<p>আজ বিশ্ব মা দিবস। মা শব্দটি একেবারে ছোট। কিন্তু এ শব্দটি এতই বিস্তৃত যে, সাগরের একূল থেকে যেমন ওকূল কিছুই দেখা যায় না। শুধু টেউয়ের পর ঢেউ আছড়ে পড়ে। মাত্র একটি শব্দে মা আবদ্ধ হয়েও এর ব্যাপকতা সাগরের চেয়েও বিশাল। এ শব্দের চেয়ে আপন আর শব্দ নেই। বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বে মাকে স্মরণ করে আজ (১২ মে) পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব মা দিবস’। যদিও সন্তানের জন্য মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা জানাতে ঘটা করে দিবসের প্রয়োজন হয় না তবুও মায়ের জন্য জমানো ভালোবাসা প্রকাশে সারা বিশ্বে পালিত হয় ‘বিশ্ব মা দিবস’।</p> <p>এখন মূলত মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস পালিত হয়। সেই হিসেবে আজ ১২ মে বিশ্ব মা দিবস। এ দিনে সন্তানেরা মায়েদেরকে একটু ভিন্নভাবে স্মরণ করেন, সম্মান জানিয়ে থাকেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা মায়ের ছবি দিয়ে নিজের ভালোবাসা ও অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। অনেকে আবার একটি দিনকে ঘিরে মা দিবস পালনের বিরোধিতাও করেন। কিন্তু উভয় পক্ষই এ বিষয়ে একমত যে, সন্তানের জন্য মায়ের অবদান আর কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করা যায় না। </p> <p>কিন্তু কীভাবে দিবসটির শুরু হয়েছিল তা হয়তো অনেকের জানা নেই। চলুন জেনে নেওয়া যাক মা দিবসের আদ্যোপান্ত।</p> <p>কারও কারও মতে এই দিনটির সূত্রপাত প্রাচীন গ্রিসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে, যেখানে গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবেল-এর উদ্দেশ্যে পালন করা হতো একটি উৎসব। এশিয়া মাইনরে মহাবিষুব-এর সময়ে এবং তারপর রোমে আইডিস অব মার্চ (১৫ মার্চ) থেকে ১৮ মার্চের মধ্যে এই উৎসবটি পালিত হতো।</p> <p>প্রাচীন রোমানদের ম্যাত্রোনালিয়া নামে দেবী জুনোর প্রতি উৎসর্গিত আরেকটি ছুটির দিন ছিল। সেদিন মায়েদের উপহার দেওয়া হতো। এ ছাড়া মাদারিং সানডের মতো ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে দীর্ঘকাল ধরে বহু আচারানুষ্ঠান আছে, যেখানে মায়েদের এবং মাতৃত্বকে সম্মান জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট রোববারকে আলাদা করে রাখা হতো। তবে আধুনিক মা দিবসের প্রচলন হয় আমেরিকায়। বর্তমানে প্রচলিত মা দিবসের শুরুটা ১৯ শতকের গোড়ার দিকে, আমেরিকাতে। দিবসটির প্রবক্তা অ্যানা মারিয়া রিভস জার্ভিস। তাঁর মা অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস ছিলেন একজন সমাজকর্মী। তিনি ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল শিশুদের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে মায়েদের সচেতন করা। তিনি আমেরিকার বাল্টিমোর ও ওহাইওর মাঝামাঝি ওয়েবস্টার জংশনের বাসিন্দা ছিলেন। সারা জীবন অনাথদের সেবায় জীবন ব্যয় করেছেন অ্যান মেরি রিভস।</p> <p>১৮৭৬ সালের কোনো এক রোববার মা অ্যান তাঁর প্রার্থনা শেষে বলেছিলেন, এমন একটা সময় যদি আসে, যেদিন কেউ একজন ‘মা দিবস’ নামে কোনো দিবস তৈরি করবে! কথাটি ১২ বছর বয়সী ছোট্ট অ্যানার মনে গেঁথে যায়।  ১৯০৫ সালে অ্যান মারা যান। অ্যানের মৃত্যুর পর মেয়ে আনা মায়ের স্বপ্ন পূরণে কাজ শুরু করেন। সব মাকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি দিবস প্রচলনের লক্ষ্যে সচেষ্ট হন তিনি।</p> <p>১৯০৮ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার একটি গির্জায় আনা তাঁর মায়ের স্মরণে অনুষ্ঠান করেন। একই বছর মার্কিন কংগ্রেস মা দিবসকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব নাকচ করে। তবে তাতে দমে যাননি আনা। একের পর এক চিঠি পাঠান তিনি প্রশাসনের কাছে। চিঠির বিষয়বস্তু ছিল মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস হিসেবে পালন করা। দিনটি ছিল অ্যানার মায়ের মৃত্যুদিনের সবচেয়ে কাছের রবিবার। এর কয়েক বছরের মধ্যে আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মা দিবস পালিত হতে শুরু করে।</p> <p>অবশেষে অ্যানার কয়েক বছরের চেষ্টায় আমেরিকায় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায় মা দিবস। ১৯১৪ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। দিনটি যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি ছুটি হিসেবেও ঘোষিত হয়। পরে যুক্তরাষ্ট্রের দেখাদেখি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে। তবে কয়েকটি দেশে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে দিবসটি পালিত হয়।</p> <p><sub>তথ্যসূত্র: হিস্টোরি ডটকম, হিন্দুস্তান টাইমস, ব্রিটানিকা, এনডিটিভি</sub></p>