<article> <p style="text-align: justify;">বাংলাদেশ বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকলেও এ ধরনের দুর্যোগে দ্রুত সাড়া দেওয়ার মতো কোনো সমন্বিত ব্যবস্থা নেই। ২০১৫ সালে প্রতিবেশী নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশে ‘ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার’ (এনইওসি) স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা এখনো বাস্তবে রূপ নেয়নি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ভূমিকম্প মোকাবেলার জন্য চীনের সহায়তায় ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এর কাজ চলছে ধীরগতিতে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় খাদ্য অধিদপ্তরের সিএসডির এক একর জমি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ধরনের সেন্টারের লক্ষ্য সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে দুর্যোগের আগে ও পরে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া। এ ছাড়া অন্য কোনো দেশ থেকে উদ্ধার কার্যক্রমে সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রেও দরকার হয় ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার। প্রতিবেশী দেশ ভারতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধীনে ‘ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি রেসপন্স সেন্টার’ রয়েছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">উন্নত বিশ্বের যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ডের পাশাপাশি নেপাল ও পাকিস্তানের মতো দক্ষিণ এশীয় দেশেও তা রয়েছে। ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, বিদেশের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারগুলো থেকে জনগণকে সতর্ক করার পাশাপাশি দুর্যোগের সময় কিভাবে দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা নিশ্চিত করা যাবে তার গবেষণাভিত্তিক মডেল তৈরি করা হয়। পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক কার্যক্রমের পরিকল্পনাও ওয়েবসাইটগুলোতে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এ ধরনের জাতীয় সমন্বয় কেন্দ্রের বিষয়টি এখনো ধারণাপত্র বা ‘কনসেপ্ট নোটের’ মধ্যেই রয়ে গেছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">মন্ত্রিপরিষদসচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি এটি তৈরি করেছে। অপারেশন সেন্টারের কোনো ওয়েবসাইট করা তৈরি হয়নি। বাংলাদেশে সর্বশেষ ১৮২২ ও ১৯১৮ সালে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। ধারণা করা হয় টেকটোনিক প্লেটের সঞ্চরণ থেকে বিগত এক শতকের বেশি সময়ে হিমালয়ের পাদদেশে বিপুল পরিমাণ শক্তি সঞ্চিত হয়েছে। সে কারণে আরেকটি বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে  রয়েছে নেপাল, ভারত, বাংলাদেশসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল।</p> <p style="text-align: justify;">ভূতত্ত্ববিদরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এই ভূমিকম্প ৭ বা ৮ রিখটার স্কেল মাত্রা বা তারও বেশি শক্তিশালী হবে। অঞ্চলজুড়ে কয়েক দশকের ছোট ও মাঝারি মাত্রার এবং নেপালের ২০১৫ সালের প্রচণ্ড ভূমিকম্পে ভূগর্ভে সঞ্চিত শক্তি পুরোটা বেরিয়ে যেতে পারেনি। সে কারণে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। তবে কখন এটি হতে পারে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;"><b>প্রস্তুতি খুব অপ্রতুল</b></p> <p style="text-align: justify;">ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলি আহমদ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ভূমিকম্প মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি খুবই অপ্রতুল। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করতে হয় বলে ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার দরকার। বাংলাদেশে এখনো এ ধরনের কোনো সংস্থা নেই। এ ছাড়া বড় দুর্যোগের সময় আন্তর্জাতিক সাহায্য-সহযোগিতা আসতে হলে স্থানীয় জরুরি পরিস্থিতি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যকর কমিটি দরকার। দেশে বড় ভূমিকম্প হলে মেগা স্ট্রাকচারগুলো ধসে গিয়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে উদ্ধারকাজ চালানো অসম্ভব হবে। ঘটবে ব্যাপক প্রাণহানি। কাজেই জরুরি ভিত্তিতে ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।</p> <p style="text-align: justify;"><b>২০১৬ সালে চুক্তি, কাজ এখনো চলছে</b></p> <p style="text-align: justify;">দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (এনইওসি) নির্মাণের জন্য চীনের সঙ্গে ২০১৬ সালে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সেই চুক্তি অনুযায়ী, চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এটি নির্মাণের কাজ চলছে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে একটি জায়গা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নামে বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে। এনইওসি প্রতিষ্ঠার জন্য চীন সরকার ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মধ্যে ২০২২ সালের ৭ আগস্ট আবার একটি সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার দৃশ্যমান ধীরগতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিনি মন্ত্রণালয়ে নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন। তাই এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে কাজের গতির বিষয়ে জানাতে পারবেন।</p> <p style="text-align: justify;">নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব কালের কণ্ঠকে বলেন, এই সেন্টারটি নির্মাণ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের যেমন ধীরগতি আছে তেমনি চীনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও ধীরগতিতে কাজ করছে। এ কারণেই বিলম্ব হচ্ছে।</p> <p style="text-align: justify;">২০০৯ সালে সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিডিএমপি) ও জাইকার যৌথ জরিপে বলা হয়, রাজধানী ঢাকায় সাত বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে শহরের ৭২ হাজার ভবন ভেঙে পড়বে এবং এক লাখ ৩৫ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্থাপনাগুলো ভেঙে পড়ে তৈরি হবে সাত কোটি টন কংক্রিটের স্তূপ।</p> <p style="text-align: justify;">বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ভূমিকম্প গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, বাংলাদেশের ভেতরে ১৩টি ভূগর্ভস্থ চ্যুতি রয়েছে। এখানে বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিও রয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, ঢাকার ভবনগুলোর বেশির ভাগই ইমারত নির্মাণ বিধিমালা এবং ভূমিরূপ মেনে নির্মাণ করা হয়নি। এ কারণে তুলনামূলকভাবে কম মাত্রার ভূমিকম্পেও অনেক ক্ষতি হতে পারে।</p> <p style="text-align: justify;">বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্চ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগ মোকাবেলা করে আসছে। এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় অভিজ্ঞতার কারণে এক ধরনের দক্ষতাও তৈরি হয়েছে। কিন্তু ভূমিকম্প তুলনামূলকভাবে বিরল ঘটনা এবং এক শতাব্দীর বেশি সময়ের মধ্যে কোনো বড় ভূমিকম্পের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এ দেশের নেই। গত এক শতাব্দীতে জনসংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় ও ব্যাপক নগরায়ণ হওয়ায় পাকা স্থাপনা বহুগুণে বেড়েছে। ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনার নির্মাণকাজের গুণগত মান নিয়ে উদ্বেগও সর্বব্যাপী। এ কারণে ভূমিকম্পের মতো বিধ্বংসী দুর্যোগ সামাল দেওয়ার সক্ষমতা নিয়ে পর্যবেক্ষকদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;"><b>পালিত হচ্ছে দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস</b></p> <p style="text-align: justify;">এমন প্রেক্ষাপটে আজ ১০ মার্চ সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস পালিত হবে। এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘দুর্যোগ প্রস্তুতিতে লড়ব, স্মার্ট  সোনার বাংলা গড়ব।’ প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বেসরকারি সংস্থা, সুধীসমাজসহ সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন করাই দিবসটি পালনের লক্ষ্য। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন।</p> </article>