<p>অস্ট্রেলিয়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের পছন্দের তালিকায় বর্তমান বিশ্বে তৃতীয়। এখানকার মোট ৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সাতটিরই অবস্থান বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্কলারশিপ এবং ওয়েভার নিয়ে ব্যাবসাপ্রশাসন, প্রকৌশল, নার্সিং, স্বাস্থ্য, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ডিপ্লোমা, স্নাতক, স্নাতোকোত্তর ও পিএইচডি করার যথেষ্ঠ সুযোগ রয়েছে।</p> <p>আমি প্রায় প্রতি সপ্তাহে অন্তত কয়েকটি ইনবক্স মেসেজ বা পাই যেখানে কেউ নিজে, কারো ভাই/বোন বা জীবনসঙ্গী অথবা আত্মীয়স্বজন অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে আসতে ইচ্ছুক। কিন্তু ঠিক কোন জায়গা থেকে শুরু করবেন তা নিয়ে একটু দ্বিধায় আছেন। আমাকে যারা প্রশ্ন করেন সামগ্রিক ভাবে তাদেরপ্রশ্ন কয়েকটা ভাগে ভাগ করা যায়-</p> <p>১) বাইরে পড়তে আসতে চান, কোথায় যাবেন তা এখনো ঠিক করেননি। একটা অপশন হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার কথা ভাবছেন যেহেতু এখনো এখানে একেবারে থেকে যাবার (পিআর-পারমানেন্ট রেসিডেন্সি) যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।</p> <p>২) অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্র্যাড (ব্যাচেলর) পড়তে চাচ্ছেন। তাই- কিভাবে অ্যাপ্লাই করবেন, কোন বিষয় পড়লে অস্ট্রেলিয়ায় থেকে যাওয়া যায়, এখানের লিভিং এক্সপেন্স কেমন, ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগ কেমন, কাজ করে কতটুকু খরচ ওঠানো যায় তা জানতে চাচ্ছেন।</p> <p>৩) মাস্টার্স করতে আসতে চান, এক্ষেত্রে- কিভাবে আপ্লাই করতে হবে, কোর্স ওয়ার্ক বেইস মাস্টার্স ভালো না রিসার্চ বেইস মাস্টার্স ভালো সেটা জানতে চাচ্ছেন, মাস্টার্স করে এখানে থেকে যাবার সুযোগ কেমন, খরচ কেমন, স্কলারশিপ পাবার সম্ভাবনা কতটুকু, স্কলারশিপ না পেলে অন্য উপায় কি?</p> <p>৪) পিএইচডি করতে চান-এক্ষেত্রে- বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কী চায়? কিভাবে সুপারভাইসর পাওয়া যেতে পারে?, কিভাবে অ্যাপ্লাই করা যায়? কত দিন আগে থেকে অ্যাপ্লাই প্রসেস শুরু করতে হবে?, কোন ভাবে অ্যাপ্লাই করলে ফান্ডিং পাবার বেশি সম্ভাবনা থাকে?</p> <p>৫) কিছু কিছু ক্ষেত্রে আগ্রহীরা এখনো জানেন না তারা মাস্টার্স করবেন না পিএইচডি করবেন। তারা শুধু স্কলারশিপ নিয়ে বাইরে আসতে চাচ্ছেন।</p> <p>৬) অস্ট্রেলিয়ার কোন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালো? এক্ষেত্রে রাঙ্কিং কেমন? (বিষয় ভিত্তিক/সব মিলিয়ে), কোন শহরে, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে খরচ কম, পাশ করা সহজ, পিআর নেয়া যাবে?</p> <p>তাই বিদেশে পড়তে যাওয়ার আগে সবকিছু ভেবেচিন্তে যাওয়াটাই জরুরি৷ বিদেশে পড়তে যাওয়ার প্রক্রিয়াটা ব্যয়বহুল এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই শুধু সামর্থ্য থাকলেই টিউশন ফি দিয়ে পড়া উচিত, অন্যথায় আপনার প্রোফাইল দিয়ে কোন স্কলারশিপ পাবেন কিনা তা যাচাই করে এ পথে পা বাড়ানো উচিত। যেকোনো পরিস্থিতি তেই কোন অনভিজ্ঞ দালাল/ এজেন্ট (আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতওপ্রশিক্ষিত নয় এমন) অথবা প্যাকেজ সিস্টেম এ (অমুক টাকার বিনিময়ে আপনাকে ভিসা পাইয়ে দিবে এমন) কারো সাথে লেনদেন করা উচিত নয়।</p> <p><strong>যোগ্যতা</strong></p> <p>নুন্যতম কী কী যোগ্যতা থাকা উচিত তা নির্ভর করে আবেদনকারীর সার্বিক অবস্থার ওপর। তবে কমপক্ষে এইচএসসি পাস, ভাষার দক্ষতা এবং প্রয়োজনীয় ফান্ড- এই তিনটি যোগ্যতার ওপর ভিসা পাবার সম্ভবনা অনেকখানি নির্ভর করে।</p> <p><strong>কেন অস্ট্রেলিয়া?</strong></p> <p>উন্নত ও নিরাপদ জীবন ব্যবস্থা, পড়াশুনার মান, বাংলাদেশের মতো আবহাওয়া, পড়াশুনা শেষে স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজের সুযোগ এবং ছাত্রাবস্থায় পার্টটাইম কাজের সুবিধা থাকার কারণে বহিঃবিশ্বের অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের মত বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও অস্ট্রেলিয়াকে পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রাখে। প্রতি বছর সারাবিশ্ব থেকেপ্রায় ছয়-সাত লক্ষ শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়াতে পড়তে যায়। এখানকার স্থানীয়রা অনেক বন্ধুসুলভ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি এই দ্বীপ দেশটিতে রয়েছে ১২ হাজারের বেশি সমুদ্র সৈকত। তুলনামূলক অন্যান্য সমমানের দেশের তুলনায় কম খরচে এমন শান্তিপূর্ণ একটি দেশে মানসম্মত শিক্ষার কারণে উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে দেশটি প্রতিবছর হাতছানি দেয় হাজারো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে।</p> <p><strong>ওয়েভার সুযোগ</strong></p> <p>বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো অস্ট্রেলিয়াতেও বিভিন্ন স্কলারশিপের সুযোগ আছে। মাস্টার্স ও পিএইচডির জন্য এ সুযোগটা একটু বেশি। এই স্কলারশিপগুলো কয়েকপ্রকারের হতে পারে- ১) ফুল ফান্ডিং ও লিভিং এক্সপেন্সেস স্টাইপেন্ডসহ স্কলারশিপ ২) ফুল ফান্ডিং স্কলারশিপ ৩) পার্শিয়াল ফান্ডে স্কলারশিপ (১০% থেকে ৮০%)। যত ভালো মানের স্কলারশিপের জন্য আপনি চেষ্টা করবেন আপনার প্রোফাইল তত ভালো হওয়া উচিত এবং আপনি তত বেশি প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হবেন। যাদের কোনো স্কলারশিপে আবেদন করার মতোপ্রয়োজনীয় যোগ্যতা নাই কিন্তু নিজ খরচে পড়ার আবেদনের নূন্যতম যোগ্যতা আছে তারাও চাইলে আবেদন করতে পারবেন। আপনার একাডেমিক ফলাফল (৬০%) , IELTS স্কোর (৬) বা PTE স্কোর (৫০) এবং প্রাথমিক খরচের জন্যপ্রয়োজনীয় অর্থ এবং ব্যাংক স্টেটমেণ্টে প্রয়োজনীয় টাকার অ্যামাউন্ট দেখাতে পারলে ভিসা পেতে খুব বেশি সমস্যা হয়না। আবেদনের নূন্যতম যোগ্যতার চেয়ে কিছুটা কম যোগ্য হলেও আপনি আবেদন করতে পারবেন, সেক্ষেত্রে আপনার প্রাথমিক খরচ কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। পাশাপাশি ভিসা পাবার সম্ভবনা ও কিছুটা কমে যায়। আপনার ক্যারিয়ার প্ল্যান কী এবং আপনি কতটা খরচ বহন করতে পারবেন এসব চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় এবং কোর্স নির্বাচন করবেন।</p> <p><strong>কিভাবে স্কলারশিপ আবেদন প্রসেস করবেন</strong></p> <p>স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে স্কলারশিপপ্রদানকারী সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে ওই স্কলারশিপের নূন্যতম যোগ্যতা, স্কলারশিপের শর্তাবলী এবং ডেডলাইন সম্পর্কে জানুন। এই ধরেনের ওয়েবসাইটেগুলোতেই পরবর্তী ধাপগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ থাকে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্কলারশিপের পুরনকৃত আবেদনপত্র, মোটিভেশন লেটারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি স্কলারশিপ প্রদানকারী সংস্থা/বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগেরপ্রফেসর বরাবর পাঠাতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কর্তৃপক্ষ আপনাকে তাদের সিদ্ধান্ত ও পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিবে। যদি কর্তৃপক্ষ আপনাকে স্কলারশিপ দিতে সম্মত হয়, উক্ত অফার লেটার সহ স্টুডেন্ট ভিসার আবেনপত্র পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ভিসার জন্য আবেদন করবেন।</p> <p>স্কলারশিপ এবং স্টুডেন্ট ভিসা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাদি ইন্টারনেটে থেকে পেয়ে যাবেন । কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে বা বিষয়গুলো জটিল মনে হলে, ছাত্র-ছাত্রীরদের উচ্চশিক্ষা বিষয়ক সোশ্যাল মিডিয়ার বড় ডিসকাশন গ্রুপগুলোতে জয়েন করে বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীরদের পরামর্শ নিতে পারেন ।</p> <p><strong>কিভাবে সেলফ-ফান্ডিং আবেদন প্রসেস করবেন</strong></p> <p>সেলফ-ফান্ডিং এ ফাইল প্রসেসিং এবং ভিসা সিদ্ধান্ত পেতে ৬ মাসের মতো সময় লেগে যায়। অস্ট্রেলিয়ায় সাধারনত ২টি সেশন আছে, ফেব্রুয়ারি এবং জুলাই। আবেদনপত্র ও আনুষাঙ্গিক কাগজপত্র তৈরির জন্য যথেষ্ট সময় হাতে রাখতে হয়। সাধারণত ক্লাস শুরুর ৬-৮ সপ্তাহ আগেই ভিসার জন্য আবেদন করা উচিত। উপরে উল্লেখিত ডকুমেন্টসহ কোনো প্রফেশনাল কন্সালটেন্টের মাধ্যমে আবেদন করলে ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে অফার লেটার পেতে পারেন। অফার লেটারে উল্লেখিত বিস্তারিত তথ্য ব্যবহার করে টিউশন ফি দিয়ে দিলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কনফারমেশন অফ এনরোলমেন্ট পাওয়া যায়। এর পরপর-ই ভিসার জন্য আবেদন করা যায়।এর ১-২ সপ্তাহের মধ্যেই মেডিকেল ও বায়োমেট্রিক্সের ইনভাইটেশন আসে। ভিসা আবেদনের ৪ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে ভিসা সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়।</p> <p><strong>ব্যাংক স্টেটমেন্ট</strong></p> <p>আমেরিকা, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ডসহ অনেক দেশের মতই অস্ট্রেলিয়্না স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন করতে স্পন্সর দেখাতে হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবারের যেকোন সদস্য ছাত্র-ছাত্রীদের বিদেশে শিক্ষাকালীন সময়ে সব খরচ বহন করতে সক্ষম। এটা অস্ট্রেলিয়্না ইমিগ্রেশনকে ডকুমেন্টস দিয়েপ্রমাণ করানোই হল স্পন্সরশীপের মূল লক্ষ্য। এসকল দেশের স্টুডেন্ট ভিসা পেতে উক্ত ফান্ড নিজের পরিবারের এক বা একাধিক জনের একাউন্ট থেকে দেখানোই শ্রেয়। তবে ক্ষেত্র-বিশেষে নিকটাত্মীয়ও স্পন্সর হতে পারেন ।</p> <p><strong>কাগজপত্র</strong></p> <p>অস্ট্রেলিয়ান স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে গেলে কি কি কাগজপত্রের প্রয়োজন পরবে তা নির্ভর করে আবেদনকারীর সার্বিক অবস্থার উপর। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সকল একাডেমিক পরীক্ষার নম্বরপত্র, সনদ ও পাসপোর্ট (সত্যায়িত ও প্রত্যায়িত), IELTS/PTE সনদ , অফার লেটার ও কনফারমেশন অফ এনরোলমেন্ট, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, স্পন্সরশিপ ডিক্লারেশন ও জন্ম নিবন্ধনপত্র, SOP, চিকিৎসা বীমা ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। কিছু কিছু ডকুমেন্টস নোটারি করা লাগতে পারে।</p> <p><strong>পার্টটাইম জব</strong></p> <p>অস্ট্রেলিয়ান সরকারের নিয়মানুযায়ী বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস চলাকালীন সময়ে সপ্তাহে ২০ ঘন্টা করে কাজ করতে পারে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটিতে যত খুশি কাজ করা যায়, এ কারনে সেলফ-ফান্ডিংএ উচ্চশিক্ষা প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করা অনেক ছাত্র-ছাত্রীরও নিজ আয়ে তাদের সব খরচ চালাতে পারেন।</p> <p><strong>গুরুত্বপূর্ণ টিপস -</strong></p> <p>❖উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাবার আগে কোন বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্সে ভর্তি হবেন, ক্যাম্পাস কোথায় হবে- এসব বিষয়ে অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। যে কোর্সটি আপনি নির্বাচন করতে যাচ্ছেন, তা ভবিষ্যতে আপনার ক্যারিয়ারে কিভাবে কাজে আসবে তা বিবেচনা করুন।</p> <p>❖আন্তর্জাতিক যোগ্যতাসম্পন্ন এডুকেশন কন্সালটেন্ট যারা PIER-QEAC (Qualified Education Agent Counselor) সার্টিফায়েড তাদের সাহায্য নিতে পারেন, এতে আপনার ভিসার সিদ্ধান্ত পেতে অনেক কম সময় লাগবে। আর মনে রাখবেন, একবার ভিসা পেতে ব্যর্থ হলে পরবর্তীতে অফার লেটার/ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। সর্বোপরি আপনি যে প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ নিচ্ছেন তাদের অস্ট্রেলিয়াতে কার্যক্রম আছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিবেন।</p> <p>❖GTE-জেনুইন টেম্পরারি এন্ট্র্যান্স এর ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করুন। Statement of Purpose (SOP) তৈরিতে এক্সপার্টদের পরামর্শ নিন, খেয়াল রাখবেন আপনার SOP যাতে ইউনিক এবং মানসম্মত হয় ।</p> <p>❖কোনো চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হবেন না। ভিসা পাবার নূন্যতম যোগ্যতা না থাকলে অর্থের বিনিময়ে কেউ আপনাকে ভিসা পাইয়ে দিতে পারবেনা ।</p> <p><em>- লেখক সিইও, গ্লোবাল স্টাডি নেটওয়ার্ক</em></p>