<p><strong>মুমূর্ষ অবস্থায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা</strong> : সাদ বিন মুয়াজ (রা.) ৩১ বছর বয়সে মদিনায় ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর মাধ্যমে বনু আবদুল আশহাল গোত্রের সব নারী-পুরুষ ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তিনি বদর, উহুদ ও খন্দক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। পঞ্চম হিজরিতে সংঘটিত খন্দকের যুদ্ধে হিব্বান ইবনে আরিক্বাহর নিক্ষিপ্ত একটি তীর তাঁর দেহে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় তিনি মহান আল্লাহর কাছে এই মর্মে দোয়া করেন যে, তিনি যেন তাঁকে বনু কুরাইজার বিচার পর্যন্ত হায়াত দান করেন। কারণ বনু কুরাইজা খন্দকের যুদ্ধে মুসলমানদের সঙ্গে চরম গাদ্দারি করে। মুসলমানদের সঙ্গে সম্পাদিত মৈত্রী চুক্তি ভঙ্গ করে মক্কার মুশরিকদের গোপনে সহায়তা করে। মহান আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন।</p> <p><strong>বনু কুরাইজার বিশ্বাসঘাতকতা</strong> : দীর্ঘ এক মাস তাঁর ক্ষত ভালো হয়নি। খন্দক যুদ্ধের পরপরই রাসুল (সা.) বনু কুরাইজার বিরুদ্ধে অভিযান চালান। তাদের দুর্গ অবরোধ করে রাখেন। অবশেষে তারা সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.)-এর ফয়সালার ওপর রাজি হয়ে দুর্গ থেকে বেরিয়ে আসে। তাদের ধারণা ছিল সাদ (রা.) তাদের পক্ষে ইতিবাচক ফয়সালা করবেন। কেননা সাদ (রা.) ছিলেন আউস গোত্রের নেতা। তাঁর গোত্রের সঙ্গে বনু কুরাইজার ছিল মৈত্রী সম্পর্ক। কিন্তু সাদ (রা.) ইসলামের স্বার্থে এক চুল পরিমাণও ছাড় দিতে রাজি হননি।</p> <p><strong>সাদ (রা.)-এর ফায়সালা অনুসরণ</strong> : অসুস্থ অবস্থায় তিনি মসজিদ-ই-নববীর অন্দরে একটি তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন। রাসুল (সা.) তাঁকে ময়দানে নিয়ে আসতে বলেন। বিশেষ ব্যবস্থাপনায় একটি ঘোড়ায় উঠিয়ে তাঁকে রাসুল (সা.)-এর কাছে আনা হয়। তাঁর বাহন রাসুল (সা.)-এর তাঁবুর কাছাকাছি এলে তিনি আনসারদের বলেন, ‘তোমাদের নেতার সাহায্যের জন্য উঠো। তাকে বাহন থেকে সযত্নে নামিয়ে নাও।’ অতঃপর রাসুল (সা.) তাঁকে বলেন, এরা (ইহুদিরা) তোমার ফয়সালার ওপর রাজি হয়ে আত্মসমর্পণ করেছে।</p> <p><strong>বিশ্বাসঘাতকদের কঠিন শাস্তি</strong> : অতঃপর সাদ (রা.) বনু কুরাইজার বিশ্বাসঘাতক যোদ্ধাদের হত্যার ফয়সালা করেন। নারী ও শিশুদের দাস-দাসী বানানো এবং তাদের সম্পদ গনিমত হিসেবে জব্দ করার ফয়সালা দেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী ফয়সালা করেছ।’ ফয়সালার পরপরই তাঁর জখম থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করেন। (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ৪/১২৬-১২৭)</p> <p><strong>যার মৃত্যুতে </strong><strong>আরশ কেঁপে ওঠে</strong> : মদিনার ‘জান্নাতুল বাকি’ নামক কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩৭ বছর। তাঁর ইন্তেকালের পর জিবরাঈল (আ.) রেশমি পাগড়ি পরিধান করে রাসুল (সা.)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বলেন, কে মৃত্যুবরণ করেছে, যাঁর জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে এবং যাঁর কারণে আরশে কম্পন সৃষ্টি হয়েছে? রাসুল (সা.) দৌড়ে যান সাদ (রা.)-এর কাছে। গিয়ে দেখেন তিনি আর বেঁচে নেই। (বুখারি, হাদিস : ৩৮০৩; মুসলিম, হাদিস : ২৪৬৬)</p>