<article> <p style="text-align: justify;">গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের ভাগনাহাটি গ্রামে বেশ বড় জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে আমেরিকান ডেইরি লিমিটেড নামের একটি খামার। বছর কয়েক আগে এক সকালে ভাগনাহাটি গিয়ে উপস্থিত হই তাদের কার্যক্রম দেখতে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্য মতে, এটি মূলত আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আওতাধীন কৃষি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান। দেখা গেল প্রাণিসম্পদ লালন-পালন ঘিরে এক দারুণ আয়োজন সেখানে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">প্রায় ২০০ বিঘা জমির বিশাল খামারে আছে দুগ্ধ খামার ও জাত উন্নয়ন প্রকল্প, ষাঁড়ের সংগ্রহশালা, মহিষ প্রকল্প, ভেড়া ও ছাগলের জাত উন্নয়ন প্রকল্প, মাংসের জন্য ছাগল ও ভেড়া পালন কেন্দ্র, গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প, প্রাণিসম্পদের খাদ্য উৎপাদন প্রকল্প, দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র এবং কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার।</p> <p style="text-align: justify;">জৈব নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের খামারগুলোর মতোই সতর্কতাব্যবস্থা রয়েছে এখানে। সে নিরাপত্তার বিশেষ ধাপগুলো পেরিয়ে এগোতেই স্বাগত জানিয়েছিলেন কৃত্রিম প্রজনন বিভাগের পরিচালক কুতুব উদ্দিন তালুকদার। গবেষক হিসেবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সরকারি চাকরি শেষে এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">কুতুব উদ্দিন সাহেব আমাদের নিয়ে গেলেন তাঁদের একটি ল্যাবরেটরিতে। সেখানে নিয়মিত উন্নত জাতের ষাঁড়ের ‘সিমেন’ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়। ষাঁড়ের সিমেন সংগ্রহ, তার মৃত্যুহারসহ সব রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যবস্থা। খামারিদের অনেকে বলেন, দৃশ্যত সঠিক সিমেন ব্যবহার করেও অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত জাত পান না।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এ ব্যাপারে কুতুব উদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে সিমেন সংগ্রহ ও বাজারজাত করে। এর বাইরে পাশের দেশ থেকেও সরকারি অনুমোদনহীন কিছু সিমেন অবৈধ উপায়ে আমাদের বাজারে প্রবেশ করে। সেগুলো দামে কম হওয়ায় অনেক খামারি আকৃষ্ট হন। কিন্তু বাছুর জন্ম নেওয়ার পর হতাশ হতে হয় তাঁদের।’</p> <p style="text-align: justify;">সিমেন ল্যাবের অদূরেই খামারের ‘বুল স্টেশন’। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উন্নত জাতের ষাঁড়ের সংগ্রহ রয়েছে এখানে। কুতুব উদ্দিন তালুকদার বলেছিলেন, তাঁদের ব্রিডিং খামার থেকে শতভাগ এলিট ফ্রিজিয়ান, এলিট শাহিওয়াল, মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম, পাবনা গ্রে ইত্যাদি জাতের ষাঁড়, এলিট মুররা মহিষ এবং যমুনাপারি ও ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের হিমায়িত সিমেন প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণ করে খামারিদের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে। তাঁদের প্রাণিসম্পদের সংগ্রহশালাটি এখন বিশাল। একেকটি শেডে শত শত গরু। প্রতিটি প্রাণীই স্বাস্থ্যবান ও দেখতে সুন্দর।</p> <p style="text-align: justify;">কুতুব উদ্দিন জানান, দুধের জন্য ফ্রিজিয়ানের সংকরের বিকল্প নেই। আবার দুধ ও মাংস দুটিই ভালো পেতে শাহিওয়াল চমৎকার। তবে খামারের জন্য দেশি জাতের গরুগুলো একদিক থেকে বেশি উপযোগী। এগুলোর লালন-পালনে খরচ তুলনায় অনেক কম। স্থানীয় আবহাওয়ার উপযোগী বলে রোগব্যাধিও কম হয়।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">কুতুব উদ্দিন তালুকদার বললেন, অনেকেই বেশি দুধের প্রত্যাশায় বিদেশি জাতের গরু কেনেন। তবে প্রান্তিক কৃষকের জন্য বিদেশি জাতের ব্যবস্থাপনা সহজ নয়। প্রান্তিক কৃষকদের অনেকেরই যেখানে নিজের খাবার নিয়েই দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়, সেখানে প্রতিদিন ফ্রিজিয়ান গরুকে ১০ কেজি খাবার খাওয়ানো সম্ভব নয়। আবার তা না খাওয়ালে ১০ লিটার দুধও হবে না। কোনো কারণে দুধের নায্য দাম না পেলে দরিদ্র কৃষকের সমস্যা বেড়ে যাবে।</p> <p style="text-align: justify;">প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞ কুতুব উদ্দিন মন্তব্য করলেন, দেশি জাতের গরু পালার খরচ কম, মাংসও সুস্বাদু। রেড চিটাগং, মীরকাদিম কিংবা নর্থ বেঙ্গল গ্রে কোনো দিক থেকেই বিদেশি উন্নত জাতের চেয়ে কম নয়।</p> <p style="text-align: justify;">খুব ছোট্ট জায়গা থেকে আজ বিশাল উদ্যোগে পৌঁছেছে আমাদের প্রাণিসম্পদ। অনেক হতাশার ছায়া পেছনে ফেলে দেশজুড়ে গড়ে উঠেছে অনেক খামার। সম্প্রতি দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে আমরা আশার আলো দেখেছি। আমেরিকান ডেইরিও নতুন যুগের নতুন উদ্যোগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।</p> </article>