<p style="text-align:justify">কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় রাজধানীতে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন কুমিল্লার তাজুল ইসলাম (৫৮)। পরিবারের সব সদস্যের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করা তাজুলকে হারিয়ে সবাই এখন দিশেহারা। ঘটনার ১০ দিন পার হলেও তাজুলের পরিবারের কান্না ও আহাজারি এখনো থামছে না। </p> <p style="text-align:justify">আজ রবিবার (২৮ জুলাই) সরেজমিনে বরুড়া উপজেলার উত্তর শিলমুড়ি ইউনিয়নের গামারোয়া গ্রামে তাঁর বাড়িতে এমন দৃশ্য দেখা যায়। </p> <p style="text-align:justify">গত ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) কোটা বিরোধীদের সংঘর্ষে রাজধানীর উত্তরা আজমপুর এলাকার আমির কমপ্লেক্সের সামনে গুলিবিব্ধ হয়ে নিহত হন তাজুল। পরদিন ১৯ জুলাই বুকের ভেতর গুলি রেখেই ময়নাতদন্ত ছাড়া তাজুলকে পারিবারিক কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়। </p> <p style="text-align:justify">স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত মো. তাজুল ইসলাম বরুড়া উপজেলার উত্তর শীলমুড়ি ইউনিয়নের গামারোয়া গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে। তিনি স্ত্রী, দুই কন্যা ও এক ছেলে সন্তান নিয়ে পূর্বাচল এলাকার কাঞ্চনব্রিজ সংলগ্ন উলুখোলা এলাকায় বসবাস করতেন। ঢাকার উত্তরা আজমপুর এলাকায় রেন্ট-এ কারের ব্যবসা করতেন। </p> <p style="text-align:justify">এক সময় গাড়ি চালিয়ে তিনি সংসারের খরচ মেটাতেন। বার্ধক্যজনিত সমস্যাসহ অসুস্থতার কারণে একজন চালক রেখেছিলেন। বসতেন রেন্ট-এ কারের অফিসে। একজন চালক রেখে গাড়িটি ভাড়ায় খাটাতেন তিনি। অর্থ সংকটে ছেলে মেয়েদের কেউই এসএসসির গণ্ডি পার হতে পারেননি। ১৫ বছরের একমাত্র ছেলে সিয়াম সংসারের হাল ধরতে জামাকাপড় সেলাইয়ের কাজ শিখছেন। </p> <p style="text-align:justify">তাজুল ইসলামের একমাত্র ছেলে রোদোয়ান আহমেদ সিয়াম বলেন, ‘সেদিন তাঁর বাবা আশুরার রোজা রেখেছিলেন। সারাদিন রেন্ট-এ কারের অফিসের পাশে উত্তরার একটি মসজিদের ভেতর ছিলেন। বিকেলে ইফতারি নিয়ে বাসায় ফিরবেন বলে জানিয়ে ছিলেন। কিন্তু তাঁর বাবার আর ফেরা হয়নি। কোথা থেকে গুলি এসে বাবার বুকটা ঝাঁঝড়া হয়ে যায়। মূহুর্তের মধ্যে ঘটনাস্থলেই প্রাণ যায় তাজুল ইসলামের।’</p> <p style="text-align:justify">সিয়াম বলেন, ‘ঘটনার দিন ঢাকা শহরের গোলাগুলির খবরে বাবাকে আমরা রাস্তায় বের হতে নিষেধ করেছিলাম। বাবা দুপুরে জানিয়ে ছিলেন, উত্তরার একটি মসজিদের ভেতর আছেন। চালককেও গাড়ি রাস্তায় বের করতে দেননি। সেদিন বাবা আশুরার রোজা রেখেছিলেন। বিকেলে ইফতারি নিয়ে বাসায় আসবেন বলে জানিয়ে ছিলেন। তবে বাবা আর ফেরেননি। বিকেলে সংঘর্ষের সময় রাস্তায় উঁকি মারতেই গুলিবিদ্ধ হন। মূহুর্তের মধ্যে বাবার বুকটা ঝাঁঝড়া হয়ে যায়। মোবাইলে খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে বাবার গুলিবিদ্ধ মরদেহ দেখতে পাই।’</p> <p style="text-align:justify">সিয়াম আরো বলেন, ‘তখন হাসপাতালে রক্তাক্ত অনেক মানুষের চিৎকার আর আহাজারিতে দিশেহারা হয়ে পড়ি। এ বয়সে এতো রক্ত কখনো দেখিনি। আমার বাবার তো কোনো অপরাধ ছিল না। তিনি কোটা আন্দোলনের পক্ষে-বিপক্ষে ছিলেন না। তাকে কেন গুলি করে মারা হলো? এখন কীভাবে চলবে আমাদের সংসারের খরচ। সঞ্চয় বলতে কিছুই নাই। কার কাছে বিচার চাইব। বাবার মৃত্যুর শোকে মাও এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">নিহত তাজুলের ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ভাড়ায় মাইক্রোবাস চালাই। ঘটনার দিন নারায়ণগঞ্জে ছিলাম। অন্য চালকদের কাছ থেকে খবর পেয়ে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে গিয়ে ভাইয়ের মরদেহ শনাক্ত করি।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘এ কেমন আন্দোলন? রাস্তায় কেন নিরপরাধ লোককে গুলিতে মরতে হবে? অন্যদের কাছে জেনেছি, আমার ভাই বাসায় ফিরতে চেয়েছিলেন। তাই রাস্তার পরিস্থিতি দেখতে বের হন, এ সময় হঠাৎ গুলি এসে বুকে লাগে। তাকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, ‘ভাই মারা যাওয়ার কারণে চিকিৎকরা মরদেহের ভেতর থেকে আর গুলি বের করেননি। এ অবস্থায়ই গ্রামের বাড়িতে নিয়ে তাকে দাফন করা হয়। ভাইয়ের মৃত্যুতে তার সংসারটি অসহায় হয়ে গেল। সরকারি কোনো সহায়তা না পেলে এ পরিবারকে রাস্তায় বসতে হবে।’<br />   <br />  </p>