<p>কাজ না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) এক প্রকল্প পরিচালককে (পিডি) স্থানীয় কয়েকজন ঠিকাদার লাঞ্ছিত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে একজন শার্টের কলার চেপে ধরেছিলেন ওই কর্মকর্তার।</p> <p>রবিবার (২৮ এপ্রিল) রাজশাহীতে বরেন্দ্র ভবনে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শামসুল হোদার সামনে তাঁর কক্ষেই এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন মহানগর কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাকির হোসেন ওরফে লস্কর বাবু। ঠিকাদার হিসেবে তিনি বছরের পর বছর একচেটিয়া কাজ করছেন।</p> <p>ভুক্তভোগী প্রকৌশলী সুমন্ত কুমার বসাক বিএমডিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। তিনি ভূ-উপরস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে নাটোর জেলায় সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক। বিএমডিএর এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। তিনি ঠিকাদারদের কাছ থেকে ‘পার্সেন্টেজ’ নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।</p> <p>সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সম্প্রতি ৫০টি কাজের দরপত্র আহ্বান করেন পিডি সুমন্ত কুমার বসাক। প্রতিটি কাজই ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার। এ কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে তিনি ঠিকাদারদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তিনি রাজশাহীর একজন ঠিকাদারকেও কোনো কাজ দেননি। কাজ দেওয়া হয়েছে নাটোর, নওগাঁ ও ঈশ্বরদীর ঠিকাদারদের।</p> <p>বিষয়টি জানাজানি হলে ঠিকাদারদের ভয়ে প্রায় ১০ দিন ধরে অফিসেই আসছিলেন না সুমন্ত কুমার বসাক। অবশেষে রবিবার তিনি অফিসে আসেন। এ সময় ঠিকাদাররাও বরেন্দ্র ভবনে যান। তখন সুমন্ত কুমার বসাক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শামসুল হোদার কক্ষে ঠিকাদারদের নিয়ে বসেন। সেখানে ঠিকাদার সাকির হোসেন ওরফে লস্কর বাবু প্রকৌশলী সুমন্ত কুমার বসাককে রীতিমতো ধমক দিতে শুরু করেন। তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে পাশে বসে থাকা স্থানীয় ঠিকাদার মো. রাসেল প্রকৌশলী সুমন্তের শার্টের কলার চেপে ধরেন। এ নিয়ে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। একপর্যায়ে ঠিকাদারদের শান্ত করে বের করে দেওয়া হয়।</p> <p>বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ঠিকাদার মো. রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। বিএমডিএর ঠিকাদার মহানগর কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাকির হোসেন ওরফে লস্কর বাবু বলেন, ‘মারামারি বা লাঞ্ছিত করার মতো কোনো ঘটনা না। একটু উচ্চবাচ্য হয়েছে।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘পিডি রাজশাহীর ঠিকাদারদের কোনো কাজ দেননি। সব কাজ দিয়েছেন বাইরের ঠিকাদারদের। ফলে স্থানীয় ঠিকাদারদের মধ্যে হতাশা আছে। এর জের ধরেই ঘটনাটা ঘটেছে।’ তবে ঘটনাটা খুব বেশি বড় নয়। পরে এর সমাধান হয়ে গেছে বলে দাবি তাঁর।</p> <p>কথা বলার জন্য পিডি সুমন্ত কুমার বসাককে একাধিকবার ফোন করা হয়। তবে তিনি ফোন না ধরে কেটে দিয়েছেন। বিএমডিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শামসুল হোদা বলেন, ‘আমি যেহেতু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, তাই আমার কক্ষেই সবাই বসেছিলেন। তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে হঠাৎ রাসেল পিডির শার্টের কলার চেপে ধরেন। বিষয়টা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’</p> <p>বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদ বলেন, ‘অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বিষয়টা আমাকে জানিয়েছেন। আমি ঢাকায় আছি। আগামীকাল ফিরব। তারপর চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঙ্গে আলাপ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’</p>