<article> <p style="text-align: justify;">ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুরের বাগমারি গ্রামের স্কুল শিক্ষক হারুন অর রশীদ মুসা। গ্রামের মানুষের কাছে পরিচিত ‘মুসা মাস্টার’ নামে। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি গড়ে তুলেছেন নিজের কৃষি খামার। নতুন নতুন ফল-ফসল চাষ করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। কৃষিতে তাঁর সাফল্যের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">বছরখানেক আগে শিক্ষক হারুন অর রশীদ মুসার কৃষি খামার দেখতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। মুসা মাস্টারের বাড়িটি একটি দ্বীপগ্রামে। গ্রামটিকে ঘিরে রেখেছে বনোহর বাঁওড়। গ্রামের অন্যদের বাড়ি থেকে মুসার বাড়িটি ভিন্ন। কারণ তাঁর বাড়ির উঠানে নানা ফল-ফুল গাছ নিয়ে রীতিমতো গবেষণা চলছে। তবে যে বিষয়টি আমাকে বিস্মিত করেছে সেটি হলো, মুসা বাংলাদেশে অ্যাভোকাডো চাষের সফল বাণিজ্যিক উদ্যোক্তা।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">মোট ২০ বিঘার সমন্বিত ফলবাগান মুসার। সেখানে তিনি উৎপাদন করছেন অ্যাভোকাডো, মাল্টা, পারসিমন, লংগান, থাই জাম, কমলা, ড্রাগন, ফিলিপিনো আখসহ বিভিন্ন ফল-ফসল। গ্রামের ফসলের মাঠে হাঁটতে হাঁটতে কথা হয় মুসার সঙ্গে। সারা মাঠেই বিভিন্ন ফসল। কোথাও হয়তো লাউ চাষ হচ্ছে, পাশের জমিতেই ড্রাগন ফল বা পেয়ারা। একসময় শুধু ধানই চাষ হতো এসব জমিতে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">মুসা বলছিলেন, উচ্চমূল্যের ফল-ফসল চাষের কাজে তিনি যুক্ত হয়েছেন ২০০৫ সালে। প্রথমে বাউকুল, পেয়ারা চাষ করেছেন। এরপর একে একে ড্রাগন, ফিলিপিনো আখ থেকে নানা রকম দেশি-বিদেশি উচ্চমূল্যের ফল চাষের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন তিনি।</p> <p style="text-align: justify;">আখের ক্ষেতের পাশ দিয়ে যেতে যেতে মুসা জানালেন, দুই বছর ধরে দুই বিঘা জমিতে চাষ করছেন ফিলিপিনো আখ। ফিলিপিনো আখ দেখতে কালচে রঙিন ও বেশ লম্বা। জানা গেল, মাঠের এই আখ ভোক্তাদের খাওয়ার জন্য নয়, উৎপাদন হচ্ছে বীজ হিসেবে। এই আখের চাহিদা অনেক। প্রতিটি পরিপক্ব আখ বীজ হিসেবে কমপক্ষে ১০০ টাকায় বিক্রি করা যায়। আর খাওয়ার আখের দাম প্রতিটি কমপক্ষে ৫০ টাকা। মুসা জানালেন, এক বিঘা জমিতে আছে ১২ হাজার আখ। চাষে মোট খরচ ৫০ হাজার টাকা। প্রতিটি আখ ৫০ টাকা হিসাবে বিক্রি করলেও ছয় লাখ টাকা অনায়াসেই পাওয়া যাবে। আর বীজ হিসেবে বিক্রি করলে পাওয়া যাবে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা।   </p> <p style="text-align: justify;">এরপর মুসা নিয়ে গেলেন ড্রাগন ফলের ক্ষেতে। ১২ বিঘা ড্রাগন বাগানের মধ্যে পিংক রোজ জাতের ড্রাগন আবাদ হচ্ছে পাঁচ বিঘায়। দেখতে গোলাপি রঙের এই ড্রাগন অন্য জাতের চেয়ে অধিক ফলনশীল ও লাভজনক।</p> <p style="text-align: justify;">শিক্ষক মুসার পরিশ্রম আর সুপরিকল্পনার ফলে উৎপাদিত হচ্ছে বৈচিত্র্যময় ফসল। এ থেকে তিনি পেয়েছেন সচ্ছলতা। সবচেয়ে বড় কথা, বহু মানুষের কাছে তিনি নতুন নতুন ফলের বীজ পৌঁছে দিচ্ছেন। আবার সৃষ্টি করেছেন বহু মানুষের কর্মসংস্থানও।</p> <p style="text-align: justify;">সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গোটা দেশেই রকমারি ফলের উৎপাদন লক্ষ করা যাচ্ছে। শুধু ড্রাগন নয়, বারোমাসি আম, মাল্টা, কমলা, স্ট্রবেরিসহ বিভিন্ন বিদেশি বা অপ্রচলিত ফল উৎপাদনের সাফল্য দেখতে পাচ্ছি। দেশজুড়ে এমন অসংখ্য কৃষক ও তরুণ উদ্যোক্তার হাত দিয়ে রচিত হচ্ছে কৃষি খাতের নতুন সাফল্যগাথা। তাঁদের অবদানে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের কৃষি অর্থনীতি। তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন দেশের পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নয়নেও।</p> <p style="text-align: justify;">ঝিনাইদহের স্কুল শিক্ষক হারুন অর রশীদ মুসার সমন্বিত কৃষি খামারটি নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য হতে পারে এক দারুণ অনুপ্রেরণা।</p> </article>