<p style="text-align: justify;">ভোলায় তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চেয়ে আবেদন করায় তথ্য না দিয় উল্টো আবেদনকারী সাংবাদিকের কাছ থেকে তথ্য দেওয়ার খরচ বাবদ ৩০ হাজার টাকা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন ভোলা জেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলীল। বিষয়টি নিয়ে গত দুই দিন ধরে ভোলায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। </p> <p style="text-align: justify;">স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ জুন ভোলার তজুমদ্দিন রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক সাদির হোসেন রাহিম ইমেইলের মাধ্যমে ভোলা জেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে গত চার অর্থ বছরে ভোলার বিভিন্ন সড়কের পাশে থাকা গাছ কর্তনের তথ্য চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে সে সড়কের পাশ থেকে গাছ কাটার ৯ ধরণের তথ্য চেয়েছেন। এর মধ্যে এলজিইডির গত চার অর্থ বছরে সড়ক নির্মাণ, প্রসস্তকরণ ও সংস্কারের জন্য ভোলা জেলার মোট কয়টি সড়কের গাছ কর্তনের জন্য নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে ও নিলাম বিজ্ঞপ্তির কপি। </p> <p style="text-align: justify;">নিলামগুলোতে যে সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে তাদের দাখিলকৃত মূল্যের কপি। উক্ত সড়কগুলোর গাছ রোপনের জন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে যদি কোনো চুক্তি হয়ে থাকে তাহলে সেই তথ্যের অফিসিয়াল কপি। গাছগুলো কর্তণের জন্য যে নীতিমালা অনুসরণ করে নিলাম দেয়া হয়েছে তার কপি। প্রতিটি সড়কের গাছ নিলামের জন্য যে কমিটি ছিলো তাদের নাম, পদবি, ফোন নাম্বার ও নিলাম সংক্রান্ত রেজুলেশনের সকল কপি। </p> <p style="text-align: justify;">বন বিভাগ কর্তৃক এ সকল গাছের যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তার অফিসিয়াল কপি। নিলাম থেকে প্রাপ্ত টাকা যে ব্যাংক একাউন্টে জমা হয়েছে সেই ব্যাংকের নাম, একাউন্ট নাম্বার ও জমার স্বপক্ষে ব্যাংক রশিদ। উক্ত সড়কগুলোর গাছ কর্তনের নিলাম থেকে প্রাপ্ত টাকা নির্দিষ্ট অংশ যদি কোনো সুবিধাভোগী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মাঝে বণ্টন করা হয়ে থাকে সে সকল ব্যাক্তি প্রতিষ্ঠানের তথ্য। এলজিইডি কিভাবে এই গাছের মালিক তার স্বপক্ষে যে সকল ডকুমেন্টস রয়েছে তার কপি। </p> <p style="text-align: justify;">এ তথ্যগুলোর ফটোকপি চেয়ে আবেদন করেন তজুমদ্দিন উপজেলার স্থানীয় সাংবাদিক সাদির হোসেন রাহিম। আবেদন করার ৬দিন পর ভোলা জেলা এলজিইডির অফিসিয়াল ইমেইলের মাধ্যমে নির্বাহী প্রকৌশলীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠির মাধ্যমে আবেদন পেয়েছে স্বীকার করে তথ্য প্রদানের জন্য ফটোকপি ও অন্যান্য খরচ বাবদ ৩০ হাজার টাকা জমা দেওয়ার কথা জানানো হয়। </p> <p style="text-align: justify;">চিঠিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ভোলা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলীল জানান, তথ্য অধিকার আইনে বিধি-৮(৪) উপ-ধারা (১) এর বিধান মোতাবেক তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ ফি এবং চাহিত তথ্যের ২০২০-২০২১, ২০২১-২০২২, ২০২২- ২০২৩ এবং ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের বিভিন্ন কাগজপত্রের ফটোকপিসহ অন্যান্য সম্ভাব্য খরচ বাবদ ৩০ হাজার টাকার পে-অর্ডার নির্বাহী প্রকৌশলী, এলজিইডি, ভোলা বরাবরে প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। পে-অর্ডার প্রাপ্তি সাপেক্ষে তথ্য প্রাপ্তির কার্যক্রম শুরু করা হবে। উল্লেখ্য যে, তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ ফি ও ফটোকপি ও অন্যান্য খরচ পরবর্তীতে সমন্বয় করা হবে। আরও উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন দপ্তর থেকে তথ্য সংগ্রহ করা সময় সাপেক্ষে সকল তথ্য সংগ্রহ করে আপনার বরাবরে প্রেরণ করা হবে।</p> <p style="text-align: justify;">যদিও তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর ৮ ধারার (৪) উপধারা (১)-এ বলা হয়েছে, ‘তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনুরোধকারীকে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক ওই তথ্যের জন্য নির্ধারিত যুক্তিসংগত মূল্য পরিশোধ করতে হবে।’বিধি-৮-এ বলা হয়, ‘লিখিত কোনো ডকুমেন্টের কপি সরবরাহের জন্য (ম্যাপ, নকশা, ছবি, কম্পিউটার প্রিন্টসহ) এ-৪ ও এ-৩ মাপের কাগজের ক্ষেত্রে প্রতি পৃষ্ঠা দুই টাকা হারে ও তদুর্ধ্ব সাইজের কাগজের ক্ষেত্রে তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ ফি বা তথ্যের মূল্য পরিশোধযোগ্য হবে।</p> <p style="text-align: justify;">সাদির হোসেন রাহিম বলেন, ‘এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর চিঠি পেয়ে আমি অবাক হয়েছি। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে বসে কিভাবে এমন একটি অনিয়মতান্ত্রিক চিঠি আমাকে পাঠালেন? যে চিঠিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি কত পৃষ্ঠা কাগজের বিপরিতে তিনি এই মূল্য নির্ধারণ করেছেন। আমি মনে করি উনি তথ্য প্রদানে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে এই মূল্য নির্ধারণ করে তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন যা তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারি যে নিয়ম রয়েছে তা তিনি সম্পূর্ণরূপে ফলো করেননি। আমার চাহিত তথ্যের মূল্য কোনোভাবেই এত টাকা হতে পারেনা। আমি এ বিষয়ে আপিল করব।’</p> <p style="text-align: justify;">এ বিষয়ে ভোলা জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোবাশি্বরউল্লাহ চৌধুরী জানান, সাংবাদিকরা তথ্য চাইবেন সরকারি কর্মকর্তারা তথ্য আইন অনুযায়ী তথ্য দিবেন। শুধু সাংবাদিক নয় সকল নাগরিকের তথ্য পাবার অধিকার আছে। আর সেই তথ্য কিনে নিতে হবে কেনো? তিনি তথ্য দিতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রে টাকা চাওয়ার বিষয়টি বেমানান। তিনি তথ্য না দিয়ে উল্টো সাংবাদিকের কাছে এ ধরনের চিঠি পাঠিয়ে দুর্নীতির পরিচয় রেখে গেলেন।</p> <p style="text-align: justify;">স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ভোলা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলীল কালের কণ্ঠকে জানান, বিষয়টি নিয়ে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। উনি আমাকে একটা চিঠি দিয়েছে সেখানে অনকগুলো দপ্তরের কাগজ লাগবে। সেখানে অধিদপ্তর থেকে কাগজপত্রগুলো সংগ্রহ করা টাকার বিষয়। তাই তার কাছে ৩০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। যা খরচ যাবে বাকী টাকা দিয়ে দেয়া হবে। এছাড়াও তার সাথে আমার কথা হয়েছে, উপজেলা অফিস তাকে সেভাবে বুঝিয়ে বলতে পারেনি বিধায় একটা ভুল বোঝাবুঝি তৈরী হয়েছে। তাকে বলেছি ঈদের পরে আমার দপ্তরের আসলে কতো টাকার গাছ বিক্রি করা হয়েছে সে তথ্য দেয়া হবে।<br />  </p>