ঢাকা, শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩০ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩০ মহররম ১৪৪৭

৬৭ বন্ড মাফিয়ার কাছে জিম্মি দেশীয় শিল্প

  • সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা আবুল হোসেনসহ এই মাফিয়ারা ব্যাপক প্রভাবশালী!
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
৬৭ বন্ড মাফিয়ার কাছে জিম্মি দেশীয় শিল্প

বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে চোরাচালানে জড়িত ৬৭ মাফিয়ার কাছে জিম্মি দেশের শিল্প খাত। বন্ডের আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাপড়, কাগজ, প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে তা খোলাবাজারে বিক্রি করছে চোরাকারবারিরা। এভাবে অবৈধ প্রক্রিয়ায় তারা প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। একই সঙ্গে দেশীয় শিল্প ধ্বংস করে লাখ লাখ মানুষকে বেকারত্বের যাঁতাকলে ফেলে দিয়েছে।

সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা আবুল হোসেনসহ এই মাফিয়ারা একেকজন এতটাই প্রভাবশালী যে নানা উদ্যোগ আয়োজন নিয়েও তাদের অপকর্ম থামাতে পারছে না কেউ। বন্ড সুবিধার পণ্য খোলাবাজারে বিক্রির মাধ্যমে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠা এই মাফিয়াদের একেকজনের সাত থেকে দশটি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর এই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই বন্ড সুবিধার আওতায় কোটি কোটি টাকার পণ্য আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।

বন্ড মাফিয়া হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই ৬৭ জন চোরাচালানির বিরুদ্ধেই বিভিন্ন সময় জাল-জালিয়াতি ও বন্ড লুটপাটের অভিযোগে একাধিক মামলা হয়েছে।

দফায় দফায় অভিযানে তাদের গুদাম ও গাড়িবহর থেকে জব্দ করা হয়েছে শত শত কোটি টাকার মালামাল। কিন্তু মামলা সুরাহার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতার কারণে মাফিয়াদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি। এসব কারণে ওরা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। রাজস্ব বিভাগের কঠোর নির্দেশনা, ধারাবাহিক অভিযান, মালামাল জব্দ—কোনো কিছুই বন্ড মাফিয়াদের কাছে পাত্তা পায় না।

জানা গেছে, রাজধানীর নয়াবাজার এলাকায় বন্ড সিন্ডিকেটের হোতা আবুল হোসেনের প্রাসাদোপম নয় তলা বাড়িসহ তিনটি বাড়ি রয়েছে। বন্ড সুবিধায় পণ্য এনে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে তিনি বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। তাঁর কথার বাইরে গেলে সাধারণ কাগজ ব্যবসায়ীদেরও হুমকি-ধমকি শুনতে হয়। কিছুদিন আগে অভিযানকালে কাস্টমসের কর্মকর্তাদের ওপর যে হামলা হয়েছে তাতেও এই মাফিয়ার লোকজন জড়িত ছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আবুল হোসেনের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার দেখা করে এসব বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।

একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, কাস্টমস কর্মকর্তাদের ওপর হামলা করেছে বহিরাগতরা। এ ঘটনায় তাঁর কোনো লোক জড়িত ছিল না। এসব তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার।

জানা গেছে, রাজধানীর ইসলামপুর ও নয়াবাজারে এই মাফিয়া-গডফাদারদের মূল ঘাঁটি। এই দুটি এলাকায় প্রতিদিন গভীর রাতে ট্রাকে ট্রাকে খালাস হয় বন্ড সুবিধার আওতায় আনা কাপড়, প্লাস্টিক ও কাগজ জাতীয় বিভিন্ন পণ্য। চোরাকারবারিরা এসব পণ্য বিক্রি করছে কালোবাজারে। রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি হওয়া পণ্যের এভাবে অবৈধ বাণিজ্যে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় শিল্প খাত।

এদের অপতৎপরতায় হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। হুন্ডির মাধ্যমে তারা অর্থ পাচার করে অবৈধভাবে কাগজ ও কাপড় আনছে। মাফিয়ারা বন্ডের আওতায় পণ্য এনে কর ফাঁকি দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে বাজারে পণ্য ছেড়ে দেওয়ায় টেক্সটাইল, কাগজ, প্লাস্টিকসহ দেশীয় বিভিন্ন পণ্য প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। হুমকির মুখে পড়েছে দেশীয় শিল্প খাত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ৬৭ মাফিয়ার চক্রকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে দেশীয় শিল্পের প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। এদের অপতৎপরতায় ইতিমধ্যে অনেক তৈরি পোশাক, বস্ত্র ও পিভিসি কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বন্ডের অবৈধ ব্যবহারের সঙ্গে জড়িতদের ভালোভাবেই চেনে ও জানে।

কাস্টমসের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের সঙ্গে জড়িত হিসেবে বিভিন্ন সময় সাড়ে চার শতাধিক প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকার তথ্য থাকলেও একই অপরাধে বারবার জড়িয়ে থাকা ৬৭টি প্রতিষ্ঠানকে এ পর্যন্ত চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে অন্যান্য মামলা ও অভিযানে জব্দ হওয়া পণ্যের সূত্র ধরে চোরাচালানি মাফিয়াদের সুনির্দিষ্ট করার কার্যক্রম এখনো চলছে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে এই ৬৭ মাফিয়া দেশীয় শিল্প খাতকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ওরা একই সঙ্গে ধ্বংস করে দিচ্ছে দেশের ব্যাংকিং খাত এবং বিকাশমান শিল্পগুলো। চোরাকারবারিদের এই মাফিয়া গোষ্ঠী দেশ ও জাতির শত্রু। ওরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবচেয়ে বড় বাধা। দেশের শিল্প খাতকে বাঁচাতে হলে এসব মাফিয়াকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

বিটিএমএ সভাপতি বলেন, ‘অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো কার্যত বন্ধ। তার পরও ওই সব প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে থাকা বন্ড লাইসেন্সগুলো নানা কারসাজির মাধ্যমে কার্যকর রেখে এই সুবিধার আওতায় পণ্য আমদানি অব্যাহত রাখা হয়েছে। বন্ডেড ওয়্যার হাউস লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা চিহ্নিত। আমরা মনে করি, বন্ড সুবিধার লাইসেন্সধারী কতটি প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে তা নির্ধারণ করে বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর বন্ড লাইসেন্স জরুরিভিত্তিতে বাতিল করা দরকার। এভাবে বন্ধ কারখানার বন্ড লাইসেন্স ব্যবহারের অনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ হলে দেশীয় শিল্প সুরক্ষা পাবে।’

বন্ড সুবিধার নামে বছরের পর বছর ধরে নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের লুটপাট ও দুর্বৃত্তপনা অবিলম্বে বন্ধ করে দেশীয় শিল্প রক্ষার জোর দাবি জানিয়েছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। তাঁরা চোরাচালানে সম্পৃক্ত মাফিয়াদের আইনের আওতায় আনার দাবি করেছেন।

এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মুনতাকিম আশরাফ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দেশীয় শিল্প খাত আমাদের বিকাশমান অর্থনীতির প্রাণ। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে দেশীয় শিল্প খাত ধ্বংস হতে পারে না। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশীয় শিল্প রক্ষা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বন্ডে শৃঙ্খলা আনাটা খুবই জরুরি। যারা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চোরাচালান নামক অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা প্রশাসনের দায়িত্ব।’

বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সাবেক সভাপতি শাহেদুল ইসলাম হেলাল বলেন, ‘বন্ড সুবিধা নিয়ে অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার। বন্ডে যেসব অনিয়ম আছে, সেটা দূর করতে হলে ব্যবসায়ীদের সংগঠন ও বন্ড কমিশনারেটের আরো বেশি কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এটা করতে পারলে চোরাকারবারিদের ধরা সহজ হবে।’

বন্ডের অটোমেশন জরুরি উল্লেখ করে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘বন্ডেড ওয়্যার হাউসের লাইসেন্স সুবিধার আড়ালে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মূলত আমদানি প্রাপ্ত্যতা নির্ধারণ আদেশের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাঁচামাল আমদানির পর তা খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে একশ্রেণির ব্যবসায়ী নামধারী চোরাকারবারি। দু-একটি চালান বন্ড কর্মকর্তাদের অভিযানে ধরা পড়লেও বেশির ভাগই থেকে যাচ্ছে আড়ালে। মূলত দুইভাবে বন্ডের পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। প্রথমত, অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে বন্ড লাইসেন্স খুলে পণ্য আমদানির মাধ্যমে। বিগত ২০১৫ সালে ঢাকা বন্ড কমিশনারেট থেকে এ জাতীয় ৪৭৭টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে লাইসেন্স সাময়িকভাবে বাতিল ও ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। দ্বিতীয়ত, ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কাঁচামাল শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করে। মূলত আমদানিপ্রাপ্যতা নির্ধারণ পদ্ধতির দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই এ কাজটি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা। অনেক প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি আদেশ যৎসামান্য থাকলেও শুধু মেশিনের উৎপাদন ক্ষমতা অনুযায়ী প্রাপ্যতা নির্ধারণ করিয়ে নিচ্ছে। এ কাজে তাদের সহযোগিতা করছেন অসাধু কর্মকর্তারা।

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতিদিন গভীর রাতে ট্রাকে করে আনা কাপড় ও কাগজজাতীয় পণ্যসামগ্রী খালাস হয় রাজধানীর ইসলামপুর, নয়াবাজার, চকবাজার মোড়, সাভার ও গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে। অথচ নিয়ম অনুযায়ী পুনঃ রপ্তানির শর্তে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি হওয়া পণ্যসামগ্রী খালাস হওয়ার কথা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়্যার হাউসে। এই চোরাকারবারে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রের মধ্যে বটম গ্যালারি, ট্রাউজার ওয়ার্ল্ডসহ সাতটি প্রতিষ্ঠান প্রায় রাতেই এভাবে পণ্য খালাস করে কালোবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। সম্প্রতি গভীর রাতের এক অভিযানে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্যবোঝাই ট্রাক হাতেনাতে আটক করেন ঢাকা কাস্টমস বন্ডের কর্মকর্তারা। 

জানা গেছে, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকার (ইপিজেড) কর্মকর্তারাও বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধার অপব্যবহার ও চুরির এই অপকর্মের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী শুল্ক দিয়ে সামান্য পণ্য আমদানি করে, বাকি পণ্য বন্ড থেকে অপসারিত পণ্যের সঙ্গে মিলিয়ে এক ভ্যাট চালানের রসিদ ব্যবহার করে।

জানা গেছে, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার ও শুল্কমুক্ত পণ্যের চোরাচালান ঠেকাতে সক্রিয় উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়ার নির্দেশনার আলোকে সর্বশক্তি দিয়ে অভিযান পরিচালনা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম খতিয়ে দেখছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সম্প্রতি ২৯টি ঝটিকা অভিযান চালিয়েছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। সংস্থাটি জানায়, এসব অভিযানে অর্ধশত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার অনিয়ম উদ্ঘাটন করেছে বন্ড কমিশনারেট।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার এস এম হুমায়ন কবির বলেন, বন্ডের অপব্যবহার রোধে তথাকথিত রপ্তানি কার্যক্রম খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। শুল্কমুক্ত সুবিধার পণ্য অবৈধভাবে বাজারে ছেড়ে দেওয়ার অপতৎপরতা রোধে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, যেসব রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক ও নির্বাচিত স্থানীয় শিল্প খাতে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করে পণ্য তৈরি ও তা রপ্তানি করে তাদের সরকার বন্ড সুবিধা দেয়। বিগত ২০০০ সাল থেকে তৈরি পোশাক এবং স্থানীয় শিল্প ও কূটনৈতিক বন্ডের আওতায় এই সুবিধা দেওয়া হয়।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ব্যর্থ মেহেদী হাসান মিরাজ

শেয়ার
ব্যর্থ মেহেদী হাসান মিরাজ
পাকিস্তান সিরিজে প্রথমবার একাদশে সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ মেহেদী হাসান মিরাজ। গতকাল ৮ বলে ১০ রান করে ফিরে যান তিনি। তাঁর আউটের সঙ্গে দলের জয়ের সম্ভাবনাও ফিকে হয়ে যায়। তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশ হেরেছে ৭৪ রানে। ছবি : মীর ফরিদ
মন্তব্য

বেশি দামে আরো ১০ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বেশি দামে আরো ১০ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী করার ইঙ্গিত দিয়ে নিলামের মাধ্যমে আরো ১০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণার দিনই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করবে। তাঁর ভাষায়, আমরা বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। প্রয়োজন হলে ডলার কিনব, আবার প্রয়োজন হলে বিক্রিও করব।

এই নীতির আলোকে এখন বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু রাখলেও পরিস্থিতি অনুযায়ী নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনার মতো কৌশল গ্রহণ করছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এর মাধ্যমে একদিকে যেমন বাজারে আপওয়ার্ড সিগন্যাল দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে চাহিদা-জোগানের ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা চলছে। এতে করে ডলারের রেট একদিকে পুরোপুরি বাজারের ওপর নির্ভরশীল থাকছে, অন্যদিকে প্রয়োজন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত উপস্থিতিও বজায় থাকছে। এই কৌশল মুদ্রাবাজারে অস্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণ এবং আইএমএফের শর্ত পূরণ উভয় উদ্দেশেই সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী করার ইঙ্গিত দিয়ে নিলামের মাধ্যমে আরো ১০ মিলিয়ন বা এক কোটি ডলার কিনেছে। গত ২৩ জুলাই এই নিলামে কাট-অফ রেট নির্ধারণ করা হয় ১২১.৯৫ টাকা, যা আগের তুলনায় ০.৪৫ টাকা বেশি। এর মাধ্যমে মাত্র আট দিনের ব্যবধানে নিলামে ডলারের রেট উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকের দর দেখে ১২১ টাকা ৯৫ পয়সায় এক কোটি ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। গভর্নর স্যার অনেকবার বলেছেন, প্রয়োজন হলে মার্কেট থেকে ডলার কেনা হবে। আবার চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৌশলগত পদক্ষেপ। এই নিলামে ডলারের কাট-অফ রেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১২১.৯৫ টাকা।

এর আগে ১৩ ও ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত নিলামে ১২১.৫০ টাকা রেটে যথাক্রমে ১৭৩ ও ৩১৩ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছিল। সব মিলিয়ে চলমান নিলাম প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক মোট ৪৯৬ মিলিয়ন ডলার কিনেছে।

ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ ও বাজারে প্রতিক্রিয়া : শীর্ষস্থানীয় একটি বেসরকারি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিলামে অংশ নেওয়ার জন্য আমাদের আমন্ত্রণ জানায়। তবে এবার আগের মতো অনেক ব্যাংক আগ্রহ দেখায়নি। কারণ অনেক ব্যাংক ধারণা করছে, সামনে ডলারের দাম আরো বাড়বে। তাই তারা অপেক্ষা করছে। চড়া দর সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক মাত্র ১০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করতে পেরেছে। এ থেকেই বোঝা যায়, বাজারে প্রত্যাশা কিভাবে গড়ে উঠছে।

ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ মোহাম্মদ মারুফ মনে করেন, এ মুহূর্তে ব্যাংকগুলো চাচ্ছে, যে ডলার রয়েছে সামনে সেটা দিয়েই দায় পরিশোধ করবে। তা ছাড়া চলতি মাসেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রায় ৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। যে কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংক ডলার বিক্রি করতে তেমন আগ্রহী ছিল না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

মারুফ বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে যা উদ্বৃত্ত ডলার ছিল তা বাংলাদেশ ব্যাংককে দিয়েছে। এটা দিয়ে বোঝায় যে ব্যাংকের কাছে যে পরিমাণ উদ্বৃত্ত ডলার ছিল তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ে গেছে এবং যে পরিমাণ তারল্য রয়েছে, আসলে এত দরকার নেই।

বাজার পরিস্থিতি ও এলসির চাপ : পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, সম্প্রতি ডলারের বাজার কিছুটা টাইট। কারণ ব্যাংকগুলো আমদানি এলসি খোলার পরিমাণ বাড়াচ্ছে। তবে আগামী সপ্তাহে ডলারের প্রবাহ বাড়লে তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, ডলারের বাজার স্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করে। সম্প্রতি মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। আগের অস্থিরতা অনেকটাই কেটে গেছে, তবে আরো কিছুদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা দরকার।

স্পট ও আন্ত ব্যাংক বিনিময় হার : বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২৩ জুলাই স্পট বিনিময় হার ছিল ১২১.৯৪ টাকা। আন্ত ব্যাংক বাজারে ডলার লেনদেন হয় ১২১.৬০ থেকে ১২২.০২ টাকার মধ্যে। শীর্ষস্থানীয় আরেক ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, বুধবার আন্ত ব্যাংক বাজারেই ডলারের দাম ১২২ টাকা ছাড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আপওয়ার্ড সিগন্যালের ফলে আগামীকাল এটি আরো বাড়তে পারে।

আইএমএফের শর্তে বাজারভিত্তিক নীতি : বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী এক কর্মকর্তা জানান, আইএমএফের ঋণচুক্তির আওতায় এখন আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি হস্তক্ষেপ করে নির্দিষ্ট রেটে ডলার কেনে না। মে মাস থেকে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু হওয়ায় এখন নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা হয়। এতে করে ডলারের মূল্য নির্ধারণে বাজার প্রভাবশালী ভূমিকা রাখে।

তিনি বলেন, আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেরা রেট নির্ধারণ করত। এখন মার্কেট রেটেই লেনদেন হচ্ছে। এই পদ্ধতিই দীর্ঘ মেয়াদে বাজারকে আরো স্বচ্ছ করবে।

মন্তব্য
ফিরে দেখা ২৫ জুলাই ’২৪

মানবাধিকার লঙ্ঘন তদন্তে সহযোগিতার প্রস্তাব জাতিসংঘের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মানবাধিকার লঙ্ঘন তদন্তে সহযোগিতার প্রস্তাব জাতিসংঘের

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে মানবাধিকার লঙ্ঘন তদন্তে সহযোগিতার প্রস্তাব দেয় জাতিসংঘ। ২০২৪ সালের ২৫ জুলাই জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক এক বিবৃতিতে এই প্রস্তাব দেন। অন্যদিকে ভারতের নয়াদিল্লিতে এক ব্রিফিংয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় উল্লেখ করে বাংলাদেশে শিগগিরই শান্তি ফিরবে বলে আশা প্রকাশ করেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে হতাহতের ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত চেয়েছে বিএনপিও।

এক বিবৃতিতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি করেন। অন্যদিকে এদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রো রেল স্টেশন পরিদর্শন শেষে বলেন, আমি জনগণের কাছে ন্যায়বিচার চাইছি।

এদিকে এদিনই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে প্রবাসী ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে বিক্ষোভ করে তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চায় সরকার। বিশ্বের নানা দেশে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস, হাইকমিশন এবং অনাবাসিক মিশনগুলোর মাধ্যমে হোস্ট গভর্নমেন্টের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের জরুরি নন, এমন কর্মী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের স্বেচ্ছায় বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টি অনুমোদন দেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এদিন সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা খোলা ছিল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস। রাজধানীতে দূরপাল্লার গণপরিবহনে যাত্রীদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। কারফিউ বলবৎ থাকায় রাজধানীতে ছিল কঠোর সেনা টহল।

তবে শিথিল সময়ে অফিস-আদালত, বাজারঘাটে ফেরে কর্মচাঞ্চল্য। অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবেলায় সতর্ক অবস্থায় ছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। ক্রমে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় কারফিউ শিথিলের সময়সীমা দুই ঘণ্টা বাড়িয়ে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) তথ্য অনুযায়ী, এদিন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আর কেবল কোটা সংস্কারের ইস্যুতে সীমাবদ্ধ নেই। তিনি বলেন, প্রজ্ঞাপন জারির সঙ্গেই এই আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটবে না।

ছাত্র-নাগরিক হত্যা ও গুম-খুনের বিচার, রাষ্ট্রীয় ক্ষয়ক্ষতির বিচার, মামলা প্রত্যাহার, ডাকসু সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তি, আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণ এবং সব ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী রাজনীতির উত্খাত ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিচারের দাবিতে দফাভিত্তিক আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

অন্যদিকে ২৩ জুলাই (২০২৪) প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আংশিক বিজয় অর্জিত হয়েছে বলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানায় সাধারণ শিক্ষার্থী মঞ্চ। বিবৃতিতে ৯১ জন শিক্ষার্থী স্বাক্ষর করেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আটটি বার্তা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে হতাহতদের তালিকা তৈরি, হত্যা ও হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করা, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল খুলে দেওয়ার জন্য চাপ তৈরি, হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের সহযোগিতা, রংপুরের আবু সাঈদসহ নিহত সবার কবর জিয়ারত, রুহের মাগফিরাত কামনা এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো।

২৫ জুলাই সারা দেশে ইন্টারনেট চালু, কারফিউ তুলে দেওয়াসহ জরুরি চার দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষ হয়। তবে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে না পারায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেনি তারা। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে আরেক অংশের একটি বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এর সমন্বয়ক হান্নান মাসুদের বরাত দিয়ে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, পরদিন ২৬ জুলাই বাদ জুমা সারা দেশে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনা ও শোক মিছিল করা হবে।

নিহত ১৭০ জনের বেশি, আহত হাজারের বেশি জাতিসংঘ : জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হালনাগাদ তথ্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে ১৭০ জনেরও বেশি লোক নিহত এবং হাজারের বেশি আহত হয়েছে। তাদের অনেকে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সরকারের নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র ও তরুণদের প্রতিবাদ কর্মসূচির পর অনেকে নিখোঁজ রয়েছে। অন্তত দুজন সাংবাদিক নিহত এবং আরো অনেকের আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের কয়েক শ লোকের গ্রেপ্তার হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এদিনই এক যৌথ বিবৃতিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পূর্ণ জবাবদিহির আহবান জানান জাতিসংঘের ১৩ জন স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বাংলাদেশে সহিংস দমন-পীড়নের অভিযোগ এনে তা বন্ধ করার আহবান জানান।

ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রো রেল স্টেশন পরিদর্শনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, বিচার চাইলেন জনগণের কাছে : এদিন সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে মেট্রো রেল স্টেশন পরিদর্শন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন ঘুরে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় তাঁকে চোখের পানি মুছতেও দেখা যায়। পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জনগণকে তাদের (দেশব্যাপী তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের) বিচার করতে হবে। আমি জনগণের কাছে ন্যায়বিচার চাইছি। ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেওয়ার মতো আমার আর কোনো ভাষা নেই।

মামলা ও গ্রেপ্তার : ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সূত্র দিয়ে দেশের গণমাধ্যমগুলো জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নাশকতার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে এদিনও অভিযান অব্যাহত ছিল। এদিন বিকেলে রাজধানীর নিউ এলিফ্যান্ট রোড থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য আন্দালিব রহমান পার্থকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মন্তব্য
প্রসঙ্গ শুল্ক

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২৯ জুলাই চূড়ান্ত আলোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২৯ জুলাই চূড়ান্ত আলোচনা
সেখ বশির উদ্দিন

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রধান বাণিজ্য আলোচনাকারী সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর) বাংলাদেশকে আগামী ২৯ জুলাই তৃতীয় ও চূড়ান্ত শুল্ক আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সংবাদ সংস্থা বাসসকে এই তথ্য জানিয়েছেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান। তিনি জানান, এর আগে বাংলাদেশ ২২ জুলাই ইউএসটিআরের কাছে নিজেদের অবস্থানপত্র পাঠায় এবং ২৬ জুলাই চূড়ান্ত দফার আলোচনা শুরুর প্রস্তাব দেয়।

বাণিজ্যসচিব জানান, ইউএসটিআর ২৯ জুলাই দিন ধার্য করেছে।

ওই দিন ওয়াশিংটন ডিসিতে তাদের অফিসে আলোচনা শুরু হবে। বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। সাক্ষাতে আলোচনা হলে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ২৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দেবে। তবে আলোচনা ভার্চুয়াল হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
এই দফায় বেসরকারি খাতের কয়েকজন রপ্তানিকারক বাংলাদেশ দলের সঙ্গে থাকতে পারেন। তবে তাঁরা সরকারি পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নেবেন না।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের জন্য বিদ্যমান ৩৫ শতাংশ শুল্ক হার হ্রাস করবে। কারণ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের জন্য ১৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার জন্য ১৯ শতাংশ, ভিয়েতনামের জন্য ২০ শতাংশ এবং ফিলিপাইনের জন্য ১৯ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছে।

ইউএসটিআরের সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনা এখন পর্যন্ত ভালোভাবে এগিয়েছে, তাই বাংলাদেশও উল্লেখযোগ্য শুল্কছাড় পেতে পারে।

বাংলাদেশ এরই মধ্যে মার্কিন পণ্য, যেমনতুলা, গম, তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), বিমান ও অন্যান্য কৃষিপণ্য শুল্কমুক্ত আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে বাংলাদেশ ২০ জুলাই মার্কিন গম সরবরাহকারীদের সঙ্গে সাত লাখ টন গম আমদানির চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার কাছে সাংবাদিকরা শুল্ক আলোচনার সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে চান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ নিয়ে বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে, এমন কোনো কাজ করা হবে না।

আজ শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের একটি অনলাইন মিটিং রয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করে আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মকাণ্ড নির্ধারণ করব। এই নেগোসিয়েশনের জন্য সরকার লবিইস্ট নিয়োগ করেনি বলেও জানান তিনি।

শুল্ক আলোচনায় বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন প্রচারণা নাকচ করে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে আমরা কেন এমন কাজ করব? তাহলে তো আন্ত মন্ত্রণালয় মিটিংয়ের দরকার হয় না। কিছু জিনিস মেনে নিয়ে কাজটা করে ফেললেই তো হয়ে যায়। সম্পূরক শুল্কের মতো আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিষয়গুলোতে লবিইস্ট নিয়োগ করে ভালো ফল পাওয়া যায় না।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ