<p style="text-align: justify;">ফেসবুক লাইভে কষ্টের কথা জানিয়ে রহিমা আক্তার (২৪) নামের এক গৃহবধূ ‘আত্মহত্যা’ করেছেন বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার ভোরে রাজশাহীর চারঘাট পৌর শহরের হলের মোড় এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ওই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।</p> <p style="text-align: justify;">রহিমার স্বামী সায়েম ইসলাম ওরফে সাগর একটি ওষুধ কম্পানিতে চাকরি করেন। তারা পুঠিয়া উপজেলার বাসিন্দা। চারঘাট পৌর এলাকার ওই বাসায় তারা ভাড়া থাকতেন। ঘটনার রাতে ওই গৃহবধূ বাড়িতে একাই ছিলেন।</p> <p style="text-align: justify;">জানা গেছে, ঈদের দিন স্বামীর সঙ্গে বাবার বাড়ি ও শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন রহিমা। ভালো লাগছিল না বলে স্বামী-সন্তানকে রেখে তিনি একাই ভাড়া বাসায় চলে আসেন এবং ভোররাতে ‘আত্মহত্যা’ করেন।</p> <p style="text-align: justify;">পুলিশ জানায়, আত্মহত্যা করার আগে রহিমা আক্তার ২৩ মিনিট, ১২ মিনিট ও ৫ মিনিট সময়কালের তিনটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন।</p> <p style="text-align: justify;">২৩ মিনিটের ভিডিওতে রহিমা বলেন, ‘কথা হইল আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী কারা? প্রথমেই আমার বাবা ও ছোট (সৎ) মাকে বলি আমার প্রিয় মানুষটাকে (স্বামী) জেল, আইন-আদালতের পেছনে ঘুরাবা না। কারণ আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী তুমি (বাবা)। আজ যদি তুমি বিয়ে না করতে, আমার মাকে নিয়ে সংসার করতে তাহলে আমাকে নিয়ে এসব কথা বলার সাহস পেত না। জেল যদি কাউকে খাটতে হয় সে তোমার (বাবা)। সেটা একমাত্র তোমার। আর কারো না।’</p> <p style="text-align: justify;">রহিমা আরো বলেন, ‘আমার হাজব্যান্ডকে বলছি, তোমার নামে যদি কেউ এলিগেশন দেয় যে, তোমার মানসিক টর্চারে আমি মারা গেছি<span lang="DA" style="font-size:12.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">―</span></span>তুমি তার নামে মামলা দিবা। ওর নামে দিবা মামলা, কারণ আমার বাবা-মা ভালো হইলে কেউ সাহস পাইত?’</p> <p style="text-align: justify;">১২ মিনিট সময়কালের ভিডিওতে তিনি বলেন, “আমি একটি বই লিখতে শুরু করেছিলাম। বইয়ের নাম রাখতে চেয়েছিলাম ‘সুইসাইড’। বই লেখা শেষ না করতেই আমি নিজেই সুইসাইড হয়ে গেলাম। বাবা-মা খারাপ হলে কিন্তু সন্তানরা খারাপ হয় না। এসব কথা শুনতে শুনতে বোর হয়ে গেছি। জীবন দিয়ে প্রমাণ করে দিতে চাই।”</p> <p style="text-align: justify;">ফেসবুক লাইভে স্বামীর উদ্দেশে ওই নারী বলেন, ‘তুমি সন্তানের বাবা-মায়ের দায়িত্ব পালন করবে। আমি তোমাদের দুজনকে খুব ভালোবাসি। তোমার যখন চাকরি ছিল না, বেকার ছিলে, তখন আমি তোমাকে ছেড়ে যাইনি। এখন তোমার চাকরি হয়েছে। যে নতুন জীবনসঙ্গী হবে তাকে সময় দিও।’</p> <p style="text-align: justify;">পুলিশের ধারণা, লাইভ শেষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন রহিমা। </p> <p style="text-align: justify;">চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিদ্দিকুর রহমান এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘রহিমা আক্তারের বাবার সঙ্গে তার মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে বাবা আরেকটি বিয়ে করেন। এতে তিনি একা হয়ে পড়েছিলেন। এ নিয়ে তিনি বিষণ্নতায় ভুগছিলেন। আগেও বেশ কয়েকবার তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।’</p> <p style="text-align: justify;">তিনি আরো বলেন, ‘ভোরে ফেসবুক লাইভে আসেন ওই গৃহবধূ। এ সময় তিনি তার দুঃখের কথাগুলো বলেন। মা-বাবাকে নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। সকালে পুলিশ পাঠিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তার পরিবারের কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে।’</p>