<p>সবুজ-শ্যামল ছায়াঘেরা চত্বরে নারীদের উপচে পড়া ভিড়। একটি মেলাকে কেন্দ্র করে নারীদের এমন জমায়েত। মেলার নাম ‘বউমেলা’। শত বছরের পুরনো এই মেলায় শুধু যে বউ এসেছে তা নয়, এখানে অংশ নিয়েছেন শাশুড়ি, ননদ, জা-ঝিসহ শিশু-কিশোরীরা।</p> <p>রবিবার (১৩ অক্টোবর) শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বগুড়ার ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়া ইছামতি নদীর তীরে বসেছে এক দিনের এই ‘বউমেলা’। মেলায় নারীদের পাশাপাশি বাহারি সব কাচের চুরি, রঙিন ফিতা, লিপস্টিক, কানের দুল, ঝিনুকের মালার পসরা সাজিয়ে রেখেছেন পুরুষরা।</p> <p>মেলায় এসে শাশুড়ি, ননদ, জা-ঝিসহ নারীরা এসব অলংকার কিনতে দামাদামি করছেন। দামে মিলে গেলে কিনছেন তারা। তবে ‘বউমেলা’য় পুরুষদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ থাকায় দৃষ্টির সীমানাজুড়ে শুধুই নারীদের চোখে পড়ে। তিলা, কদমা, নিমকি, শখের মিঠাই, চানাচুর, মাসের বোরা, খই, বাতাসা ও হরেক রকম খাবারের ঘ্রাণে ভারি হয় মেলার প্রান্তর।</p> <p>স্থানীয়রা জানান, যুগ-যুগান্তের পুরনো এই মেলার ঐতিহ্য রয়েছে। প্রতিবছর বিজয়া দশমীতে আয়োজিত হয় বউমেলা। শুরুতে মেলাটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য হলেও বর্তমানে তা সব ধর্মের মানুষের উৎসবে পরিণত হয়েছে। এক দিনের জন্য হলেও নারীদের নিজস্ব পরিসর তৈরির কল্পনা থেকেই মেলার শুরু। আর পুরনো ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির বয়ে চলেছে এখানকার মেলা।</p> <p>মেলায় আসে কুমারদের মাটির গড়া স্বপ্ন। তারা মাটি ছেনে তৈরি করেন দেশি-বিদেশি ফলের রঙিন ব্যাংক, সাহেব-মেম, বউ পুতুল, গরু, ছাগল, হাতি, বাঘ, সিংহ, ঘোড়া, কুমির, হাঁস, মুরগি, মাছ, পেখম তোলা ময়ূর এবং পাখি। যার উপস্থিতি চিরায়ত গ্রামবাংলার কুমারপাড়ার শৈল্পিক জীবনের সংগ্রামী অস্তিত্বের জানান দেয়।</p> <p>মেলায় আসা নারীরা উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেন, এই দিনটির জন্য তারা বছরজুড়ে অপেক্ষা করে থাকেন। মেলাটিতে শুধু নারীদের আগমন থাকায় কেনাকাটা, ঘোরাফেরায় থাকে তাদের অবাধ বিচরণ।</p> <p>মেলা আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ কুমার সরকার বলেন, গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে তারা যুগ যুগ ধরে শান্তিপূর্ণভাবে মেলাটির আয়োজন করে আসছেন। দিনভর ‘বউমেলা’ চলার পর সন্ধ্যায় ইছামতি নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে মেলা শেষ হয়। প্রতিবছর বিভিন্ন এলাকা থেকে সব ধর্মের নানা বয়সের মানুষ ছুটে আসেন এই মেলায়।</p>