<p style="text-align: justify;">শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. রুস্তম আলী মীর (৭৮)। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডির) থাকলেও ভোটার তালিকায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে জীবিত থেকেও তিনি এখন মৃত। আর এতে চরম বেকায়দায় পড়তে হয়েছে তাকে। প্রথমেই বন্ধ করা হয়েছে তার প্রতিবন্ধী ভাতা। সেই সঙ্গে সরকারি সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তিনি। চিকিৎসার জন্যও যেতে পারছেন না ইন্ডিয়ায়।</p> <p style="text-align: justify;">ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধী রুস্তম আলী মীর ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চরযোশরদী ইউনিয়নের আশফোরদী গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই প্রতিবন্ধীর মেয়ে মোসা. রোকসানা। ওই অভিযোগ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।  </p> <p style="text-align: justify;">অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবন্ধী জীবিত রুস্তম আলীকে মৃত দেখিয়ে ২০২০ সালে তার প্রতিবন্ধীভাতা বন্ধ করে দেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর। ফলে চার বছর ধরে ভাতা থেকে বঞ্চিত তিনি। এতে আর্থিক সংকটে দুশ্চিন্তায় মানবেতর জীবন পার করতে হচ্ছে তাকে। শুধু তাই নয়, ভোটাধিকার থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন তিনি। ঘটনাটি তদন্ত করে দ্রুত ভাতা সচল করার দাবি জানান ভুক্তভোগীর পরিবার।</p> <p style="text-align: justify;">প্রতিবন্ধী রুস্তম আলী মীরের মেয়ে মোসা. রোকসানা অভিযোগ করে বলেন, ২০১৯ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় টাকার বিনিময়ে নির্বাচন অফিসের মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহকারী স্থানীয় চরযশোরদী ইউনিয়নের মুকন্দপট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সালাউদ্দিন মুন্সী ও আমাদের প্রতিবেশী কুদ্দুস আলী মীর যোগসাজশে ভোটার তালিকায় আমার বাবাকে মৃত ঘোষণা করেন।</p> <p style="text-align: justify;">তিনি আরো বলেন, আমার বাবার প্রতিবন্ধী ভাতা বাতিল করে অন্য কাউকে ভাতা পাইয়ে দিতেই তারা এই কাজটি করেন। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী আমার বাবার প্রতিবন্ধী ভাতা গত চার বছর ধরে বন্ধ করে রেখেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। তা ছাড়া আমার বাবা বয়স্ক মানুষ। বর্তমানে তিনি খুবই অসুস্থ। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া নেওয়া জরুরি। কিন্তু কাগজে-কলমে মৃত হওয়ায় ইন্ডিয়ায় যাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারছি না।  মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমার বাবাকে মৃত ঘোষণা করায় আর্থিক, সামাজিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত আমরা। এমন অবস্থায় বাধ্য হয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি।</p> <p style="text-align: justify;">জীবিত ব্যক্তিকে মৃত বানানোর বিষয়টি স্বীকার করে স্কুল শিক্ষক সালাউদ্দিন মুন্সি বলেন, রুস্তম আলী মীরের প্রতিবেশী কুদ্দুস আলী মীরের তথ্যের ভিত্তিতে তাকে মৃত ঘোষণা করে নগরকান্দা উপজেলা নির্বাচন অফিসে ফরম জমা দিয়েছি। এখানে আমার কোনো দোষ নেই।</p> <p style="text-align: justify;">তবে কুদ্দুস আলী মীর দাবি করে বলেন, স্কুল শিক্ষক সালাউদ্দিন মুন্সিকে আমি চিনিই না। তিনি আমার কাছ থেকে কোনো তথ্য নিতে আসেননি। রুস্তম আলী সম্পর্কে কোনো তথ্য আমি তাকে জানাইনি।</p> <p style="text-align: justify;">নগরকান্দা উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. আবু তালেব বলেন, আমাদের মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহকারীর গাফিলতির কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে।</p> <p style="text-align: justify;">আজ রবিবার সকালে নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাফী বিন কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, ভুক্তভোগী রুস্তম আলী মীরের মেয়ে এসংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ আমাদের দিয়েছেন। আমরা ঘটনাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করতে একটি কমিটি গঠন করেছি। ইতিমধ্যে তারা মাঠে কাজ করছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার সত্যতা পেলে ওই প্রতিবন্ধীর ভাতা ফিরিয়ে দেওয়াসহ দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।</p> <p style="text-align: justify;">ফরিদপুর সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক এস এম আলী আহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ভুলটা নির্বাচন অফিসের। কারণ নির্বাচন অফিস থেকে যাচাই-বাছাই করে তারপর হয়তো তার ভাতা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর। তাই এখানে আসলে আসলে আমাদের কিছু করার নেই। তারপরও বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা নেব।</p>