<p style="text-align: justify;">ভ্যানচালক উজির মিয়া। দৃষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগা এ মানুষটি এক সময় আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন কর্মজীবনে ফেরার। বসুন্ধরা চক্ষু হাসপাতালে বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশন শেষে এখন তিনি চোখে দেখতে পান। নতুন করে তার আশার সঞ্চার হয়েছে কাজে ফেরার।</p> <p style="text-align: justify;">গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিনে বসুন্ধরা চক্ষু হাসপাতালে উজির মিয়া মতো ৪৮ জন দরিদ্র দৃষ্টিহীন মানুষের বিনামূল্যে চোখের ছানি, মাংস বৃদ্ধি ও নেত্রনালির অপারেশন হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়।</p> <p style="text-align: justify;">২০১৪ সালে থেকে সারা দেশে দরিদ্র দৃষ্টিহীন মানুষের সাহায্যার্থে বিনামূল্যে চক্ষু সেবা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে বসুন্ধরা চক্ষু হাসপাতাল। বিভিন্ন জেলায় ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৯৫৪ জনের বিনামূল্যে অপারেশন করছে প্রতিষ্ঠানটি </p> <p style="text-align: justify;">বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, চোখে ছানি পড়ার প্রধান কারণ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে লেন্সের উপাদান প্রোটিনের গঠন নষ্ট হয়ে যাওয়া। এ ছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, দীর্ঘদিন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন, ধুমপান ও অ্যালকোহলে আসক্তি। সূর্যের অতিরিক্ত তাপ কিংবা অতিবেগুনি রশ্মিতে কাজ করা। চোখে আঘাত পাওয়া ও ভিটামিনের ঘাটতি।</p> <p style="text-align: justify;">গতকাল বুধবার সকালে বসুন্ধরা চক্ষু হাসপাতালে কথা উজির মিয়া সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রথম দিকে ডান চোখে ঝাপসা দেখতাম। ধীরে ধীরে বাম চোখের সমস্যা বাড়তে থাকে। এক সময় পুরোপুরি দৃষ্টিহীন হয়ে যাই। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছিলাম না।</p> <p style="text-align: justify;">উজির মিয়া বলেন, ‘ভ্যান চালাতে গিয়ে কয়েকবার দুর্ঘটনায় কবলে পড়তে হয়েছে। ভ্যান চালনো বন্ধ করে দিলে নিদারুণ অভাব দেখা দেয় পরিবারে। আশা করিনি আবার চোখের আলো ফিরে পাবে। আল্লার রহমত ছিল। তাই এখন চোখের আলো ফিরে পেয়েছি। এখন আবার কাজে ফিরবো ভাবছি। নিজের কাজ নিজে করবে, এর চেয়ে বড় আনন্দের কিছু নাই।’</p> <p style="text-align: justify;">উজির মিয়ার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন তার পাশে থাকা কৃষ্ণ গোবিন্দপুরের মাসিদুল বলেন, ‘দর্জির কাজ করতাম। চোখের কারণে গত ১৪ বছর বেকার ছিলাম। দুই ছেলে তাদের নিজেদেরই সংসার চলে টেনেটুনে। আমার চিকিৎসা করাবে কীভাবে? অন্য মানুষের সাহায্য ছাড়া চলতে পারি না। অপারেশন শেষে চোখে আলো ফিরেছে, এখন দেখতে পাচ্ছি।</p> <p style="text-align: justify;">মাসিদুল বলেন, ওনারা বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশন করে দিলে। যাতায়ত খরচ, খাওয়া দাওয়া, বিনামূল্যে ওষুধ সবেই বিনামূল্যে দিয়েছে। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। মন থেকে দোয়া করি।</p> <p style="text-align: justify;">বসুন্ধরা চক্ষু হাসপাতাল ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. মো সালেহ আহমেদের নেতৃত্বে ডা. এন্থনি এলবার্ট, ডা. মজুমদার গোলাম রাব্বি এবং ডা. আক্তার ফেরদেৌসি জাহান এসব রোগীদের চোখের ছানি অপারেশন করেন।</p> <p style="text-align: justify;">চিকিৎসকরা বলেন, চোখে ছানির একমাত্র চিকিৎসা অপারেশন। ওষুধ কিংবা চশমা দিয়ে ছানির চিকিৎসা সম্ভব নয়। ছানির চিকিৎসা না করলে চোখের দৃষ্টি ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। বেশি দেরি করলে গুকোমা বা চোখের প্রেসার, চোখে প্রদাহ ও তীব্র ব্যথাসহ পুরোপুরি অন্ধ হওয়ার মতো মারাত্মক জটিলতা হতে পারে।</p> <p style="text-align: justify;">ইনস্টিটিউটের ম্যানেজার মোহাম্মদ আহসান হাবীব জানান, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষ্ণ গোবিন্দপুর ডিগ্রি কলেজে এক ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণকারী এক হাজার ২০০ রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি ওষুধ ও চশমা দেওয়া হয়। বিভিন্ন অপারেশনের জন্য নির্বাচন করা হয় ৪২০ জন দরিদ্র দৃষ্টিহীনকে। যাদের চোখের অপারেশন জরুরি। এদের মধ্যে প্রথম ধাপে ৪৮ জনের অপারেশন শেষ হলো।  </p>