<p style="text-align: justify;">পেশায় ফেরিওয়ালা রুবেল মিয়ার (৩২) বাড়ি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের বেত্রাটি গ্রামে। তার ঘরে তিনটি কন‌্যাসন্তান। ছেলেসন্তান না থাকায় মনে অনেক দুঃখ তার। এরই মধ‌্যে গত রবিবার (৯ জুন) তার স্ত্রী আরেকটি ক‌ন‌্যাসন্তানের জন্ম দেন। এতে তিনি একেবারে হতাশ হয়ে পড়েন। এ হতাশা সংসারে অশান্তির জন্ম দেয়। এ অবস্থায় মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে শাশুড়ি সস্তু বেগম (৬০) ছেলেসন্তানের ব‌্যবস্থা করে দেবেন বলে মেয়ে জামাই রুবেলকে আশ্বস্ত করেন। </p> <p style="text-align: justify;">সস্তু বেগমের বাড়ি জেলার তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা ইউনিয়নের শাহবাগ গ্রামে। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি গ্রাম বা আশপাশে কোনো ছেলেশিশু আছে কি না তার খোঁজ করছেন। এক পর্যায়ে পাশের বাড়ির নাজনিন আক্তার ও সাজ্জাদ মিয়ার আড়াই মাসের ছেলেশিশু জুনায়েদের দিকে নজর পড়ে তার। মেয়ে জামাই রুবেলের সঙ্গে শিশুটিকে চুরির পরিকল্পনা করতে থাকেন সস্তু বেগম।</p> <p style="text-align: justify;">পরিকল্পনা অনুযায়ী রবিবার (৯ জুন) গভীর রাতে নাজনিনের বসতঘরে সিঁদ কেটে মায়ের কাছে ঘুমিয়ে থাকা শিশুটিকে চুরি করে নিয়ে যান তারা। </p> <p style="text-align: justify;">অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে সোমবার (১০ জুন) বিকেল ৪টার দিকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। একই সঙ্গে রুবেল ও তার শাশুড়িকে আটক করা হয়। আটকের পর সন্ধ‌্যার দিকে পুলিশের কাছে কেন শিশুটিকে তারা চুরি করেছিল তা বর্ণনা করেন রুবেল। </p> <p style="text-align: justify;">আটক রুবেল মিয়া বেত্রাটি গ্রামের মৃত শহীদ উদ্দিনের ছেলে। সস্তু বেগম জেলার তাড়াইল উপজেলা তালজাঙ্গা ইউনিয়নের শাহবাগ গ্রামের হারু মিয়ার স্ত্রী। </p> <p style="text-align: justify;">পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ সাংবাদিকদের বলেন, ‘মূলত ছেলেসন্তান না থাকার হতাশা থেকে শাশুড়ির সহযোগিতায় নাজনিনের ছেলে জুনায়েদকে চুরি করেন রুবেল। তার দুজনই পুলিশের কাছে শিশু চুরিতে জড়িত থাকার কাথা স্বীকার করেছেন।’ </p> <p style="text-align: justify;">পরে পুলিশ সুপার উদ্ধার করা শিশু জুনায়েদকে সাংবাদিকদের সামনে মায়ের কাছে হস্তান্তর করেন। হারানো সন্তান ফিরে পেয়ে পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন নাজনিন। এ সময় সন্তানকে আদর করতে করতে কান্নায় ভেঙে পরেন তিনি। </p> <p style="text-align: justify;">নাজনিন জানান, রবিবার রাতে প্রতিদিনের মতোই খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। বুকের পাশে ঘুমানো ছিল জুনায়েদ। রাত ৩টার দিকে জুনায়েদের কান্নায় ঘুম ভাঙে তার। বাচ্চাকে দুধ খাইয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েন। ফজরের আজানের সময় তার ঘুম ভাঙে। এ সময় দেখেন জুনায়েদ পাশে নেই! ঘরে খোঁজাখুঁজি করে ছেলেকে পাননি। এক পর্যায়ে দেখা যায়  ঘরের দরজা খোলা, কাঁচা বসতঘরের এক পাশে সিঁধকাটা! </p> <p style="text-align: justify;">সানজিদা নাজনীনের স্বামী সাজ্জাদ হোসেন বাড়িতে ছিলেন না। তিনি কুমিল্লায় একটি পোশাক করাখানায় কাজ করেন। জুনায়েদ যখন গর্ভে, তখন স্বামীর সাথেই থাকতেন তিনি। প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসায় বাবার বাড়িতে এসেছিলেন নাজনিন। গত রমজান মাসের শেষের দিকে জুনায়েদের জন্ম হয়েছিল। </p> <p style="text-align: justify;">তাড়াইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) বাহালুল খান বলেন, শিশুটিকে রুবেলের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর পেছনে অন‌্য কোনো কারণ রয়েছে কি না তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ব‌্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে। </p>