<article> <p style="text-align: justify;">দেশে গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২০২৩ সালে মা ইলিশ সংরক্ষণে মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময়ে জাল জব্দের পরিমাণ ১২ গুণ ছাড়িয়েছে। একই সঙ্গে জেলে ও নৌযান আটকের সংখ্যাও বেড়েছে। নৌ পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।</p> <p style="text-align: justify;">জব্দ করা এসব জালের মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এসব অভিযানে কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী ও মত্স্য অধিদপ্তরের সমন্বয় রয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">প্রতিবছর ইলিশ প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণে ২২ দিন সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ সময় অবৈধভাবে ইলিশ শিকার রোধে অভিযান চালায় সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। গত বছর ২০২৩ সালে ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এ সময় চলা অভিযানে ১৮১ কোটি ৪২ লাখ ৪৮ হাজার ৪২৩ মিটার জাল জব্দ করা হয়।</p> <p style="text-align: justify;">মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে পাঁচ বছরে ৪৭৭ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৫৪৭ মিটার জাল জব্দ করেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ১৪ হাজার ৫২৬ কোটি ৫১ লাখ আট হাজার ৬৯৮ টাকা। মাছ জব্দ হয়েছে দুই লাখ ১৬ হাজার ১০৮ কেজি। এ সময় ১২ হাজার ৯০৬টি নৌযান আটক করা হয়েছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">একই সঙ্গে ১৬ হাজার ৫৫৮ জনকে আটক করে মামলা দেওয়া হয়েছে। এসব অবৈধ জাল স্থানীয় প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও মত্স্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ধ্বংস করা হয়েছে। জব্দ করা ইলিশ স্থানীয় এতিমখানা ও মাদরাসা শিক্ষার্থী এবং গরিব মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়।</p> <p style="text-align: justify;">নৌ পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, মা ইলিশ সংরক্ষণে বিশেষ অভিযানে ২০১৯ সালে ১৪ কোটি ৬৬ লাখ ৪৩ হাজার ৫৮০ মিটার জাল জব্দ করা হয়। ২০২৩ সালে একই সময়ে চলা অভিযানে জব্দ করা হয় ১৮১ কোটি ৪২ লাখ ৪৮ হাজার ৪২৩ মিটার জাল, যা পাঁচ বছর আগের চেয়ে ১২ গুণের বেশি।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">বিশ্লেষকরা বলছেন, এই জব্দের তালিকা বাড়ছে কেন, তা খতিয়ে দেখা উচিত। প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক জাল জব্দ করার পরও অবৈধ মাছ শিকার বন্ধ না হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;">খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালসহ অন্যান্য জালের কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জ সদরের ফিরিঙ্গী বাজার, পঞ্চসার, দয়ালবাজার, সিপাহীপাড়া এলাকায় এসব জাল তৈরির বেশ কিছু কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় প্রচুর নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল তৈরি হচ্ছে।</p> <p style="text-align: justify;">এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক সাজ্জাদ করিম খান বলেন, ‘আমরা মত্স্য বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে প্রায়ই অভিযান চালিয়ে থাকি। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ কারেন্ট জাল জব্দ করে ধ্বংস করা হয়। ২০২৩ সালে এসব কারখানায় অভিযান চালিয়ে দোষ-ত্রুটি পাওয়ার পর ৭১টি মামলা করে পুলিশ।’ তিনি দাবি করেন, তাঁদের অভিযানে অবৈধ জাল তৈরি তিন-চতুর্থাংশ কমেছে। আগামী দুই বছরে আরো অনেক কমে আসবে বলে দাবি এই পুলিশ কর্মকর্তার।</p> <p style="text-align: justify;">জাল জব্দ করার হার বাড়ার বিষয়ে নৌ পুলিশের চাঁদপুর রিজিয়নের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অ্যাডিশনাল ডিআইজি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দিন দিন আমাদের তত্পরতা বাড়ায় মাছ ধরার সামগ্রী জব্দের সংখ্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে মামলাও বাড়ছে।’</p> <p style="text-align: justify;">তিনি বলেন, জব্দ করা কারেন্ট জাল মত্স্য আইন অনুযায়ী আদালতের নির্দেশে পুড়িয়ে ফেলা হয়। মাছগুলো আদালতের অনুমতিক্রমে গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয়। পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া মাছগুলো মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানায় বিতরণ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া মামলাসংশ্লিষ্ট নৌযান আদালতের মাধ্যমে মালিকরা জিম্মায় নেন। আর যেগুলোর মালিকানা পাওয়া যায় না, সেগুলো নিলামে বিক্রি করে সেই অর্থ সরকারের কোষাগারে দেওয়া হয়।</p> <p style="text-align: justify;">অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, গত পাঁচ বছরে জব্দ জালের মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি কারেন্ট জাল। এই জালে একসঙ্গে অনেক মাছ ধরা পড়ে বলে জেলেরা এটা বেশি ব্যবহার করেন।</p> <p style="text-align: justify;">নৌ পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি মো. মিজানুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় এই ২২ দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেক জেলে বা ইলিশ শিকারি এই নিষেধাজ্ঞা মানেন না। তাই আমরা অভিযান চালিয়ে থাকি। এতে নিষিদ্ধ জালসহ অনেক জেলেকে আটক করা হচ্ছে।’</p> <p style="text-align: justify;">জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত বেশির ভাগের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। অনেকের এটিই একমাত্র পেশা। তাই তাদের ২২ দিন চলার মতো ব্যবস্থা না করে এ ধরনের নির্দেশ মানাটা কষ্টকর। তাই অনেক মত্স্যজীবী ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে যায়। তাই তাদের এই ২২ দিনের চলার ব্যবস্থা করে দেওয়া জরুরি। এতে তারা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মাছ ধরা থেকে বিরত থাকবে।’</p> <p style="text-align: justify;">(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি)</p> </article>