<p>বিয়ের পর সাধারণত চিরচেনা বাড়ি থেকে চলে যেতে হয় কনেদের। ছোট থেকে যেখানে বড় হওয়া, যাদের সঙ্গে নিত্যবাস সেই ঠিকানা হঠাৎ করেই বদলে যায়। এটাই নিয়ম আমাদের সমাজের। একলা জীবনের অবসান ঘটিয়ে দুজন নারী-পুরুষ যৌথ জীবন শুরু করেন। তাই প্রথম থেকেই দুজনের দায়িত্বশীল আচরণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর করণীয় বিষয়ে এমনটাই বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহজাবীন হক। </p> <p>দাম্পত্য জীবনে শুরুর আচরণটা স্বামী-স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের মনে স্মৃতি হয়ে থাকে। স্বামীর আচরণ যেমন স্ত্রীর মনে প্রভাব ফেলে, তেমনি স্ত্রীর আচরণও স্বামীর ওপর প্রভাব ফেলে।</p> <p>বিয়ের পর নতুন পরিবেশে একে অন্যকে খাপ খাইয়ে নিতেও সাহায্য করে দায়িত্বশীল আচরণ। সম্প্রতি বিয়ে করেছেন শোবিজ তারকা সালহা খানম নাদিয়া। বর দীর্ঘদিনের পরিচিত ও বন্ধু সালমান আরাফাত। নাদিয়া বললেন, ‘আমরা বন্ধু ছিলাম আগে। দুই পরিবার থেকে পারিবারিকভাবে আমাদের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগে থেকে দুজন দুজনকে চিনি, জানি। এতে অনেক সুবিধা হয়েছে। দুজনের বোঝাপড়ায় কোনো ভুল হয় না। তার পরও যদি কোনো কিছু নিয়ে মন খারাপ হয় আমরা পরক্ষণেই সেটা মিটিয়ে ফেলি। বেশ ভালো আছি দুজন।’</p> <p><img alt="তোমার আমার লাল-নীল সংসার" height="302" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/print/Magazine%202023/16-09-2024/kalerkantho04.jpg" width="500" /></p> <p>বর-কনের আগে থেকে পরিচয় থাকলে সেটা একটা বাড়তি সুবিধা হয় দাম্পত্যজীবনে। দুজনের কাজের জায়গা, পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে আগেই জানা থাকে। বিয়ে-পরবর্তী জীবনে এ নিয়ে ভুল-বোঝাবুঝি কম হয়। অনেক দম্পতির এই সুযোগ হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অচেনা দুজন নারী-পুরুষ বিয়ের পর এক ছাদের নিচে বসবাস শুরু করেন। তাঁদের জন্য জার্নিটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। নতুন পরিবেশে স্ত্রীর জীবনের অনেক কিছু বদলে যায়। এ সময় তাঁর দৈনন্দিন ছোটখাটো সুবিধা-অসুবিধাগুলো স্বামীকে জেনে নিতে হবে। নতুন বাড়িতে তাঁর কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না। স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর বন্ধু হয়ে ওঠাটা দাম্পত্যজীবনে বেশি জরুরি। যেকোনো বিষয়ে স্ত্রীর মতামত জানতে চান। এতে ধীরে ধীরে পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠবে সে। পরিবার থেকে নতুন বউকে কোনো কাজ বা দায়িত্ব দেওয়া হলে তাতে স্বামীরও উচিত সহযোগিতা করা। আগে থেকে হয়তো কোনো কাজের অভ্যাস নেই আপনার। এখন সেটা শুরু করতে হবে। কেননা আপনি আর আগের সেই বাউণ্ডুলে মানুষটি নন, সংসারী হয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, বিয়ের পর কনের যেমন শ্বশুরবাড়ির সবার খেয়াল রাখা উচিত, তেমনি বরেরও উচিত শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের খোঁজখবর রাখা। এতে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর শ্রদ্ধাবোধ বাড়বে।</p> <p><img alt="তোমার আমার লাল-নীল সংসার" height="335" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/print/Magazine%202023/16-09-2024/kalerkantho02.jpg" width="500" /></p> <p>‘আপনি যেসব স্বাধীনতা ভোগ করবেন, স্ত্রীকেও সেসব স্বাধীনতা দিন। তার রোজগার কোথায় কিভাবে খরচ করবেন এ ব্যাপারে তাঁকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিন। তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন না। স্ত্রী যদি চায় তবে তাঁকে সাহায্য করতে পারেন। স্ত্রীর চেনা গণ্ডি যেমন বাবার বাড়ি যাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাত্—এসব বিষয়ে নিজ থেকে কোনো সীমারেখা টেনে দেবেন না।’ পুরুষদের উদ্দেশে বললেন মেহজাবীন হক। দুজন দুজনের সঙ্গে বেশি বেশি সময় কাটানোর চেষ্টা করা উচিত। নিজেরা কথা বলুন, নিজেদের সম্পর্কে জানুন। সুযোগ পেলেই ঘুরতে বেরিয়ে পড়ুন। দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য হলে তৃতীয় কোনো পক্ষ টানবেন না। নিজেরাই মিটমাট করে নিন।</p> <p>স্ত্রীর প্রতি যেমন স্বামীর দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি স্ত্রীর ভূমিকাও কম নয়। স্বামীর উপার্জন ও নিজের প্রত্যাশার মধ্যে সমন্বয় করে নিতে শিখতে হবে। আগামীর স্বপ্ন বুনতে হবে দুজন মিলে ধীরে ধীরে। স্বামীর কাছে শুরুতেই আকাশচুম্বী কোনো প্রত্যাশা করে বসবেন না। বিয়ের কদিন যেতে না যেতেই স্বামীর উপাজর্ন, সংসারের খরচ বা অন্য পারিবারিক বিষয়ে আগ বাড়িয়ে কথা না বলাই ভালো। এত দিন ধরে যে বা যিনি সংসার সামলেছেন, তার সঙ্গে বিরোধে যাওয়া যাবে না। সবাই মিলে অভ্যস্ত হতে সময় নিন। এই সময়টা দুজনে মিলে চুটিয়ে উপভোগ করুন। শ্বশুরবাড়ির কারো কথায় মনঃকষ্ট পেলে জীবনসঙ্গীর কান ভারী করবেন না। সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করুন। এতেই মঙ্গল।</p>