজা হোসেনকে কারাগারে পাঠান। তিন বছর পর এক সাংবাদিকের অনুসন্ধানে বিষয়টি ধরা পড়লে ওই সাংবাদিক ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর তা আদালতের নজরে আনেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত কারা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের কাছে এ বিষয়ে প্রতিবেদন চান। কারা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের প্রতিবেদনে এর সত্যতা মেলে। </p> <p>প্রতিবেদনেও বলা হয়, কারাগারে থাকা সোহাগ প্রকৃত আসামি বড় সোহাগ নন। তার নাম মো. হোসেন। তখন আদালত প্রকৃত আসামি বড় সোহাগের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এদিকে বিদেশ যাওয়ার জন্য কোভিড টিকা নিতে গেলে ২০২২ সালের ২৯ জানুয়ারি রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরদিন বড় সোহাগকে নিয়ে নিজেদের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব। </p> <p>সেখানে র‍্যাব-১০ এর অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান জানান, বড় সোহাগ বিদেশে পাড়ি দেওয়ার বন্দোবস্ত করছিলেন। এই আসামি পেশায় অটো চালক হলেও সে মূলত পেশাদার অপরাধী। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় দুটি হত্যা মামলা, দুটি অস্ত্র মামলা ও ছয়টি মাদক মামলাসহ ১০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে টিটু হত্যাসহ দুটি মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়ছে।</p> <p>এদিকে বড় সোহাগ সেজে মো. হোসেনের জেলে যাওয়ার ঘটনায় চার জনকে জনকে আসামি করে কতোয়ালি থানায় মামলা করেন ঢাকার চতুর্থ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী মিজানুর রহমান। তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ৩১ মে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। গত বছর ২১ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। বিচারে দুই ম্যাজিস্ট্রেটসহ চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।</p>