<p style="text-align:justify">ছোট একটি খালের একপাশে রয়েছে মসজিদ। অপর পাশে মন্দির। মসজিদে মুসলমানরা পড়ছেন নামাজ আর মন্দিরে পূজা উৎসব পালন করে আসছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের সাক্ষী হয়ে আছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা সদরের আল মদিনা জামে মসজিদ ও জগন্নাথপুরের কেন্দ্রীয় মন্দির শ্রী শ্রী জগন্নাথ জিউর আখড়া।</p> <p style="text-align:justify">গত বুধবার থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়। আজ শনিবার ছিল পূজার মহানবমী। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এদিন দর্শনার্থী ও ভক্তদের ঢল নামে মণ্ডপে। মন্দিরের গেট এলাকায় কয়েকজন আনসার সদস্যদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরা শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছেন।</p> <p style="text-align:justify">খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা সদরের জগন্নাথপুর পেরৈসভার জগন্নাথপুর এলাকায় প্রাচীনতম হিন্দু সম্প্রদায়ের কেন্দ্রীয় শ্রী শ্রী জগন্নাথ জিউর আখড়া স্থাপিত রয়েছে। এ মন্দিরে বিভিন্ন পূজার মণ্ডপ তৈরি করে ধর্মীয় কার্যক্রম পালন করে আসছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। মন্দিরের পাশেই প্রায় ৫ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জুনেদ মিয়ার অর্থায়নে আল মদিনা জামে মসজিদ নামে একটি ধর্মীয় উপাসনায় স্থাপন করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয় বাসিন্দা আফু মিয়া জানান, যুগ যুগ ধরেই আমাদের এলাকার মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মিলেমিশে এক সঙ্গে সমাজে বসবাস করে আসছি। শুধু ধর্মীয় কার্যক্রম ছাড়া সামাজিক ও রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কাজে আমরা সম্পৃক্ত। এখানে যুগ যুগ ধরে সম্প্রীতির সেতুবন্ধন অটুক রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয় ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন জানান, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যালঘু বলা হয়ে তাকে কিন্তু আমরা কখনও তাদের সেরকম দেখি না। আমরা একে অপরের সুখ-দুঃখে মিশে আছি। আমাদের ঈদে তাদের নিমন্ত্রণ জানানো হয়। তাদের ধর্মীয় উৎসবেও আমাদের নিমন্ত্রণ করা হয়। এটি চলে আসছে যুগের পর যুগ।</p> <p style="text-align:justify">আল মদিনা জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন হাফেজ একরামুল বলেন, পাশাপাশি মসজিদ ও মন্দির স্থাপিত হলেও আমরা আমাদের ধর্ম পালন করছি। তারা তাদের ধর্ম পালন করছেন। ইসলামে সকল ধর্মকে সম্মান করার নির্দেশনা রয়েছে। নামাজের সময় পূজার কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এতে আমাদের কোনো সমস্যা হয় না।</p> <p style="text-align:justify">শ্রী শ্রী জগন্নাথ জিউর আখড়ার সভাপতি শুধাংসু শেখর রায় বাচ্চু জানান, এ মন্দিরে স্থাপনের নিদিষ্ট তারিখ এখনো জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ৭শ বছর পূর্বে এ মন্দির স্থাপিত হয়েছে। এখানে দুর্গাপূজাসহ সব ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়। হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সম্প্রীতি থাকায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।</p> <p style="text-align:justify">জগন্নাথ জিউর আখড়ার মণ্ডপের পূজা কমিটির সভাপতি বিভাষ দে বলেন, বাপ দাদা যেভাবে ধর্মীয় সকল অনুষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করে এসেছেন। আমরা একইভাবে উৎসব উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে ধর্মীয় উৎসব করে আসছি। আমরা হিন্দু-মুসলিম একে অপরের সঙ্গে সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করে আসছি। আমাদের বৃহৎ পূজায় অনেক মুসলিম স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন। মুসলমানদের নামাজের সময় আমাদের অনুষ্ঠান আমরা বন্ধ রাখি। নামাজ শেষ হলে আবার অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে করে কারো কোনো সমস্যা হয় না।</p> <p style="text-align:justify">জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান আকন্দ বলেন, জগন্নাথপুর থানায় আমি নতুন এসেছি। এখানে মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এক সম্প্রীতির বন্ধন রয়েছে। এবার জগন্নাথপুরে ব্যাপক উৎসব উদ্দীপনায় ৪১টি মণ্ডপে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব চলছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। </p>