<article> <p>আমাদের চারপাশে অনেক দেখা যায় এমন ফুলের অন্যতম কাঁটামেহেদি। তার পরও অবশ্য এই ফুলটি অনেকেরই অচেনা। কাঁটামেহেদি পোশাকি নাম হলেও বিদেশি এই ফুলটি কোথাও কোথাও দুরন্ত নামেও পরিচিত। এই ‘দুরন্ত’ নামটি এসেছে মূলত গাছটির উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Duranta erecta -এর প্রথমাংশ থেকে।</p> </article> <p>এই গাছের সঙ্গে রঞ্জক পাতাধারী মেহেদি গাছের কোনো সম্পর্ক আছে কি না জানা নেই। ঢাকার বিভিন্ন উদ্যানে এটি সহজদৃষ্ট। রাঙামাটি জেলার পাবলাখালী অভয়ারণ্যে গিয়েও এই গাছ দেখেছি। সেখানে গাছটি এখন অনেকটা বুনো স্বভাবের হয়ে উঠেছে।</p> <p>শুধু পাবলাখালীতেই নয়, এই গাছ আরো অনেক স্থানে এখন বুনো হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। গাঢ় নীল রঙের কাঁটামেহেদি ফুল প্রথম দেখলে আপনি মুগ্ধ হবেন। এর রংটা এতই নজরকাড়া যে তা কিছুতেই চোখ এড়াবে না। সুদূর দক্ষিণ আমেরিকার এই গাছ কবে, কখন, কিভাবে আমাদের দেশে এসেছে সে ইতিহাস এখন আর জানা যায় না।</p> <p>তবে গাছটি দেশের সর্বত্র এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে এখন আর বিদেশিও মনে হয় না। ফুল ও পাতার সৌন্দর্যের কারণে বাগান কিংবা লনে বেড়ার কাজেও ব্যবহার করা হয় এই গাছ। এ কারণে এখন অনেকেই স্কুল, বাগান বা অন্য কোনো স্থাপনায় প্রাকৃতিক দেয়াল তৈরিতে ব্যাপকভাবে এই গাছটি ব্যবহার করেন। শক্ত ডালপালা ও ঘন পাতার ঠাসবুননীতে গাছটি খুব সহজেই বেড়ায় পরিণত হতে পারে। তার সঙ্গে বাড়তি পাওনা উজ্জ্বল রঙের প্রায় বর্ষব্যাপী চলা ফুলের শোভা। তবে নিয়মিত ডালপালা ছাঁটা হলে ফুল পাওয়া যায় না।</p> <article> <p>কাঁটামেহেদি গুল্ম শ্রেণির বহুরূপী গাছ হিসেবে পরিচিত। এই গাছকে নানাভাবে নানা আকৃতিতে রাখা যায়। কোনো কোনো গাছ পাঁচ থেকে সাত মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। কোনো গাছে কাঁটা আছে, কোনোটিতে নেই। সৌন্দর্য ও উদ্যানসজ্জায় চাহিদার কারণে সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়েছে এই গাছ।</p> <p>কাঁটামেহেদির ফুল সুগন্ধি। নীল, রক্তনীল, বেগুনি, হালকা বেগুনি থেকে গাঢ় বেগুনি বা রক্ত বেগুনি পর্যন্ত রঙের বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। মঞ্জরিপত্র ক্ষুদ্র, পুষ্পবৃন্ত ২ থেকে ৪ মিমি লম্বা, বৃতি নলাকার, নল প্রায় ৪ মিমি লম্বা। ফলের বৃতি হলুদাভ, চকচকে, রোমহীন, ফলের পেছনে প্রসারিত হয়ে বাঁকা চঞ্চুতে পরিণত। ছোট আকৃতির গোলগাল ফল হলুদ বা কমলা রঙের হয়। ফুল ঝরে পড়ার পর গুচ্ছবদ্ধ ফলও শোভাবর্ধক। কাঁটামেহেদির পাতা ও বাকল ঔষধিগুণে ভরা। জন্মস্থান দক্ষিণ আমেরিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৫০০ শতাব্দীর বিখ্যাত ইতালিয়ান উদ্ভিদবিজ্ঞানী ক্যাস্টর ডুরান্টেসের নামে এর গণের নামকরণ হয়েছে।</p> </article>