<p>সাবলীল অভিনয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন জিয়াউল হক পলাশ। বিজ্ঞাপন-নাটক নির্মাণেও তাঁর মেধার প্রমাণ পেয়েছে দর্শক। ঈদে একটি ওয়েব ফিল্ম এবং দুটি নাটকে দেখা যাবে তাঁকে। সেগুলোর সূত্র ধরে তাঁর ভাবনার জানালা খুলেছেন কামরুল ইসলাম।</p> <p><strong>একটু ঝামেলার মধ্যে আছেন মনে হচ্ছে?</strong><br /> আর বলবেন না! একটি বিজ্ঞাপনচিত্র নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা হচ্ছে। অনেকেই ভাবছে, এটা অমি (কাজল আরেফিন অমি) ভাইয়ের বানানো। কিন্তু না। অযথাই তাঁকে জড়ানো হচ্ছে। অমি ভাইকে অহেতুক প্যারায় দেখে আমারও খারাপ লাগছে। </p> <p><strong>আচ্ছা, একটু স্থির হন। ঈদের কাজের খবর জানতে চাচ্ছি। কী কী আসছে এবার?</strong><br /> এই ঈদে অমি ভাইয়ের ‘ফিমেল ৪’-এ অভিনয় করেছি। দর্শক পুনরায় ডান্সার শাহ আলম চরিত্রে পাবে আমাকে। ওয়েব ছবিটি দেখা যাবে বঙ্গতে। এ ছাড়া আরো দুটি কাজ করেছি। একটি আশিকুর রহমানের ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়’; যেখানে আমার সঙ্গে আছেন তারিক আনাম খান, আহমেদ হাসান সানি ও পারসা ইভানা। আরেকটি শেখ নাজমুল হুদা ইমনের ‘ভ্যানিশিং ম্যান’; এখানে প্রথমবার সাফা কবিরের সঙ্গে জুটি হয়েছি। </p> <p><strong>কাজল আরেফিন অমির নির্মাণ ছাড়া আপনাকে খুব একটা পাওয়া যায় না। কারণ কী?</strong><br /> অমি ভাইয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। তাঁর হাত ধরেই আমার উঠে আসা। তিনি যেভাবে গল্প তুলে ধরেন, যে পরিসরে কাজ করেন, সেটা কেউ করেন না। গল্প আর নির্মাণের দিক দিয়ে একেবারে বিশেষ কিছু পেলে তবেই অন্যদের কাজ করি। এবারের ঈদের নাটক দুটি সে রকমই।</p> <p><strong>‘ফিমেল-৪’ ইউটিউবের নাটক থেকে ওটিটি প্ল্যাটফরমে ওয়েব ছবি হয়ে আসছে। চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে কি?</strong><br /> দেখুন, পৃথিবীতে কোনো কিছুই ফ্রি নয়। পানি খেতেও টাকা লাগে। তাহলে বিনোদন কেন নয়? বিশ্বজুড়ে ওটিটি প্ল্যাটফরম অনেক আগেই প্রতিষ্ঠিত। আমরাও টাকা দিয়ে তাদের কনটেন্ট দেখি। দেশেও এখন ওটিটির গ্রাহক বাড়ছে। যেকোনো কাজের প্রথম দিকে চ্যালেঞ্জ থাকেই। এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে আনন্দ আছে। ‘ফিমেল’-এর এই কিস্তি অনেক বড় পরিসরে বানানো হয়েছে। সিনেমাটিক আবহ আছে। চরিত্রগুলোতে নতুন করে অনেক কিছু যুক্ত করেছেন অমি ভাই। অভিনয়শিল্পী হিসেবে আমিও দারুণ এক্সাইটেড কাজটি নিয়ে।</p> <p><strong>অভিনেতা আর নির্মাতা দুই ভূমিকায় আপনি সক্রিয়। দুটি পরিচয়কে কিভাবে পর্যালোচনা করবেন?</strong><br /> পলাশ হতে এসেছিল নির্মাতা। তাকে মানুষের কাছে পরিচিত করেছে অভিনয়। আমি কিন্তু অভিনেতা পলাশকে ফেলে দিতে পারব না। সে আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। আর পরিচালক পলাশ আমার একটি স্বকীয় চরিত্র। দুটিকেই সমানভাবে দেখি, সমান মনোযোগে কাজ করি। ‘সন্ধ্যা ৭টা’ )পলাশ পরিচালিত সর্বশেষ নাটক) যখন মুক্তি পায়, অনেকেই বলেছিল, এখানে আমি অভিনয় করলে ভালো হতো। কিন্তু আমার ব্যাখ্যা হলো, পলাশ তখনই নিজের পরিচালিত কোনো কাজে অভিনয় করবে, যখন গল্প তাকে চাইবে। আমি নিজের জন্য আলাদা করে ঐশ্বরিক একটা চরিত্র বানিয়ে ফেলতে চাই না। এই লোভ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চাই। সৃষ্টিশীল কাজে সংযত থাকা খুব জরুরি। আর এই সংযত হওয়ার বিষয়টা তখনই আসে, যখন কেউ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনার মধ্যে থাকেন।</p> <p><strong>আপনি প্রচুর পড়েন। কিছুদিন আগে তারিক আনাম খানকে জীবনানন্দ দাশের জীবন নিয়ে লেখা শাহাদুজ্জামানের ‘একজন কমলালেবু’ বইটি উপহার দিয়েছেন। ঘটনাটি একটু জানতে চাই, সঙ্গে জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে আপনার ভাবনা কেমন, সেটাও বলুন...</strong><br /> এটা ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়’ নাটকের শুটিংয়ের সময়ের ঘটনা। এই নাটকে তারিক আনাম স্যার যে চরিত্র করেছেন, তাতে জীবনানন্দ দাশের অনেক প্রভাব আছে। তাঁর কবিতা আওড়াতে হয়েছে। তো শুটিংয়ের সময় কবিকে নিয়ে কথা হচ্ছিল আমাদের মধ্যে। তখনই তারিক আনাম স্যারকে বইটির কথা বলি, তিনিও আগ্রহ প্রকাশ করেন। এভাবেই উপহার দেওয়া। তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন। আর জীবনানন্দ আমার কাছে একজন ঐশ্বরিক কবি। তাঁকে আমি মনেপ্রাণে ধারণ করি।</p> <p><strong>বইটি পড়ার পর তারিক আনাম খানের কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন?</strong><br /> আমি আর জিজ্ঞেস করিনি। পরেরবার দেখা হলে অবশ্যই বইটি নিয়ে আলাপ করব। তারিক আনাম স্যারের সঙ্গে আমার দেখা করতে, কথা বলতে খুব ভালো লাগে। এই মানুষটির সঙ্গে সময় কাটানো মানে নিজেকে সমৃদ্ধ করা।</p> <p><strong>যত দূর জেনেছি ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়’ নাটকে ভিন্ন ভিন্ন পেশার কিছু মানুষ মধ্যরাতে একত্র হয়, কথায় কথায় তাদের জীবন ও চিন্তা-ভাবনা উঠে আসে। বাস্তবে রাতভর কার সঙ্গে এ রকম আড্ডা দিতে চান?</strong><br /> এ রকম বহু রাত আমি আড্ডা দিয়েছি, আমার খুব প্রিয় মানুষ জুনায়েদ ইভান (অ্যাশেজ ব্যান্ডের প্রধান) ভাইয়ের সঙ্গে। সাত-আট ঘণ্টা গান-গল্পে পার করে দিতাম, ভোর হয়ে যেত, অথচ মনে হতো কিছুক্ষণ আগেই আড্ডা শুরু করেছি! তাই ভবিষ্যতেও যদি এ রকম আড্ডা দিতে চাই, শুধু তাঁর সঙ্গেই দেব।</p> <p><strong>জুনায়েদ ইভানের প্রতি আপনার এই তীব্র ভালো লাগার শুরুটা কবে, কিভাবে?</strong><br /> ২০১৫ সালের কথা। গণজাগরণ মঞ্চের এক কনসার্টে শেষ ব্যান্ড হিসেবে পারফরম করে ‘অ্যাশেজ’। তখন চিনতাম না সেভাবে। ভাবলাম, একটু শুনে যাই, কেমন লাগে দেখি। ইভান ভাই স্টেজে এসে জিজ্ঞেস করেন, কোন গান শুনতে চায় উপস্থিত দর্শক। ৫০ থেকে ৬০ জনের মতো মানুষ ছিল, প্রায় সবাই সমস্বরে তাঁর বিভিন্ন গানের নাম বলছিল। গানগুলো তাঁদের মুখস্থ। আমি অবাক হয়ে গেলাম, এটা কোন ব্যান্ড, যাদের সম্পর্কে আমি জানি না! পরে ‘অ্যাশেজের’ খোঁজ নিলাম, ইভান ভাইয়ের লেখা পড়া শুরু করলাম। এভাবেই তাঁর প্রতি মুগ্ধতার শুরু। আরেকটি বিষয় যোগ করতে চাই, ইভান ভাই তাঁর শেষ বইটি ‘আমার গান ও কিছু কথা’ আমাকে উপহার দিয়েছেন। সেটার অটোগ্রাফে লেখা, ‘এই বইটি লেখার সময় প্রায় রাতে তোর কথা মনে হতো। সব কিছু বলা হয় না, বলা হবে ভেবে হারিয়ে যায়।’ শুধু তা-ই নয়, আমার ১০ মাস বয়সী সন্তানকেও তিনি বইটি উপহার দিয়েছেন। ও বড় হলে যেন<br /> পড়তে দিই।</p> <p><strong>আবার একটু কাজের প্রসঙ্গে আসি। অভিনয় দিয়ে দর্শকের ভালোবাসা তো পাচ্ছেনই। সমালোচনাও হয় মাঝেমধ্যে। সেটা কিভাবে নেন?</strong><br /> আগে খোঁজার চেষ্টা করি, সমালোচনা কেন হচ্ছে? যদি দেখি ভুলত্রুটি হয়েছে, তাহলে নিজেকে শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করি। আর যদি মনে হয়, অহেতুক সমালোচনা; তাতে কর্ণপাত করি না। আমি যতক্ষণ বাসায় থাকি, মোবাইল ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকি। ঘরে আমি একদম পারিবারিক মানুষ। জয় গোস্বামীর একটি কথা আছে, যখন আপনার চেহারা বাইরে চলে আসে, তখন অনেক কিছুই নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। আমি সেটা মেনে নিয়েছি। এটাই বাস্তবতা।</p> <p><strong>ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ভাবেন?</strong><br /> কতগুলো কাজে অভিনয় করব কিংবা পরিচালনা করব, এসব নিয়ে ভাবি না। আমি ভাবি, যখন আমার কাজ থাকবে না, জনপ্রিয়তা থাকবে না, আমাকে নিয়ে চর্চা হবে না, তখন আসলে কী করব? ভাবতে গিয়ে আমার ভিত্তিটাকে মজবুত করার চেষ্টা করছি। আমার একটা ফাউন্ডেশন আছে, ডাকবাক্স, এটাকে সুন্দরভাবে দাঁড় করাচ্ছি। ছয় বছর ধরে এটা চালাচ্ছি, কারো কাছ থেকে এক টাকাও নিইনি। তো এই ফাউন্ডেশন বড় হোক, আমার ছেলেটা সুন্দরভাবে বেড়ে উঠুক। মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতে পারলেই আমার জীবন সার্থক। আমার কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। একদিন জনপ্রিয়তা থাকবে না, কিন্তু পরিবার ঠিকই থাকবে। সন্তান হওয়ার পর আমি এই বিষয়গুলো আরো গভীরভাবে অনুভব করি। এখন কাজ ছাড়া এক মুহূর্তও বাইরে থাকি না। শুটিং শেষে বাসায় অথবা অফিসে, এর বাইরে কোথাও নেই আমি।</p> <p><strong>ছেলের জন্য এত পরিবর্তন। তাকে নিয়ে আলাদা কিছু বলতে চান?</strong><br /> এই সাক্ষাৎকারটি আমি আমার ছেলেকে উৎসর্গ করতে চাই। তাঁর জন্য কবি ভাস্কর চক্রবর্তীর লেখা প্রিয় একটি কবিতার লাইন বলি, ‘পৃথিবীর সমস্ত পুকুরপাড়ের সরু রাস্তার পাশে একটা লম্বা গাছ, অকারণে, দাঁড়িয়ে থাকে—তোমার পাশে আমি দাঁড়িয়ে থেকেছি সেই রকম!’ আমার সন্তানের পাশে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে চাই। তাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি আমি। আগামী জীবনটা ওকে ছাড়া কল্পনা করতে পারি না।</p>