ঢাকা, শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫
২৭ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫
২৭ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ মহররম ১৪৪৭

জেনে নিন ঘূর্ণিঝড়ের কোন বিপৎসংকেতের কী অর্থ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
জেনে নিন ঘূর্ণিঝড়ের কোন বিপৎসংকেতের কী অর্থ

পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এ পরিণত হয়েছে। সমুদ্রবন্দরসমূহকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারিসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিস এই হুঁশিয়ারিসংকেত দিয়েছে।

ঝড়ের সময় আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া সমুদ্রের ক্ষেত্রে ১১ এবং নদীবন্দরের ক্ষেত্রে ৪টি সংকেত নির্ধারিত আছে।

এ সংকেতগুলো সমুদ্রবন্দর ও নদীবন্দরের ক্ষেত্রে ভিন্ন বার্তা বহন করে।

সমুদ্রবন্দরের জন্য ১১টি সংকেত
১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত : জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পর দুযোগপূর্ণ আবহাওয়ার সম্মুখীন হতে পারে। দূরবর্তী এলাকায় একটি ঝোড়ো হাওয়ার অঞ্চল রয়েছে, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬১ কিলোমিটার, যা সামুদ্রিক ঝড়ে পরিণত হতে পারে।

২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারিসংকেত : দূরে গভীর সাগরে একটি ঝড় সৃষ্টি হয়েছে।

যেখানে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি। বন্দর এখনই ঝড়ে কবলিত হবে না। তবে বন্দর ত্যাগকারী জাহাজ পথিমধ্যে বিপদে পড়তে পারে।

৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত : বন্দর ও বন্দরে নোঙর করা জাহাজগুলো দুর্যোগকবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বন্দরে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণিবাতাসের একটানা গতিবেগ ৪০-৫০ কিমি হতে পারে।

৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারিসংকেত : বন্দর ঘূর্ণিঝড়কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১-৬১ কিমি। তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক অবস্থা এখনো আসেনি।

৫ নম্বর বিপৎসংকেত : বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতিত।

ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি। ঝড়টি বন্দরকে বাঁ দিক রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

৬ নম্বর বিপৎসংকেত : বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি। ঝড়টি বন্দরকে ডান দিক রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

৭ নম্বর বিপৎসংকেত : বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি। ঝড়টি বন্দরকে ওপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত : বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। ঝোড়ো বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিমি বা তার ঊর্ধ্বে হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে বাঁ দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।

৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত : বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। ঝোড়ো বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিমি বা তার ঊর্ধ্বে হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।

১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত : বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। ঝোড়ো বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিমি বা তার ঊর্ধ্বে হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরের ওপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে।

১১ নম্বর যোগাযোগবিচ্ছিন্ন সংকেত : আবহাওয়া বিপৎসংকেত প্রদানকারী কেন্দ্রের সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং স্থানীয় কর্মকর্তা আবহাওয়া অত্যন্ত দুযোগপূর্ণ বলে মনে করেন।

নদীবন্দরের জন্য ৪টি সংকেত
১ নম্বর নৌ সতর্কতাসংকেত : বন্দর এলাকা ক্ষণস্থায়ী ঝোড়ো আবহাওয়ার কবলে নিপতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিমি গতিবেগের কালবৈশাখী ক্ষেত্রেও এই সংকেত প্রদর্শিত হয়। এ সংকেত আবহাওয়ার চলতি অবস্থার ওপর সতর্ক নজর রাখারও তাগিদ দেয়।

২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত : বন্দর এলাকা নিম্নচাপের সমতুল্য তীব্রতার একটি ঝড়, যার গতিবেগ ঘণ্টায় অনূর্ধ্ব ৬১ কিমি বা একটি কালবৈশাখী ঝড়, যার বাতাসের গতিবেগ ৬১ কিমি বা তদূর্ধ্ব। নৌযান এদের যেকোনোটির কবলে নিপতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৬৫ ফুট বা তার কম দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট নৌযানকে দ্র্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে।

৩ নম্বর নৌ বিপৎসংকেত : বন্দর এলাকা ঝড়েকবলিত। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ একটানা ৬২-৮৮ কিমি পর্যন্ত গতিবেগের একটি সামুদ্রিক ঝড় শিগগিরই বন্দর এলাকায় আঘাত হানতে পারে। সব নৌযানকে অবিলম্বে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে।

৪ নম্বর নৌ-মহাবিপৎসংকেত : বন্দর এলাকা একটি প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার সামুদ্রিক ঝড়ে কবলিত এবং শিগগিরই বন্দর এলাকায় আঘাত হানবে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিমি বা তদূর্ধ্ব। সব ধরনের নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সাপের হাড় হজমের রহস্য উদঘাটন করলেন গবেষকরা

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
সাপের হাড় হজমের রহস্য উদঘাটন করলেন গবেষকরা
ছবিসূত্র : এএফপি

পৃথিবীর মাংসাশী প্রাণীরা যখন শিকার ধরে খায় তখন সাধারণত হাড়গুলো ফেলে রাখে। কিন্তু সাপের ক্ষেত্রে চিত্রটা একেবারে আলাদা। সাপ তার চোয়াল খুলে শিকারকে পুরোপুরি গিলে ফেলে, এমনকি সেই শিকারের হাড়ও আর আগের রূপে বের হয় না—না বমির মাধ্যমে, না মলত্যাগের মাধ্যমে। এই অবিশ্বাস্য হাড় হজম করার ক্ষমতা এতদিন পর্যন্ত রহস্যই ছিল।

এবার বিজ্ঞানীরা বার্মিজ পাইথন (পাইথন মালুরা বিভিত্তাটুস)-এর অন্ত্রে এক নতুন ধরনের কোষের সন্ধান পেয়েছেন, যেগুলো এই সম্পূর্ণ হাড় হজমের প্রক্রিয়ায় মূল ভূমিকা পালন করে।

ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটি অব মন্টপেলিয়ারের জীববিজ্ঞানী জ্যাঁ-হার্ভে লিনিয়ো বলেন, ‘পাইথনের অন্ত্রের গঠন পর্যবেক্ষণে এমন কিছু কণার উপস্থিতি লক্ষ্য করেছি, যা আমি আগে কোনো কশেরুকার মধ্যে দেখিনি।’ এই কোষগুলো সাধারণ অন্ত্রের শোষণকারী কোষের মতো নয়। এগুলো খুব সরু, মাইক্রোভিলি (অন্ত্রে শোষণ বৃদ্ধির ক্ষুদ্র অনুবৃন্ত) সংক্ষিপ্ত এবং ওপরের অংশে এক ধরনের ভাঁজ থাকে, যা একটি গহ্বর বা ‘ক্রিপ্ট’ তৈরি করে।

এই বিশেষ কোষগুলো সাপের শরীরে বিপুল পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস গ্রহণ এবং নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। সাধারণত হাড় হজম করার সময় এই খনিজ পদার্থ অতিরিক্ত মাত্রায় শরীরে প্রবেশ করলে তা বিপজ্জনক হতে পারে। কিন্তু সাপের এই কোষগুলো সেই ঝুঁকি সামাল দিতে সক্ষম।

গবেষণার পদ্ধতি ও ফলাফল

বিজ্ঞানীরা মাইক্রোস্কোপ এবং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে পাইথনের অন্ত্রের কোষগুলো বিশ্লেষণ করেন।

তারা তিনটি ধরনের সাপ নিয়ে পরীক্ষা করেন—যারা খাবার না খেয়ে ছিল, যারা হাড়সহ শিকার খেয়েছে এবং যারা হাড়বিহীন খাবার খেয়েছে। ফলাফলে দেখা যায়, নতুন এই কোষগুলোতে একটি কেন্দ্রীয় গহ্বর থাকে। যেখানে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং লৌহসমৃদ্ধ কণাগুলোর স্তর জমা হয়।

যে সাপ খাবার খায়নি তার কোষগুলোর গহ্বর ফাঁকা ছিল। যেসব সাপ হাড়বিহীন খাবার খেয়েছে, তাদের কোষে কণার উপস্থিতি ছিল না, যদিও কিছু লৌহ কণা গহ্বরে ছিল।

কিন্তু যখন হাড়বিহীন খাবারে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট যোগ করা হয়, তখন সেই গহ্বরগুলো আবার কণায় পূর্ণ হয়ে যায়। সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হলো, পাইথনের মলে কোনো হাড় বা হাড়ের অংশ পাওয়া যায়নি। যা প্রমাণ করে তারা হাড় সম্পূর্ণ হজম করতে পারে।

সাধারণভাবে, খুব কম প্রাণী ইচ্ছাকৃতভাবে হাড় খায়। এই অভ্যাসকে বলা হয় অস্টিওফ্যাজি। এটি ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস গ্রহণের উদ্দেশ্যে ঘটে থাকে। গৃহপালিত সাপদের যদি কেবল মাংস বা হাড়বিহীন খাদ্য খাওয়ানো হয়, তবে তাদের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এ থেকে বোঝা যায়, হাড় তাদের খাদ্যতালিকার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

অন্যান্য সাপ ও প্রাণীতেও মিলেছে এই কোষ। এই কোষগুলো শুধু বার্মিজ পাইথন নয় আরো কিছু সাপ এবং সরীসৃপেও পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো, সাধারণ বোয়া (বোয়া কনস্ট্রিক্টর), সবুজ অ্যানাকোন্ডা (ইউনেকটেস মুরিনাস), রক্তের পাইথন (পাইথন ব্রোঞ্জার্সমাই), জালিকাযুক্ত পাইথন (মালয়োপাইথন রেটিকুলাটাস), মধ্য আফ্রিকান রক পাইথন (পাইথন সেবা) এবং কার্পেট পাইথন (মোরেলিয়া স্পিলোটা)। এমনকি গিলা মনস্টার নামক একটি টিকটিকিও এই কোষ বহন করে।

এইসব তথ্য থেকে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, হয়তো এই কোষগুলো বিবর্তনের প্রাথমিক পর্যায়ে উদ্ভূত হয়েছিল অথবা বিভিন্ন প্রজাতিতে আলাদাভাবে গঠিত হয়েছে।

গবেষক লিনিয়ো বলেন, যেসব সামুদ্রিক শিকারি মাছ বা জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ সম্পূর্ণ হাড় খায়, তারাও একই ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করে থাকতে পারে। এমনকি যেসব পাখি হাড় খায় তারাও গবেষণার আকর্ষণীয় বিষয় হতে পারে।’

এই গবেষণাটি ‘জার্নাল অফ এক্সপেরিমেন্টাল বায়োলজি’-তে প্রকাশিত হয়েছে এবং সোসাইটি ফর এক্সপেরিমেন্টাল বায়োলজি অ্যানুয়াল কনফারেন্স বেলজিয়ামে উপস্থাপিত হয়েছে। এই আবিষ্কার আমাদের সরীসৃপদের হজম প্রক্রিয়া সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিচ্ছে এবং প্রমাণ করছে যে, প্রকৃতির জটিলতা এখনও অনেকটাই রহস্যে মোড়ানো।

সূত্র : সাইন্স অ্যালার্ট
 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

বাঁশির সুরের মূর্ছনায় জীবন চলে হৃদয়ের

আলম ফরাজী, ময়মনসিংহ
আলম ফরাজী, ময়মনসিংহ
শেয়ার
বাঁশির সুরের মূর্ছনায় জীবন চলে হৃদয়ের
বাঁশি হাতে হৃদয় চন্দ্র বর্মনে। ছবি : কালের কণ্ঠ

বাঁশিতে সুরের মূর্ছনা। যেন সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। রামায়ণ থেকে কীর্তন এমনকি ঘরোয়া অনুষ্ঠানেও বিকল্প নেই বাঁশিওয়ালা হৃদয় চন্দ্র বর্মনের (২৫) হৃদয় কাঁপানো সুরের মূর্ছনার। শখের বসে শিখেছিলেন বাঁশি বাজানো, আর বর্তমানে সেই বাঁশির সুরেই তার জীবন চলে।

বাঁশি প্রেমিক হৃদয়ের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার সাভার গ্রামে। বাবা নিরঞ্জন চন্দ্র বর্মন একজন মাছ বিক্রেতা। দারিদ্র্যের কারণে এইচএসসি পাস করে আর সুযোগ হয়নি পড়ার। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য কৈশোর থেকেই বিভিন্ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত হন কিন্তু পরিবারের দারিদ্র্য ঘোচেনি।

আরো পড়ুন
ডুবে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, পানিবন্দী লাখো মানুষ

ডুবে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, পানিবন্দি লাখো মানুষ

 

ছোট থেকেই বাঁশির প্রতি দুর্বলতা হৃদয়ের। কেউ বাঁশি বাজালে মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। বেড়ে ওঠার পর থেকেই বাঁশি বাজানোর চেষ্টা চালান তিনি। একপর্যায়ে ইউটিউব দেখে আয়ত্ত শুরু করেন বাঁশি বাজানো।

প্রয়াত বারী সিদ্দিকি, জালাল ও শহিদুল ইসলাম শহিদকে দেখে হন অনুপ্রাণিত।

শখের বসে শেখা বাঁশি ঘিরেই এখন হৃদয়ের জীবন। পাড়ার আড্ডায়, বিয়ে বাড়ি বা যেকোনো অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজানো ছাড়াও বছরের অর্ধেক সময় পার করেন একটি দলের হয়ে। কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহ ছাড়াও প্রখ্যাত আনেক দলের হয়ে তিনি এখন বাজিমাত করছেন। তার নেতৃত্বেই দল গঠন হয়।

নিয়মিত কীর্তন ছাড়াও রামায়ণে অংশগ্রহণ করছেন তিনি। এ ছাড়া পাড়ার সংগীত দলের হয়েও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজান তিনি। এ জন্য পান বেশ ভালো পারিশ্রমিক।

হৃদয় জানান, অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহ করতে গেলে বংশীবাদক হিসেবে কদর থাকে না। এ জন্য বাঁশিকেই বেছে নিয়েছেন জীবিকা হিসেবে। এতে একদিকে তার যেমন শিক্ষা হচ্ছে অন্যদিকে প্রতি সময়েই তিনি নতুন নতুন আবিষ্কার করতে পারছেন। বাঁশি শেখা খুব একটা সহজ ছিল না। বাড়িতে বাঁশি বাজানো শিখতে গেলে প্রতিবেশীরা নানা ধরনের কুসংস্কারের কথা শোনাতেন। যেমন এক মায়ের এক সন্তানেরা ভাত খেতে পারে না, জ্বীন-পরী আসে, সাপ আসে ইত্যাদি নানা ধরনের কুসংস্কার দিয়ে বাঁশি বাজানো বন্ধ করতে বলে। এর মধ্যেও তা অব্যাহত রেখে আজ এ পর্যন্ত আসা। এখন তিনি একজন পেশাদার বাঁশিওয়ালা।

তিনি আরো জানান, যখন স্কুলে পড়তেন তখন শিক্ষকরা বলতেন পড়ালেখার পাশাপাশি ব্যতিক্রম কিছু করা প্রয়োজন। যা জীবনযুদ্ধে কাজে আসবে। এই কথা স্মরণে রেখে পড়ার ফাঁকে তিনি বাঁশি আয়ত্ত করেন। এখন আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় না তাকে। বছরের ছয় মাস তিনি একটি দলের হয়ে কমপক্ষে ২ লাখ টাকা আয় করেন। 

হৃদয়ের বন্ধু শরিফ বলেন, ‘হৃদয় একজন শিক্ষিত তরুণ। তার মেধা অত্যন্ত ভালো। গভীর রাতে যখন সে বাঁশি বাজায় তখন হৃদয় ছুঁয়ে যায়। জীবন সংগ্রামে হৃদয় অন্যদের উদারহণ। তাকে নিয়ে গর্ব করাই যায়।’

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ভাসা ভাসা ভাষা

মুত্তাকী বিন কামাল
মুত্তাকী বিন কামাল
শেয়ার
ভাসা ভাসা ভাষা
সংগৃহীত ছবি

ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে আমারও কষ্ট হইতেসিল, আমার বন্ধু অ্যারনকে সাক্ষী করলাম। আমার জাপানিজ জুনিপার বনসাই বাংলা গানে উত্তেজিত হইলো কেন? ব্যাপারটার গোড়া হইলো, নৃতত্ত্বের মাল্টিস্পিসিস বা বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণের সাথে মানুষের সামাজিকতা নিয়ে আমি গবেষণা করি। আমার পিএইচডি গবেষণার মূল নজর হইলো মানুষের সাথে উদ্ভিদের সামাজিকতা ও যোগাযোগের দিকে। তাই আমি হার্ভার্ড গবেষকদের একটা উঠতি কম্পানির কাছ থেকে একটা প্লান্ট স্পাইকার বক্স বা সহজ বাংলায় গাছের ইসিজি যন্ত্র সংগ্রহ করি।

যন্ত্রটার কাজ হইল, গাছের কোষগুলার মধ্যে যে বিদ্যুৎপ্রবাহ হয় তাকে ধরা ও বৈদ্যুতিক গ্রাফ হিসাবে মোবাইলের অ্যাপে দেখানো। 

তো আমি তখন টেক্সাসের স্যান এন্টোনিওতে। জুন-জুলাইয়ে পাগলপারা গরম পড়ে ওইখানে, ফারেনহাইটে প্রায়ই ১১২-তে যায়গা। একফোঁটা মেঘও থাকে না আকাশে।

এমন অবস্থায় আমি আমার জাপানী জুনিপার বনসাইকে স্পাইকার যন্ত্রটার সাথে যুক্ত করে, তার পাশে বসে দুটো রবীন্দ্র গান গাইতাম। 'শাওন ও গগনে' এবং 'নীল অঞ্জন ঘন'। এই দুইটা গানের মজাটা হইতেসে যে, উভয় গানই বর্ষার আগমনী বার্তা বহন করে এবং তাদের ছন্দে বৃষ্টির গতি ও প্রকৃতির এক আশ্চর্য প্রতিফলন দেখা যায়। 'নীল অঞ্জন ঘন' গানটা প্রধানত মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত, যেখানে প্রতিটা অক্ষরের জন্য একটা নির্দিষ্ট মাত্রার বরাদ্দ থাকে।
এই গানের ধীর লয় এবং টাইনা গাওয়ার প্রবণতা বর্ষার প্রারম্ভিক সময়ের গুরুগম্ভীর পরিবেশ এবং মেঘে ঢাকা আকাশের থমথমে ভাবকে ফুটায়ে তোলে। গানের চলন যেন মেঘের ধীর সঞ্চালনের মতো, যা বর্ষার প্রথম ধারাপাতের পূর্বাভাস দেয়। অন্যদিকে, 'শাওন গগনে ঘোর ঘনঘটা' গানটা স্বরবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে, যা অপেক্ষাকৃত দ্রুত লয় এবং সাবলীল গতিময়তার জন্য পরিচিত। এই ছন্দে সাধারণত শ্বাসাঘাতের একটা বিশেষ ভূমিকা থাকে। গানের দ্রুত চলন এবং অনুপ্রাসের ব্যবহার মুষলধারার বৃষ্টির ঝরঝর শব্দ এবং বর্ষার উন্মত্ত প্রকৃতিকে তুলে ধরে।
যেন বৃষ্টির অবিরাম পতনের ধ্বনি এবং তার চঞ্চলতা ও উল্লাসের প্রতীক।

বৃষ্টির ছন্দের সাথে এই গানগুলির মিল আলোচনা প্রসঙ্গে বলা যায় যে, বর্ষার দুইটা ভিন্ন রূপ এই গান দুইটাতে ছন্দের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। 'নীল অঞ্জন ঘন' বৃষ্টির শান্ত ও স্নিগ্ধ প্রথম পর্যায়কে প্রতিনিধিত্ব করে, যেখানে বৃষ্টিপাত শুরু হচ্ছে ধীরে ধীরে, আর 'শাওন গগনে' বৃষ্টির উন্মত্ত এবং প্রবল ধারাকে ফোটায়ে তোলে, যখন বৃষ্টি তার পূর্ণ বেগে ঝরে পড়ে। সংগীত গবেষক এবং রবীন্দ্রসংগীত বিশেষজ্ঞরা প্রায়শই রবীন্দ্রনাথের গানে প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান, বিশেষত বৃষ্টির ছন্দময় বিন্যাসের গভীর প্রভাবের কথা উল্লেখ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত বিশেষজ্ঞ ড. শুভ গুহঠাকুরতার গবেষণায় রবীন্দ্রনাথের গানে ছন্দের বৈচিত্র্য এবং তার সাথে প্রাকৃতিক উপাদানের সম্পর্কের বিস্তারিত আলোচনা পাওয়া যায় (শুভ গুহঠাকুরতা, ২০১২। রবীন্দ্রসংগীত: ভাবনা ও ছন্দ। কলকাতা: রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। এই নির্দিষ্ট বইটার উল্লেখ একটা উদাহরণ মাত্র। রবীন্দ্রনাথের সংগীত ও ছন্দ নিয়ে আরো অনেক বিশেষজ্ঞের কাজ রয়েছে যা এই বক্তব্যের সমর্থন করবে)
আমার জাপানিজ জুনিপারের সংগীততত্ত্বে এতটা জানাশোনা থাকার কথা না। 

তবে, যেহেতু গানগুলা বৃষ্টির বিভিন্ন সময়ের শব্দ ও ছন্দকে অনুকরণ  করতেসে, সেই ছন্দ বা শব্দ বুঝতে জুনিপারের সমস্যা হওয়ার কথা না। তাই, এই গান দুইটা গেয়ে শেষ করার ঠিক তিন – চার সেকেন্ড পর অ্যাপের স্ক্রিনে উঁচু একটা স্পাইক দেখাতো। যার অর্থ, সে উত্তেজিত। আমার ডক্টরাল গবেষণার প্রস্তাবের সমর্থনে আমি একই ঘটনা আমার কমিটিকে দেখাইসি। আরো ইঙ্গিতপূর্ণ হইল যে, প্রায় চার হপ্তা পর যখন বৃষ্টি আসলো, তারপর থেকেই জুনিপারের স্পাইকটা বন্ধ হয়ে গেল। 

গাছের সাথে বাংলা আর ব্রজবুলি ভাষার এই যোগাযোগ কিন্তু ব্যাকরণ দিয়ে না, কন্টেক্সট বা পরিপ্রেক্ষিত দিয়ে। জুনিপার অনেকদিন পানি না পেয়ে যখন বৃষ্টির অনুকরণ শব্দ শুনতে পায়, তখন সে উত্তেজিত হয় পানির জন্য, ব্যাকরণের ব্যুৎপত্তিতে না। উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ডেভিড চ্যামোভিতস তার “হোয়াট এ প্ল্যান্ট নোউস (একটা গাছ কি জানে)” নামক বইয়ে, দেখাইসেন যে, গাছ শুনতে পায়। পানির পাইপের শব্দ শুনে অনেক আগাছাকেই সেদিকে আগায় যাইতে দেখা যায়। 

এই ঘটনা দিয়ে লেখা শুরু করলাম। কারণ বাংলাদেশে বেড়ে উঠসি এই ধারণা সাংস্কৃতিকভাবে বদ্ধমূল করতে করতে যে, ব্যাকরণ মেনে চলাটাই ভাষা, বা অন্তত সভ্য ভাষা। কিন্তু, দীর্ঘ সময় গবেষণা এবং দেখাশোনা করে বুঝলাম, যে ভাষা ব্যাকরণের পিছে দৌড়ায় সেই ভাষা মারা যায়, আর যেই ভাষার পিছে ব্যাকরণ দৌড়ায়, সেই ভাষা বেঁচে থাকে, বেড়ে উঠে, ভালো থাকে। কিভাবে? আসেন বুঝায়ে বলি। 

ব্যাপারটা হইল পরিপ্রেক্ষিত। যেমন, বাংলা 'মামা' শব্দটা। আমার সিসিলিয়ান বন্ধু ইমানুয়েলকে বলেছিলাম যে, মামা একটা সার্বজনীন আদুরে ডাক। এই ধারণা নেয়ার কিসুদিনের মধ্যেই ইমানুয়েল একটা অনূদিত বাংলা বইয়ে দেখে যে, মামা মানে মায়ের ভাই, তারপর ব্যাকেটে লেখা সার্বজনীন আদুরে ডাক। তো ইমানুয়েল আমাকে ফোন করেই বলত 'মামা!', তারপর সিসিলিয়ান স্বভাবে গালাগালি শুরু করত (গালাগালিটা সিসিলিয়ানদের আদুরে ভাষা)। কিন্তু ইংরেজিতে 'মামা' মানে আম্মাহুজুর, তাই অনেকেই ইমানুয়েলকে বলত, 'তুই তোর মায়ের সাথে এভাবে কথা বলিস?' আবার, বাংলার জঙ্গুলে এলাকাগুলাতে যান, যেমন সুন্দরবনে বাঘ হইল ছোট মামা, ডাকাইত হইল মেজ মামা আর ফরেস্টার হইল বড়মামা। চকোরিয়াতে আমার বন্ধু সাইদুর রহমান আমাকে দেখাইল যে, ক্ষ্যাপা হাতিকে এলাকার লোকজন 'মামা' বলে শান্ত করে। হাতির তো 'মামা – ভাগিনার' আদুরে সম্পর্ক বোঝার কথা না। হাতি কেমনে বোঝে? 

বিষয় হইল কনটেক্সট। মানুষসহ প্রাণীকুল তাদের চারপাশ সম্পর্কে ধারণা তৈরি করে। আই. পি পাভলভ,. (১৯২৭। কন্ডিশনড রিফ্লেক্সেস: এন ইনভেস্টিগেশন অফ দ্য ফিজিওলজিক্যাল অ্যাকটিভিটি অফ দ্য সেরিব্রাল কর্টেক্স। লন্ডন: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস) মূলত কুকুরের পাচনতন্ত্র নিয়ে গবেষণা করতেসিলেন এবং লক্ষ্য করেন যে, খাবার দেখলে কুকুরের মুখে স্বাভাবিকভাবেই লালা আসে। এইটা একটা স্বাভাবিক বা অনানুমানিক প্রতিক্রিয়া (Unconditioned Response - UCR), যা একটা স্বাভাবিক বা অনানুমানিক উদ্দীপক (Unconditioned Stimulus - UCS), অর্থাৎ খাবারের কারণে ঘটে।

এরপর তিনি একটা পরীক্ষা শুরু করেন। খাবার দেওয়ার আগে তিনি একটা ঘণ্টা বাজাতেন। প্রথমে কুকুর শুধু খাবার দেখলেই লালা ঝরাতো, ঘণ্টার শব্দে নয়। কিন্তু কয়েকবার খাবার (UCS) দেওয়ার ঠিক আগে ঘণ্টা (Neutral Stimulus - NS) বাজানো হলে, কুকুর ধীরে ধীরে ঘণ্টার শব্দের সাথে খাবারের সম্পর্ক তৈরি করে। কিছু সময় পর দেখা গেল, শুধু ঘণ্টার শব্দ শুনেই কুকুরের মুখে লালা আসে, এমনকি খাবার না দিলেও। এই অবস্থায় ঘণ্টাটা একটা আনুমানিক বা সাপেক্ষ উদ্দীপকে (Conditioned Stimulus - CS) এবং ঘণ্টার শব্দ শুনে লালা ঝরানোকে একটা আনুমানিক বা সাপেক্ষ প্রতিক্রিয়া (Conditioned Response - CR) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এই পরীক্ষার মাধ্যমে পাভলভ দেখান যে, প্রাণীরা একটি নিরপেক্ষ উদ্দীপককে (যেমন ঘণ্টা) একটা স্বাভাবিক উদ্দীপকের (যেমন খাবার) সাথে সংযুক্ত করে নতুন আচরণ শিখতে পারে। অর্থাৎ, একটা উদ্দীপকের (ঘণ্টা) উপস্থিতি অন্য একটা উদ্দীপকের (খাবার) প্রত্যাশা তৈরি করে এবং তার ফলস্বরূপ একটা প্রতিক্রিয়া (লালা ঝরানো) ঘটে। এইটা কেবল শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া নয়, বরং পরিবেশ থেকে শেখার একটা মৌলিক কৌশল। অর্থাৎ  পরিপ্রেক্ষিত থেকে জীবেরা শেখে, পরিস্থিতির অর্থ তৈরি করে তাদের মনে। 
আর এই অর্থ তৈরির পর থেকে শুরু হয় ব্যাকরণের। কোনো ধ্বনি বা ধ্বনিগাছাকে সাধারণত সংজ্ঞা দেওয়া প্রাণীরা কী অর্থে ব্যবহার করে, তা-ই শব্দার্থ। কিন্তু ঠিক মামা শব্দটার যেমন আভিধানিক অর্থ হইল মায়ের ভাই বা সার্বজনীন আদুরে ডাক, কিন্তু পরিপ্রেক্ষিত অনুযায়ী সেই মামা মায়ের ভাই থেকে বন্ধু, মা বাঘ-ভাল্লুক , ডাকাত – ফরেস্টার যে কেউ হইতে পারে। আবার একেক পরিপ্রেক্ষিতে মামা ডাকটা সতর্কতা, যেমন বাঘ আসলে “মামায় আইসে” বলে দৌড় দেওয়া। আবার মেজো মামারা একসময় ফরেস্টার বড়মামারা আসলে “বড় মামা/ফরেস্ট” বলে দৌড় দিত। আবার চকোরিয়ার কলি আপা ক্ষিপ্ত হাতির সামনে পড়ে “মামা – আমার বাচ্চারে খাইলে আমারেও খাও – নাইলে আমগো যাইতে দাও” বলে অনুরোধ করায়, হাতি তাদের কোনো ক্ষতি করে নাই বলে দাবি করেন আমার আর সাইদের কাছে। 

তাই কেবল ব্যাকরণের নিয়ম আর অর্থ মেনে চললে ভাষার এই সৃষ্টিশীলতা ব্যাহত হয়। ব্যাহত হয় ভাষায় নতুন শব্দ, ধারণা, সংজ্ঞা, আবেগ, অনুভূতি এবং নতুন অর্থ তৈরি। শুধু তাই নয়, যখন এই অর্থগুলোকে নির্দিষ্ট ব্যাকরণের বাঁধনে বেঁধে ফেলার রাজনৈতিক বা ঔপনিবেশিক চেষ্টা হয়, তখন হারিয়ে যায় অজস্রে অর্থ, অনুভূতি, সংজ্ঞা, ব্যাখ্যা, ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। যেমন, ২০১৪ সালে আমি টেকনাফ–সেন্ট মার্টিন অঞ্চলে সামুদ্রিক প্রাণীর স্থানীয় নাম নিয়া করা একটা গবেষণায়, আল মারুফ রাসেল ভাইকে সহযোগিতা করসিলাম। তখন দেখসিলাম, প্রচলিত বাংলা বা ইংরেজি নাম না জেনেও স্থানীয় জেলেরা স্রেফ ছবি দেখে প্রায় ৭৫টা মাছের প্রজাতির স্থানীয় নাম, কোথায় পাওয়া যায়, কখন পাওয়া যায়, খাইতে কেমন এমনকি এই মাছের সাথে কী কী স্থানীয় গল্প আর বিশ্বাস জড়ায় আসে তা খুব সহজে বলে গেসেন। অথচ এই জেলেদের সন্তানরা এই একই মাছগুলার নাম শেখে ইংরেজি, বাংলা আর ল্যাটিন অর্থাৎ ইউরোপীয় বৈজ্ঞানিক নাম হিসেবে। পরীক্ষার খাতায় তাদের যে তথ্যগুলা উগরে দিতে হয়, সেই তথ্যের মূল সাবজেক্ট অর্থাৎ সামুদ্রিক প্রাণীদের পারিবারিকভাবে চিনেও সেই জ্ঞান তাদের পরীক্ষায় কাজে আসে না। আর বাংলাদেশের শিক্ষা ও গবেষণাও এই হাতে কলমে শেখা ও ধরে রাখা জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হয়। 

তাই ব্যাকরণের উচিত ভাষার পিছে দৌড়ানো। ভাষার পরিপ্রেক্ষিত, সামাজিক, আন্ত-প্রজাতিক এবং আঞ্চলিক ধারণা, সংজ্ঞা ও অর্থ তৈরির ব্যাপারে ব্যাকরণের নিয়মিত নিজেকে আপডেট করা প্রয়োজন। বিদেশি ভাষায় যেসব সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক এবং সামাজিক ধারণা আছে, সেগুলো কিভাবে বাংলা ভূখণ্ডের বিভিন্ন ভাষা, উপভাষা এবং আঞ্চলিকতায় অনুদিত হয়, তার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকলে আমাদের জন্য এইসব ক্ষেত্রে ধারণাগুলোকে বুঝতে এবং বাস্তব ক্ষেত্রে কাজে প্রয়োগ করতে অনেক সুবিধা হবে। এবং ভাষার এরকম চর্চার মধ্য দিয়ে, বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও প্রাকৃতিক নিয়মের নিজস্ব নতুন সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা তৈরি করা অনেক সহজ হয়ে যাবে এবং এই বিষয়গুলার চর্চা আরো ব্যাপৃত হবে।

লেখক: নৃতত্ত্ববিদ ও জটিলতা বিশ্লেষক। বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট সান অ্যান্টোনিও-তে নৃতত্ত্বে পিএইচডি গবেষণায় নিয়োজিত।

মন্তব্য

বৃদ্ধের সব সম্পত্তি এক বিড়ালের নামে

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
বৃদ্ধের সব সম্পত্তি এক বিড়ালের নামে
সংগৃহীত ছবি

একটি মাত্র সহজ শর্ত। সেই শর্ত পূরণ করতে পারলেই ৮০ বছরের এক বৃদ্ধের স্থাবর ও অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি চলে আসতে পারে হাতের মুঠোয়। শর্তের নিয়মও এমন কিছু কঠিন নয়। সারা দিন ধরে যত্নআত্তি করতে হবে এক জনকে।

আমৃত্যু। আর তাতেই মিলবে লাখ লাখ টাকার সম্পত্তি ও বাড়ি। ‘প্রিয়জন’কে দেখাশোনা করার শর্তে ৮০ বছরের এক বৃদ্ধ অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিতেই তা নিয়ে শোরগোল পড়ে গেছে। ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে’র এক প্রতিবেদন অনুসারে, চিনের এক বয়স্ক ব্যক্তি যে কাউকে তার সম্পূর্ণ উত্তরাধিকার ছেড়ে দিতে ইচ্ছুক।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮০ বছর বয়সি ওই বৃদ্ধ তার পোষা বিড়ালের দেখাশোনা করতে আগ্রহী এমন কাউকে তার পুরো সম্পত্তি দান করে দেবেন বলে সমাজমাধ্যমে ঘোষণা করেছেন। লং নামের ওই ব্যক্তি দক্ষিণ চিনের গুয়াংডং প্রদেশে থাকেন। ১০ বছর আগে স্ত্রীকে হারানোর পর থেকে লং তার বিড়াল জিয়ানবার সঙ্গে একাকী জীবনযাপন করছেন। এক বৃষ্টির দিনে তিনি জিয়ানবা এবং তার তিনটি বিড়ালছানাকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করেছিলেন।

স্ত্রীর মারা যাওয়ার পর কেবল জিয়ানবাই তার সঙ্গে রয়ে গেছে।

তার মৃত্যুর পর পোষা প্রাণীর কী হবে তা নিয়ে চিন্তিত লং। জিয়ানবার যত্ন নিতে সক্ষম একজনকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন তিনি। গুয়াংডঙের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলিতে বলা হয়েছে, লং স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তিনি তার ফ্ল্যাট, সঞ্চয় এবং অন্যান্য সম্পদ এমন কারও হাতে তুলে দিতে চান যিনি তার পোষ্যের যত্ন করবেন। তবে এ রকম লোভনীয় প্রস্তাব সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত উপযুক্ত কাউকে খুঁজে পাননি লং।

সমাজমাধ্যমে এই বিষয়টি ভাইরাল হতেই নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেটাগরিকের। কয়েক জন উত্তরাধিকারের আশা না করেই বিড়ালটিকে দত্তক নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। অন্য এক জন মন্তব্য করেছেন, ‘যদি কেউ প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে ইচ্ছুক না হন, তা হলে হয় তারা সত্যিই বিড়ালদের ভালবাসেন না অথবা বৃদ্ধের শর্তগুলি খুবই কঠিন কিছু।’ তৃতীয় ব্যক্তি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বৃদ্ধ সম্পত্তি দিলেও পরে তার বৈধ উত্তরাধিকারী এসে এই বিষয়টি নিয়ে জটিলতা তৈরি করতে পারেন।

সূত্র: আনন্দবাজার

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ