<p>ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে রাজধানীর দারুস সালাম থানায় এখন বিভিন্ন সরঞ্জামের সংকট দেখা দিয়েছে। টহল গাড়ি ও জনবল সংকট তো আছেই, তার ওপর রয়েছে কম্পিউটারসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব। এতে জোড়াতালি দিয়ে চলছে থানার কার্যক্রম।</p> <p>সেবাপ্রত্যাশীরা বলছে, থানার পুলিশ সদস্যরা এখনো এলাকার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাসহ কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে ব্যর্থ।</p> <p>তারা জানায়, থানাটি চুরি ও পারিবারিক কলহের মতো ছোট ছোট অভিযোগগুলো নিয়েই দিন পার করছে। তবে বিভিন্ন সংকট ও সীমাবদ্ধতার কথা জানালেও সেবাদানের ঘাটতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন থানা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।</p> <p>গত বুধবার দারুস সালাম থানায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া যায়।</p> <p>হামলার অভিযোগে মামলা করতে এসেছেন সংশ্লিষ্ট থানার বাসিন্দা মো. ফাহিম (২২)। মাথায় ব্যান্ডেজ। অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা চালিয়েও মামলা তালিকাভুক্ত করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।</p> <p>কালের কণ্ঠকে ফাহিম বলেন, ‘আমার বাবাকে কিছু লোকজন মারধর করছিল। তাদের থামাতে গেলে রড দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। আমার স্ত্রীকেও লাথি-ঘুষি মারে। থানায় এসেছি নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে মামলা করতে। তবে ডিউটি অফিসার ও ওসি আমার মামলা নিতে অস্বীকার করেন। পীড়াপীড়ির এক পর্যায়ে তাঁরা জানান, মামলা হয়েছে। অথচ এসংক্রান্ত কোনো কাগজ আমাকে দেওয়া হয়নি।’ একজন অফিসার বিষয়টি দেখবেন বলে জানানো হয়। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি পরে বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।</p> <p>সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে এসে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইমতিয়াজ উদ্দিন হিরণ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘একটি জিডি করতে প্রায় দেড় ঘণ্টা ডিউটি অফিসার ও থানার ওসির কক্ষে ধরনা দিচ্ছি।’</p> <p>অভিযোগের ধরন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট থানাধীন এলাকায় আমার একটি জমি ও কিছু ঘর আছে। যার সব বৈধ কাগজও আমার কাছে রয়েছে, অথচ আমি ভোগদখল করতে পারছি না। জমি উদ্ধারে আমি থানার সহযোগিতা চাইনি। বিষয়টি শুধু তাদের অবগত করে রাখার জন্য জিডি করতে এসেছি।’</p> <p>থানার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ দিনে প্রায় একডজন মামলা তালিকাভুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া গড়ে প্রতিদিন ২০টি জিডি হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ের মতো মোবাইল ফোন চুরি, ধর্ষণ ও পারিবারিক কলহের মতো অভিযোগগুলো বেশি আসছে। কিছু মামলার আসামি ধরা হয়েছে। বাকিগুলো নিয়ে কাজ চলছে।</p> <p>পুলিশ সদস্যরা জানান, গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্যান্য থানার মতো দারুসসালাম থানায়ও ব্যাপক লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ সময় থানায় ব্যবহৃত ছয়টি কম্পিউটার, এসি, সিসি ক্যামেরা, ডাম্পিংয়ে থাকা মোটরযান, বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ যাবতীয় আসবাব লুট করা হয়েছে। থানার সাইনবোর্ডসহ দেয়ালগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ভাঙা হয়েছে টহলের গাড়ি।</p> <p>থানা কার্যক্রম সচল করতে দেয়ালগুলো রং করা হয়েছে। কেনা হয়েছে নতুন চেয়ার, টেবিল, ফ্যানসহ প্রয়োজনীয় আসবাব। কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হলেও এখনো ১৪টি পিস্তল ও রিভলবার উদ্ধার হয়নি। টহলের দুটি গাড়ি মেরামত করে ব্যবহার করা হচ্ছে।</p> <p>সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটিতে এখন আর তেমন ক্ষতচিহ্ন নেই। শুধু কয়েকটি জানালার কাচ ভাঙা। ভবনের দেয়ালের একপাশে বোর্ড ঝোলানো ছিল। সেটি নেই, তবে ছাপ রয়ে গেছে। চেয়ার-টেবিলসহ দেয়ালে নতুন রং করা। দুপুরের দিকে থানায় এক ঘণ্টা অস্থানকালে পুলিশ সদস্যদের পর্যাপ্ত উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে এ সময় অভিযোগকারীদের সংখ্যা ছিল খুব কম। </p> <p>ওসি রকিব উল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কাজের ক্ষেত্রে আমাদের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই থানার জনবল প্রায় ১১০ জন। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ কর্মরত আছেন। বদলিজনিত কারণে অন্যরা যোগদানের অপেক্ষায় আছেন। জনবল সংকটের পাশাপাশি রয়েছে টহল গাড়ির সংকট। আগে থানায় নিজস্ব চারটি ও ভাড়ায় দুটি টহল গাড়ি ব্যবহার করা হতো। ভাঙচুরের পর এখন থানার দুটি গাড়ি সচল রয়েছে। এ ছাড়া কম্পিউটারসহ অন্যান্য লজিস্টিকস সাপোর্টেও রয়েছে ঘাটতি। এসব ঘাটতি পূরণ হলেই আমরা শতভাগ সেবা দিতে পারব। জনবান্ধব পুলিশ হওয়ার জন্য আমাদের সাধারণ মানুষের কাছে উন্মুক্ত থাকতে হবে।’</p>