<article> <p style="text-align: justify;">সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ৭৫ পয়সা বেড়েছে। একই সঙ্গে শিল্প-কারখানায় ব্যবহূত ক্যাপটিভ বিদ্যুতের (শিল্প-কারখানার গ্যাসভিত্তিক নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র) গ্যাসের দামও প্রতি ঘনমিটার ৭৫ পয়সা বাড়িয়েছে সরকার। নতুন এই দর চলতি ফেব্রুয়ারি থেকেই কার্যকর হবে। তবে বাসাবাড়িতে ব্যবহূত, সার উৎপাদনে, সিএনজি, বাণিজ্যিক ও চা-শিল্পে ব্যবহূত গ্যাসের মূল্য সমন্বয় অপরিবর্তিত রয়েছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ আরো বাড়বে। ব্যয় বাড়বে শিল্প-কারখানার পণ্য উৎপাদনেও। আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই গ্রাহক পর্যায়ে ৩৪ থেকে ৭০ পয়সা পর্যন্ত বিদ্যুতের দামও বাড়ছে, যা কার্যকর হবে আগামী ১ মার্চ থেকে। বিদ্যুৎ বিভাগ শিগগিরই দাম বাড়ানোর ঘোষণার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">গতকাল মঙ্গলবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বিদ্যুেকন্দ্রে ব্যবহূত গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। যদিও প্রজ্ঞাপনটি গত রবিবার স্বাক্ষরিত বলে উল্লেখ আছে। এত দিন সরকারি, বেসরকারি বিদ্যুেকন্দ্র (আইপিপি), ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) বিদ্যুেকন্দ্রে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম ছিল প্রতি ঘনমিটার ১৪ টাকা। এখন ৫.৩৬ শতাংশ বাড়িয়ে ১৪ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">শিল্প-কারখানার গ্যাসভিত্তিক নিজস্ব বিদ্যুেকন্দ্রে (ক্যাপটিভ) সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম ছিল ৩০ টাকা। সেটি ২.৫০ শতাংশ বাড়িয়ে এখন ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">জানা গেছে, গত বছরের জানুয়ারিতে বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। তখন বিদ্যুেকন্দ্রে পাঁচ টাকা দুই পয়সা ঘনমিটারে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম বাড়িয়ে করা হয় ১৪ টাকা। শিল্প খাতের গ্রাহকদের ব্যবহূত গ্যাসের দাম ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটার ৩০ টাকা করা হয়।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">গ্যাসের পাশাপাশি গত বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন দফায় ৫ শতাংশ করে ১৫ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়।</p> <p style="text-align: justify;">সরকারি, বেসরকারি ও ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাসের দাম বাড়ানোয় গ্রাহক পর্যায়ে আরো কয়েক দফা বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আবার শিল্প খাতে নতুন করে গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় পণ্য উৎপাদন খরচও বাড়বে বলে জানিয়েছেন শিল্প মালিকরা।</p> <p style="text-align: justify;">বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, বাংলাদেশে গ্যাস ব্যবহারকারীদের আটটি গ্রাহক শ্রেণি রয়েছে। এর মধ্যে মোট গ্যাস সরবরাহের বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩৭ শতাংশ, শিল্পে ২৩ শতাংশ, ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ১৮ শতাংশ, গৃহস্থালিতে ১০ শতাংশ, সার উৎপাদনে ৭ শতাংশ, সিএনজিতে ৪ শতাংশ এবং বাণিজ্যিক ও চা-শিল্পে ১ শতাংশ গ্যাস ব্যবহূত হয়। প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন, আমদানি, সরবরাহ মূল্যের সঙ্গে বিক্রয়মূল্যের পার্থক্যের কারণে সরকারকে এ খাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আর্থিক ভর্তুকি দিতে হবে প্রায় ছয় হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। কৃষি সেচ মৌসুম, রমজান মাস ও গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের চাহিদা আরো বেশি থাকে। গৃহস্থালি, সার উৎপাদন, সিএনজি, বাণিজ্যিক ও চা-শিল্পে মূল্য সমন্ব্বয় অপরিবর্তিত রয়েছে। এই মূল্য সমন্বয়ের ফলে এলএনজির বর্তমান বাজারমূল্য ও ডলার বিনিময় হার বিবেচনায় বিদ্যমান ভর্তুকি ছয় হাজার কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব হতে পারে।</p> <p style="text-align: justify;">বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৩৪ থেকে ৭০ পয়সা সমন্বয় হতে পারে। মার্চ থেকেই নতুন দর কার্যকর হবে।</p> <p style="text-align: justify;">গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। নসরুল হামিদ বলেন, ‘উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হয়। ঘাটতি মেটাতে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। আগামী তিন বছর ধাপে ধাপে দাম সমন্বয় করা হবে।’</p> <p style="text-align: justify;">প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার সময় মার্কিন ডলারের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা ধরে হিসাব করা হয়েছিল। এখন ডলারের দাম ৪০ টাকা বেড়ে গেছে। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে। জ্বালানি খরচের ওপর ভিত্তি করে সারা বিশ্বেই দাম সমন্বয় করা হয়।’</p> <p style="text-align: justify;">সরকার উচ্চ ব্যয়ের ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র ‘কুইক রেন্টাল’ ও ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ থেকে বেরিয়ে এসেছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বড় বিদ্যুেকন্দ্র আসছে। দুই বছরে দুই হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎও আসবে। এখন যে মূল্য সমন্বয় হচ্ছে, সেটা ডলারের দামের কারণে। ভর্তুকি থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য এই সমন্বয়।’</p> <p style="text-align: justify;">এদিকে মার্চ মাস থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে। এতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে দেশের বাজারেও বাড়বে, আবার কমলে দেশের বাজারেও কমবে।</p> <p style="text-align: justify;">এ বিষয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি তেলের দামও মার্চের প্রথম সপ্তাহে সমন্বয় হবে। সরকার ‘ডাইনামিক প্রাইসে’ যাবে, যেখানে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়লে অথবা কমলে সমন্বয় করা হবে।</p> </article>