<p>ডোম অব দ্য রকের আরবি নাম ‘কুব্বাহ আস-সাখরা’। যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় পাথরের ওপর নির্মিত গম্বুজ। প্রাচীন জেরুজালেম শহরে অবস্থিত মুসলিম স্থাপত্যটি নির্মাণ উমাইয়া খলিফা আবদুল ইবনে মারওয়ান। এটি পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন মুসলিম স্মৃতিস্তম্ভ। ডোম অব দ্য রকে নামাজ আদায়ের সুযোগ থাকলেও মূলত এটি কোনো মসজিদ নয়। তবে তা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত আল-আকসা প্রাঙ্গণেই অবস্থিত। ধারণা করা হয়, মিরাজের রাতে মহানবী (সা.) যে পাথরের ওপর অবতরণ করেন সেই পাথরকে কেন্দ্র করেই নির্মিত হয়েছে গম্বুজটি এবং সে অনুসারেই তার নাম ‘কুব্বাহ আস-সাখরাহ’ রাখা হয়েছে।</p> <p>ঐতিসাহিক আল-আকসা মসজিদ থেকে এর দূরত্ব দুই শ মিটার। ইহুদি ধর্ম বিশ্বাস অনুসারে ডোম অব দ্য রক নির্মিত হয়েছিল ‘সেকেন্ড টেম্বল’-এর (বা দ্বিতীয় হাইকালে সুলায়মানির) স্থানে, যা ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা ধ্বংস করেছিল এবং সেখানে জুপিটারের মন্দির স্থাপন করেছিল। যেহেতু ইহুদি ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী এখানে ইহুদিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।</p> <p><strong>নির্মাণশৈলী </strong>: অষ্টভুজাকার ডোম অব দ্য রক মূলত ইসলামী ও বাইজাইন্টাইন স্থাপত্যরীতিতে নির্মাণ করা হয়, যা একটি কেন্দ্রীয় গম্বুজ দ্বারা আবদ্ধ। যার ব্যাসার্ধ ২০ মিটার এবং উন্নত ড্রামের ওপর স্থাপিত। গম্বুজের সমর্থনে আছে চারটি স্তর ও ১২টি কলাম। চারপাশে ২৪টি পিয়ার ও কলামের একটি অষ্টাভুজাকার তোরণ আছে। বাইরের দেয়ালগুলো অষ্টভুজাকৃতির। তাদের প্রতিটি পরিমাপ প্রায় ১৮ মিটার প্রশস্ত এবং ১১ মিটার উচ্চ।</p> <p><strong>নির্মাণের ইতিহাস</strong> : ৬৩৮ সালে খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) জেরুজালেম জয় করার কয়েক দশক পর পঞ্চম উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান ডোম অব দ্য রক নির্মাণ করেন। যার নির্মাণকাজ ৭২ হিজরি মোতাবেক ৬৯২ খ্রিস্টাব্দে শেষ হয়। এরপর আব্বাসীয়, ফাতেমি, আইয়ুবি, মামলুক ও উসমানীয় শাসনামলে ডোম অব দ্য রকের একাধিক সংস্কার হয়।</p> <p><strong>সংস্কারের ইতিহাস</strong> : আব্বাসীয় আমলে ডোম অব দ্য রক একাধিকবার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তা সংস্কার করা হয়। ১০১৫ খ্রিস্টাব্দে ভূমিকম্পে মূল গম্বুজ ধসে গেলে ১০২২-২৩ খ্রিস্টাব্দে তা পুননির্মাণ করা হয়। ১০২৭-২৮ খ্রিস্টাব্দে স্মৃতিস্তম্ভটিতে মোজাইক লাগানো হয়। ১০৯৯ সালে ক্রুসেডাররা জেরুজালেম জয় করার পর কুব্বাত আল-সাখরাকে গির্জায় রূপান্তর করে।</p> <p>২ অক্টোবর ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবি (রহ.) জেরুজালেম উদ্ধার করলে ডোম অব দ্য রক আবারও নামাজের স্থানে পরিণত হয়। তিনি গম্বুজের ওপর থেকে ক্রুশ সরিয়ে চাঁদ স্থাপন করেন এবং বরকতময় পাথরের চারপাশে কাঠের আবরণ দেন। ১২৫০ থেকে ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মামলুক শাসনামলে ডোম অব দ্য রককে রাজকীয় স্থাপনার মর্যাদা দেওয়া হয়। সুলতান প্রথম সুলায়মানের সময় প্রায় সাত বছর সময় ব্যয় করে স্থাপত্যটির বহির্ভাগ টাইলসে আচ্ছাদিত করা হয়।</p> <p>এ ছাড়া উসমানীয়রা অভ্যন্তরভাগ মোজাইক, ফাইয়েন্স ও মার্বেল দ্বারা সৌন্দর্য বর্ধন করে। ডোম অব দ্য রকের কারুকাজে সুরা ইয়াসিন, বনি ইসরাঈল ও মারিয়ামের আয়াতের ক্যালিগ্রাফি ব্যবহার করা হয়। ১৮১৭ সালে সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ স্থাপত্যটিতে বড় ধরনের সংস্কার করেন।</p> <p>১৯৫৫ সালে আরব রাষ্ট্রগুলো এবং তুরস্কের অর্থ-সহায়তায় জর্ডান সরকার ডোম অব দ্য রকের সংস্কার ও সম্প্রসারণ করেন। ১৯৬৫ সালে গম্বুজের ওপর এলুমিনিয়াম ও ব্রোঞ্জের মিশ্রণের প্রলেপ দেওয়া হয়। ১৯৯৩ সালে গম্বুজের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য জর্ডানের রাজা হুসাইন তার লন্ডনের বাড়ি বিক্রি করে ৮০ কেজি স্বর্ণ ব্যবহার করে প্রলেপ দেন।</p> <p><em>তথ্যসূত্র : এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা, আলজাজিরা ও উইকিপিডিয়া</em></p>