<p>বিশিষ্ট আইনজীবী ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা সদস্য মনোনীত হয়েছেন। এ খবরে চুনারুঘাটের সর্বত্র আনন্দের বন্যা বইছে।</p> <p>গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাত ৯টায় ১৬ উপদেষ্টা সদস্যের মধ্যে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে তিনিসহ ১৬ সদস্য শপথগ্রহণ করেছেন। </p> <p>রিজওয়ানা হাসান রাজধানী ঢাকার ধানমণ্ডিতে ১৯৮৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন পৈতৃক নিবাস হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের নরপতি হাবিলী গ্রামে। তার পিতা সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মহিবুল হাসান এবং মা সুরাইয়া হাসান। বাবা-মায়ের একমাত্র কন্যা তিনি এবং পরিবারে সবার ছোট। তিনি সহপাঠী আইনবিদ ব্যবসায়ী আবু বকর সিদ্দিকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি তিন সন্তানের জননী। মেয়ে নেহলা, দুই ছেলে যাবির ও জিদান।</p> <p>রিজওয়ানা হাসান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হলেও আইনের প্রতি আগ্রহ থেকে পরে বিভাগ পরিবর্তন করে আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৯৩ সালে এলএলএম সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশের বাইরে বেশ কয়েকটি ফেলোশিপ কোর্স সম্পন্ন করেছেন। ২০০৭ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আইজেনহাওয়ার ফেলোশিপ করেন।</p> <p>চুনারুঘাট নরপতি গ্রামের বাসিন্দা রিজওয়ানা হাসানের চাচাতো ভাই চুনারুঘাট উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ লিয়াকত হাসান বলেন, ‘সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আমার ছোট বোন। আমি গর্ববোধ করি আমার চাচাতো বোন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায়। সে পরিবেশ নিয়ে কাজ করে, তাই কর্মব্যস্ত থাকায় নিজ বাড়িতে বেশি একটা আসা হয় না। সর্বশেষ আমাদের নিজ বাড়িতে প্রায় দুই বছর আগে এসেছিল।’</p> <p>সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশবিষয়ক সচেতনতা তৈরির কারণে ২০০৭ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিবেশ পুরস্কার-এ ভূষিত হন। তার পরিচালিত সংগঠন বেলা ২০০৩ সালে জাতিসংঘের এনভায়রনমেন্ট প্রগ্রাম ঘোষিত গ্লোবাল ৫০০ রোল অব অনার্স পুরস্কারে ভূষিত হয়। এ ছাড়া প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২০০৯ সালে তিনি পেয়েছেন ‘পরিবেশের নোবেল’খ্যাত ‘গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ’। তার এসব নানামুখী কর্মকাণ্ডের কারণেই ২০০৯ সালে বিশ্বখ্যাত টাইম সাময়িকী তাঁকে ‘হিরোজ অব এনভায়রনমেন্ট’ খেতাবে ভূষিত করে। এ ছাড়া তিনি ২০০৮ সালে নেপালভিত্তিক ক্রিয়েটিভ স্টেটমেন্টস অ্যান্ড সাউথ এশিয়া পার্টনারশিপ প্রদত্ত ‘সেলিব্রিটিং উইমেনহুড অ্যাওয়ার্ড’প্রাপ্ত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাঁচজন নারীর একজন। এ ছাড়া তিনি ২০১২ সালে এশিয়ার নোবেল পুরস্কার হিসেবে বিবেচ্য ফিলিপাইনভিত্তিক র‌্যামন ম্যাগসেসাই পুরস্কার লাভ করেন।</p> <p>২০২২ সালে তিনি আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার পান। গত ২০ বছর ধরে যুগান্তকারী আইনি মামলার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নে গতিশীলতা পরিবর্তন করে পরিবেশগত ন্যায়বিচারের ওপর জনকেন্দ্রিক দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন। জনস্বার্থ আইন সংস্থা বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী হিসেবে বন উজাড়, দূষণ, অনিয়ন্ত্রিত জাহাজ ভাঙা এবং অবৈধ ভূমি উন্নয়নের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ মামলা লড়েছেন এবং জিতেছেন। ২০০৯ সালে তিনি টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বের ৪০ জন এনভায়রনমেন্টাল হিরোর একজন হিসেবে মনোনীত হন এবং ২০১২ সালে র‌্যামন ম্যাগসেসাই পুরস্কারে ভূষিত হন। শক্তিশালী মহলের প্রতিরোধ ও নিজের এবং পরিবারের প্রতি সহিংসতার হুমকি সত্ত্বেও বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের স্থানীয় প্রভাবগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে আদালতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। </p> <p>অন্তর্বর্তী সরকারে মূল উদ্দেশ্য কী হবে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, বৈষম্য দূর করা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করাই হবে উপদেষ্টা সরকারের মূল উদ্দেশ্য। আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সাথে যাতে পালন করতে পারি সে জন্য সবার নিকট দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি।’</p>