<article> <p style="text-align: justify;">দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর প্রতিবেশী, গ্লোবাল সাউথ বা উন্নয়নশীল দেশগুলো সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে। গণতান্ত্রিক, অবাধ ও সুষ্ঠু মানদণ্ডে ঘাটতি থাকার কথা উল্লেখ করলেও পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের পাশে থাকার ও নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার বার্তা দিয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">নির্বাচন নিয়ে বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়ায় দৃশ্যমান পার্থক্যের বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়ার ধরন মোটেও বিস্ময়কর নয়। ফলাফলও অনেকের কাছে বিস্ময়কর ছিল না।</p> <p style="text-align: justify;"><img alt="সহযোগিতা করতে চায় পশ্চিমারা" height="360" src="https://www.kalerkantho.com/_next/image?url=https%3A%2F%2Fcdn.kalerkantho.com%2Fpublic%2Fnews_images%2F2024%2F01%2F13%2F1705087617-2c39849b22c79be76365a0a29b597de3.jpg&w=1920&q=100" width="600" /></p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">কুগেলম্যান বলেন, অভিনন্দন! আগামী দিনগুলোতে একসঙ্গে কাজ করা বা সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বার্তার বাইরে নির্বাচনের ধরন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে অন্য দেশগুলোর মতপার্থক্য স্পষ্ট। পশ্চিমারা নির্বাচনকে তাদের মূল্যবোধের আলোকে দেখেছে। তাই তারা তাদের দৃষ্টিতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হয়নি—এমন নেতিবাচক মন্তব্য করেছে।</p> <p style="text-align: justify;">কুগেলম্যানের মতে, পশ্চিমা ছাড়া অন্য দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ে মূল্যায়ন পুরোপুরি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধভিত্তিক নয়।</p> </article> <p style="text-align: justify;">শেখ হাসিনার সঙ্গে উন্নয়নশীল বিশ্বের সুসম্পর্ক আছে। উন্নয়নশীল বিশ্ব শেখ হাসিনার আবারও ক্ষমতায় ফেরাকে ভালো বিষয় হিসেবে দেখবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ক্ষমতার ধারাবাহিকতায় উন্নয়নশীল বিশ্ব খুশি।</p> <article> <p style="text-align: justify;">উল্লেখ্য, ভারত, চীন, রাশিয়াসহ অনেক দেশ বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে অনেক দেশেরই উদ্বেগ ছিল। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করতে ভিসানীতি ঘোষণা করেছিল। এর আওতায় সহিংসতায় জড়িত এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বিঘ্ন ঘটানো যে কোনো বাংলাদেশিকে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। গত সেপ্টেম্বরেই যুক্তরাষ্ট্র ওই নীতি প্রয়োগ শুরুর ঘোষণা দেয়। তবে রাশিয়া বলে আসছে, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের নামে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা গতকাল শুক্রবারও এক বিবৃতিতে বলেছেন, নির্বাচনে বাইরে থেকে হস্তক্ষেপের চেষ্টা হয়েছিল। চীনও নির্বাচনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে উল্লেখ করে বাইরের কারও এ নিয়ে নাকগলানোর বিরোধিতা করেছে।</p> <p style="text-align: justify;">বাংলাদেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হলে পশ্চিমা দেশগুলো সরকারকে স্বীকৃতি দেবে না—বিভিন্ন সময় এমন রাজনৈতিক বক্তব্যও রাজনৈতিক মহল থেকে এসেছে। পশ্চিমা যে দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু বলেনি তারা কি নতুন সরকারকে সহযোগিতা করবে না, জানতে চাইলে কুগেলম্যান বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়। বড় শক্তিগুলোর ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার পটভূমিতে পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশকে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র বলে মনে করে। এ কারণে পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশকে হাতছাড়া করতে চাইবে না। আবার একইভাবে বাংলাদেশও চাইবে না পশ্চিমাদের হাতছাড়া করতে।</p> <p style="text-align: justify;">কুগেলম্যানের মতে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিষয় হলো যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও সমালোচনা এড়াতে নতুন সরকারকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে যেতে হতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদারের ক্ষেত্রে যাতে কোনো ঝুঁকি সৃষ্টি না হয় সে জন্য নতুন সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক রাখতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;">সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নির্বাচন বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির সীমাবদ্ধতাকে দেখিয়ে দিয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতিতে গণতন্ত্রকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উইলসন সেন্টারের বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘বাইডেনের নীতি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে কি না আমি জানি না। তবে এটি অনেক বড় একটি ধাক্কা। বাইডেন প্রশাসন বিগত মাসগুলোতে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চাপ দিয়েছে। আর এখন ওই প্রশাসনই বলছে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি।’</p> <p style="text-align: justify;">কুগেলম্যান বলেন, ‘গণতন্ত্রের জন্য চাপ দেওয়ার বাইরে বাইডেন প্রশাসনের নীতিতে আরো অনেক বিষয় আছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে জোরালো অর্থনৈতিক ও কৌশলগত বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে অংশীদারি গড়তে চেয়েছিল। সেসব ক্ষেত্রে তো বাইডেনের নীতি সফল হয়েছে।’</p> <p style="text-align: justify;">নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক দেশের স্বার্থ আছে। স্বার্থের কারণে অনেকে নির্বাচন নিয়ে সরব নয়। আবার অনেকে স্বার্থ আদায়ের জনও নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ইস্যুতে চাপ সৃষ্টি করে।</p> <p style="text-align: justify;">ভারতের ও. পি. জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির জিন্দাল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্তের মতে, বাংলাদেশ-ভারত জোরালো সম্পর্কের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বেশ ভালো। এর আলোকে নির্বাচনে দিল্লির সমর্থন অপ্রত্যাশিত ছিল না। বিশেষ করে, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারকে নিয়ে ভারতের যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল তার কারণে ভারত শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন করতে পারে।</p> <p style="text-align: justify;">শ্রীরাধা দত্ত ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় বাংলাদেশ ভারতবিরোধী জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠা, বাংলাদেশ থেকে ভারতে হামলার ঘটনার কথা উল্লেখ করেন।</p> <p style="text-align: justify;">শ্রীরাধা দত্ত মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের দৃষ্টিতে দেখছে। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি ও যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি এক হওয়ার সম্ভাবনা কম।</p> <p style="text-align: justify;">বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি বলেন, নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশের জনগণই ঠিক করবে নির্বাচন কিভাবে হবে এবং কারা ক্ষমতায় আসবে।</p> <p style="text-align: justify;">বীণা সিক্রি বলেন, বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু নির্বাচনে অংশ না নেওয়া তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। নির্বাচন হয়ে গেছে। এখন বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়া।</p> </article>