<p style="text-align: justify;">নব্বই দশকের চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার বিচারকাজ ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এ মামলার আসামি আশীষ রায় চৌধুরীর জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের অনুমতি চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে আজ সোমবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।</p> <p style="text-align: justify;">আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক, তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী পলাশ চন্দ্র রায়, সেলিম আশরাফ চৌধুরী ও এম হারুনুর রশীদ খান।</p> <p style="text-align: justify;">আসামি আশীষ চৌধুরীকে চলতি বছর ১০ জানুয়ারি হাইকোর্ট জামিন দেন। ওই জামিন স্থগিত চেয়ে প্রথমে চেম্বার আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ১৬ জানুয়ারি ওই আবেদনে শুনানির পর চেম্বার আদালত আশীষের জামিন স্থগিত করেন। আর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। এর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ আশীষের জামিনের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে। </p> <p style="text-align: justify;">গত ৬ ফেব্রুয়ারি আরেক আদেশে আপিল বিভাগ এ মামলার বিচারকাজ ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলের শুনানি মুলতবি করেন। এ আদেশের পর ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও মামলার বিচারকাজ শেষ হয়নি। </p> <p style="text-align: justify;">এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলটি গত ২৯ অক্টোবর শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ওঠে। সেদিন আসামিপক্ষের আইনজীবী জানান, ছয় মাস সময় এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। আপিল বিভাগের আদেশ বাস্তবায়িত হয়নি। তখন সর্বোচ্চ আদালত বিচারককে কারণ দর্শাতে বলেন। কেন মামলাটির বিচারকাজ ছয় মাসে শেষ করতে পারেননি, এক সপ্তাহের মধ্যে সে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। সে ধরাবাহিকতায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি সোমবার শুনানিতে উঠলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে বিচারকের ব্যাখ্যা আপিল বিভাগে উপস্থাপন করা হয়।</p> <p style="text-align: justify;">আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক পরে সাংবাদিকদের বলেন, আপিল বিভাগে আজ বিচারকের ব্যাখ্যাটি উপস্থাপন করা হয়েছে। বিচারক ব্যাখ্যায় বলেছেন, এটি পুরোনো মামলা। বারবার সমন দিয়েও সাক্ষীদের হাজির করানো যাচ্ছে না। অনেক সাক্ষীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আর যেসব পুলিশ সদস্যকে সাক্ষী করা হয়েছিল, তাদের অনেকেই অবসরে চলে গেছেন। তাদেরও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় শুধুমাত্র বিচারকের পক্ষে মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। এরপর আপিল বিভাগ মামলাটি নিষ্পত্তি করতে আবার ছয়মাস সময় দিয়েছেন বিচারিক আদালতকে। আর আশীষ রায় চৌধুরীকে যে জামিন দিয়েছিলেন হাইকোর্ট, সে জামিনটি বহাল রেখেছেন।</p> <p style="text-align: justify;">এ মামলায় ৩৬ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৯ জনের সাক্ষ্য হয়েছে বলেও জানিয়েছেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল। আগামী ২৬ নভেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন রেখেছেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক এম আলী আহমেদ।</p> <p style="text-align: justify;">বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন নায়ক সোহেল চৌধুরী। ওই ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটির তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।</p> <p style="text-align: justify;">২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এর দুই বছর পর মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।</p> <p style="text-align: justify;">ওই বছরই এক আসামি মামলা বাতিলে হাইকোর্টে আবেদন করেন। সেই আবেদনে শুনানির হাইকোর্ট মামলার বিচারকাজ স্থগিত করেন। ২০১৫ সালে সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেন হাইকোর্ট। এরও সাত বছর পর গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি মামলার নথি বিচারিক আদালতে ফেরত এলে সাক্ষ্যগ্রহণের উদ্যোগ নেন বিচারিক আদালত। পরে ২৮ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জাকির হোসেনের আদালতে সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী।</p> <p style="text-align: justify;">আলোচিত এ হত্যা মামলার আসামিরা হলেন, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, সেলিম খান, দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, আদনান সিদ্দিকী ও ফারুক আব্বাসী।</p>