<article> <p style="text-align: justify;">মৌলভীবাজারের শমসেরনগরের কানিহাটি চা-বাগানের সেই শ্রমিক কমলি রবিদাস এবার জাতীয় পর্যায়ে ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ নির্বাচিত হয়েছেন। ‘সফল জননী’ ক্যাটাগরিতে এই সম্মাননা পাচ্ছেন তিনি। আগামী ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘আলোচনাসভা ও জয়িতা সম্মাননা প্রদান’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।</p> <p style="text-align: justify;">সেখানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কমলি রবিদাসের হাতে সম্মাননা তুলে দেবেন। খবরটি জেনে ভীষণ আনন্দিত কমলি রবিদাস। তিনি বলেছেন, ‘হামার খুউব আনন্দ লাগছে। জীবনে অনেক কষ্ট করিছি। প্রধানমন্ত্রীরে চোখে দেখমু। হামার কষ্ট দূর হবেক।’</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">মায়ের এমন অর্জনের খবরে আনন্দিত সন্তোষ রবিদাসও। তিনি বলেন, ‘মা জনমভর কষ্ট করেছেন। এখন প্রধানমন্ত্রী তাঁকে পুরস্কৃত করবেন; আমার জন্য এর চেয়ে খুশির খবর আর কী হতে পারে?’</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">মৌলভীবাজারের শমসেরনগরে ফাঁড়ি কানিহাটি চা-বাগানের এক শ্রমিক পরিবারে জন্ম সন্তোষের। জন্মের মাসছয়েকের মাথায় বাবাকে হারিয়েছিলেন। তাঁর মা কমলি রবিদাস তখন মজুরি পেতেন দৈনিক ১৮ টাকা। চরম অভাবের মধ্যে খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করেছেন সন্তোষ। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ছেলের ভর্তির টাকা, ইউনিফর্ম আর বই-খাতা কিনে দিয়েছিলেন মা।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">ঋণের কিস্তি শোধের জন্য চা-বাগানের কাজ ছাড়াও অনেক দূরে গিয়ে বালু শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। অভাবের সংসারে নিজে একপেট আধপেট খেয়ে ছেলেকে খাইয়েছেন। একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে পড়ার সুযোগ পান সন্তোষ। মা-ছেলের এই সংগ্রামের কাহিনি নিয়ে ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট ‘মায়ের নামটা কেটে দিল’ শিরোনামে একটি ফিচার প্রকাশিত হয়েছিল কালের কণ্ঠের ‘অবসরে’ পাতায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল আলোচিত ফিচারটি। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনের সূত্র ধরে অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠান সন্তোষকে চাকরির প্রস্তাব দিয়েছিল। পরে তিনি যোগ দেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে জুনিয়র অফিসার পদে। এখন তিনি ব্যাংকটির সিলেট লালদীঘির পাড় শাখায় রিলেশনশিপ অফিসার হিসেবে কর্মরত।</p> <p style="text-align: justify;"><span style="background-color: rgb(236, 240, 241);"><span style="color:#2980b9;">আড়ো পড়ুন: </span><a href="https://www.kalerkantho.com/online/miscellaneous/2024/03/06/1369213?fbclid=IwAR2bY2YvcLBqRiAJ958wtPlGPokoVKRkljG2R6Ap3u6mVE8WBx2nidEdCNQ"><span style="color:#2980b9;">সেই সন্তোষ এখন নবীন ব্যাংকার</span></a></span></p> <p style="text-align: justify;">এর আগে কমলি রবিদাসের জন্য এক লাখ টাকা ‘উপহার’ পাঠিয়েছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। আরো এক লাখ টাকা দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও নিউ ইয়র্কপ্রবাসী তিন বন্ধু মোহাম্মদ হোসেন খান, তালুকদার আবুল কালাম আজাদ ও এম এস আলম। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন ছাড়া আরো অনেকে নানাভাবে পাশে দাঁড়িয়েছিল পরিবারটির। কিন্তু নিজের সুখ নিয়ে ভাবেননি কমলি। চেয়েছিলেন অন্য শ্রমিকদেরও দুঃখ ঘোচাতে।</p> <p style="text-align: justify;">তাঁকে নিয়ে ওই বছরের ২৩ আগস্ট আরেকটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল অবসরে পাতায়। শিরোনাম, ‘হামার একটা ঘরকে সুখ দিয়া তো লাভ নাই’। তখন কমলি কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, ‘তোমরা লিখিবার পরে ঘরে অনেকে আসিছে। হামার একটা ঘরকে সুখ দিয়া তো লাভ নাইরে বাবু, হামার মতো আরো অনেক কমলি আছে বাগানে, হামি চাচ্ছি যে হামাদের বেতনটা বাড়িয়ে দেবে বাবুরা, তো হামরা সুখে থাকিব।’</p> </article>